এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,০২ আগস্ট : রাস্তা দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে । এদিকে লাগাতার বর্ষার বৃষ্টিতে যানবাহন তো দূরের কথা চলাচল করাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। তাই পথ অবরোধ করে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নর্থ বেঙ্গল ফার্ম এলাকার বাসিন্দারা । অবরোধ তুলতে গিয়ে রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন মহিলাদের কার্যতো ধমকের সুরে বলেন, “লক্ষীর ভান্ডার ছেড়ে দিন রাস্তা করে দেবো ।’ এদিকে বিডিওর এই মন্তব্যের ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । বিডিওর এহেন বিতর্কিত মন্তব্যের পর শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি । বিজেপির যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারির কথায়, ‘একদিক থেকে তিনি ভুলও বলেননি ।বিভিন্ন ভাতা, অনুদান, দান-খয়রাতিতে রাজ্যের কোষাগার শূন্য।রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার হাল করুনাময়।’
জানা গেছে, রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর অঞ্চলের নর্থ বেঙ্গল ফার্ম এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে । শুক্রবার পথ অবরোধে শামিল হন এলাকার বাসিন্দারা। বেলাকোবা-গেট বাজার রাস্তায় দেবী চৌধুরানীর মন্দিরের মোড়ে বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ হয়। প্রায় ২ ঘন্টা টানা অবরোধ-বিক্ষোভ চলে। অবরোধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মহিলারা। অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বেলাকোবা ফাঁড়ির পুলিশ। ঘটনাস্থলে এসে অবরোধ দেখেই মেজাজ হারান রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন । তিনি বলেন,’রাস্তা অবরোধ করলে কথা শুনবো না । আপনার লক্ষীর ভান্ডার পাচ্ছেন। লক্ষীর ভান্ডার ছেড়ে দিন রাস্তা করে দেবো৷ ১০০ জন লক্ষীর ভান্ডার ছেড়ে দিলে রাস্তা হয়ে যাবে। রাস্তা অবরোধ কেন ? ধৈর্য ধরতে হবে তো ।’ শুধু তাই নয়, মহিলাদের কার্যত ধমক দিয়ে বিডিও বলেন,’আপনারা ছেলেমেয়ের মা হয়েছেন এত চিল্লাচ্ছেন কেন ? ব্যথা আমাদেরও আছে । আমি বিডিও আছি । টাকা যতটা আসে দিচ্ছি তো কাজ করে । আপনারা যদি আইন হাতে নিয়ে নেন তাহলে বিডিওকে দরকার আছে ?’
সেই মুহুর্তের ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিজেপির যুবনেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি লিখেছেন,চবেলাকোবা, জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ কিমি রাস্তা বছরের পর বছর বেহাল।অবশেষে ভাঙা রাস্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন গ্রামবাসীরা — পথে বসেন অবরোধে। তখনই ঘটনাস্থলে হাজির বিডিও প্রশান্ত বর্মন। আর যা বললেন, তা শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় ।’ তিনি বিডিওর করা মন্তব্য উল্লেখ করে লিখেছেন,’লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাচ্ছেন তো? তাহলে আবার রাস্তা চাইছেন কেন? বাড়ি যান। লক্ষীর ভান্ডার না লাগলে কেটে দেব, সেই টাকা দিয়েই রাস্তা হবে!’
এরপর তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’একদিক থেকে তিনি ভুলও বলেননি। বিভিন্ন ভাতা, অনুদান, দান-খয়রাতিতে রাজ্যের কোষাগার শূন্য। রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার হাল করুনাময়। বিডিও সাহেব যেটা বলেছেন সেটা পুরো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পুরো পশ্চিমবঙ্গে একই অবস্থা। কিন্তু… এই বিডিও সাহেব আবার সাধারণ কোনও অফিসার নন।WBCS পরীক্ষার PRELI নিয়ে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন,প্রশান্ত বর্মন নামটা চেনা থাকার কথা . বাকিটা গুগলে সার্চ করুন। আমরা এখানে লিখছি না।’
তিনি লিখেছেন,’ভাতা চাই না, উন্নয়ন চাই।শুধুমাত্র অনুদান নয়, নাগরিকের অধিকারের রাস্তা চাই।কাজ চাই সম্মান চাই। স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান চাই। এটাই বাংলার আসল লড়াই।’
জানা গেছে,পরে আধিকারিকদের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন বিডিও । তবে রাস্তা নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বিডিওর ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।।

