এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ ফেব্রুয়ারী : ‘ওর কথা ছাড়ুন, ওর সোডিয়াম পটাসিয়ামের গন্ডগোল, একটা উন্মাদ মুখ্যমন্ত্রী,ওর মানসিক চিকিৎসার দরকার, কখনো বলে ১৫ শ’কেজি ওজনের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে, কখনো বলে পৃথিবীর ১১৭০ টা দেশ, কখনো বলে রাকেশ রোশন চাঁদে গিয়েছিলেন’- আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন নজির বিহীন আক্রমণ করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
আজ চার দলীয় বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালি উপদ্রুত এলাকায় রওনা হয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । কিন্তু রামপুরে পুলিশ তাদের আটকে দেয় । এরপর রাস্তার উপর বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু অধিকারী । বেশ কয়েক ঘন্টা বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর কলকাতায় ফিরে আসেন শুভেন্দু ।
পরে তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিখেছেন, ‘সন্দেশখালিতে তৃনমূলের শাহজাহান শেখ আর তার দলবল দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মাতৃশক্তির উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে সন্দেশখালির মাতৃশক্তিরা গর্জে উঠেছেন। রাষ্ট্র শক্তির অপব্যবহার করে তাদের আন্দোলন কে স্তিমিত করার উদ্দেশ্যে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে যাতে সন্দেশখালি কে জনবিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া যায়। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে বেছে বেছে বিজেপি কর্মী, হিন্দুত্ববাদীদের ও প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছে। এখনো পর্যন্ত আমাদের ১৪ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১১ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রতিবাদী মাতৃশক্তিদের উদ্দেশ্যে তৃণমূলের গুন্ডাদের হুমকি শাসানি অব্যাহত। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি বিজেপির পরিষদীয় দল সন্দেশখালির জন্যে রওনা হয়েছিল যাতে সেখানকার মানুষের সাথে দেখা করে ওনাদের ক্ষোভের কথা শোনা যায়। কিন্তু পথেই সায়েন্স সিটির অদুরে সন্দেশখালি থেকে অত্যন্ত ৬২ কিঃমিঃ আগে মমতা পুলিশ ১৪৪ ধারার অজুহাতে আমাদের আটকে দেয়। আমরা রাস্তাতেই বসে পড়ি। ৪ ঘন্টা রাস্তায় অবস্থানের পর আমরা ফিরে আসি।
এরপর শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, ‘পরবর্তী কালে আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই, মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট সন্দেশখালির ১৪৪ ধারা অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করেন। ওই দিন রাতেই আবার রাজ্যের নির্লজ্জ প্রশাসন মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে পুনরায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
আজ সন্দেশখালির অত্যাচারিতা মা বোনদের পাশে দাঁড়াতে, সেখানকার গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলতে ও গ্রেপ্তার হওয়া বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে ১৪৪ ধারার নিয়ম মেনে আমরা শুধুমাত্র চার জন বিধায়ক; শ্রী শঙ্কর ঘোষ, শ্রীমতী তাপসী মন্ডল, শ্রীমতী চন্দনা বাউড়ি ও আমি বাসে করে বিধানসভা থেকে সন্দেশখালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। প্রথমে আমাদেরকে পুনরায় সায়েন্স সিটির কাছে পুলিশ আটকায়। তারা বাসে উঠে পর্যবেক্ষণ করে যে আমরা কতজন আছি, বা ১৪৪ ধারা নিয়ম মেনে আমরা যাচ্ছি কিনা। পর্যবেক্ষণের পর কলকাতা পুলিশ আমাদের বাস ছেড়ে দেয় এবং আমরা আবার সন্দেশখালির উদ্দেশ্যে রওনা দিই ।’
তিনি লেখেন,’সন্দেশখালি ঢোকার ঠিক আগে রামপুরে মিনাখাঁর এসডিপিও আমিনুল ইসলাম খান এর নেতৃত্বে মমতা পুলিশের বিশাল বাহিনী আমাদের আটকায়। আমি ওনাকে প্রশ্ন করি কোন আইনে আমাদের সন্দেশখালি যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, মহামান্য রাজ্যপাল গিয়েছেন, এসসি কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য প্রতিনিধি দল গিয়েছেন, আমরা গেলে সমস্যা কোথায়? সেই প্রশ্নের উত্তরে ঔদ্ধত্বের সাথে আমাকে বলা হয় যে আমি গেলে নাকি গ্রামের সব জনসাধারণ বেরিয়ে আসবেন, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে তাই আমাদের সন্দেশখালি যেতে দেওয়া হবে না।’
পরিশেষে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন,’পুলিশ আমাদের কোনো ভাবেই এগোতে না দেওয়ায় আমরা সেখানেই বাস থেকে নেমে রাস্তায় অবস্থানে বসি। পুলিশ পায়ের বুট দিয়ে আমার আঙুলে চাপা দেয় সংবাদমাধ্যমের সামনেই। আড়াই ঘন্টা সেখানে অবস্থান বিক্ষোভের পর আমরা কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিই।
এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়েছে। পুলিশ শাহজাহানের মতো অপরাধীদের খুঁজে পায় না, অথচ তারা বিজেপিকে আটকাতে ব্যস্ত। আমি সন্দেশখালি যাওয়ার বিষয়ে অনুমতির জন্য আগামীকাল উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এবং সমস্ত ঘটনার বিবরণ জানিয়ে এই বিষয়ে মহামান্য উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে ভয় পেয়েছেন। ইয়ে ডর হামে আচ্ছা লাগা।’
সেদিন শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন রোহিঙ্গা এবং বিভিন্ন জিহাদী সংগঠনগুলো মমতা ব্যানার্জির মদতে এরা যে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে । তিনি মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ইউ এ পি এ আইনের আওতায় মামলা দায়েরের দাবি তুলেছেন । শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ যে শেখ শাহজাহানের দ্বারা বেছে বেছে হিন্দু মহিলাদের কে ধর্ষণ করা হয়েছে । সন্দেশখালীর হিন্দুদেরকে মূলত টার্গেট করা হচ্ছে । এদিন শুভেন্দু অধিকারীর পথ অবরোধের সময় আকাশের ড্রোন উড়ানো হয় । ড্রোন দেখে শুভেন্দু হাত নেড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলেন । এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তোলেন, ‘আমার জন্য ড্রোন উড়ানো হলেও ওই ড্রোন ব্যবহার করে শেখ শাজাহানকে গ্রেফতারের কোন আগ্রহী নেই মমতা ব্যানার্জীর।’।