আজ রবিবার ২০২৫ সালের মহালয়া । মহালয়ার মন্ত্র মূলত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ ও দেবী দুর্গার মহিষাসুরমর্দিনী রূপের স্তোত্র। এই মন্ত্রগুলি সাধারণত দুর্গাপূজার সাথে সম্পর্কিত এবং পিতৃপুরুষদের শান্তির জন্য এই দিনে তর্পণ করা হয়। এই মন্ত্রগুলির মধ্যে দুর্গা সপ্তশতী, দেবীর আহ্বানমূলক স্তোত্র এবং পিতৃতর্পণের জন্য ব্যবহৃত মন্ত্র উল্লেখযোগ্য।
মহালয়ার সকালে দেবী দুর্গার আবাহন করা হয়। এর জন্য মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র পাঠ করা হয়, যা দেবী চন্ডীর অর্গলা ও কীলক স্তোত্র সহ দুর্গা সপ্তশতী থেকে সংকলিত।
পিতৃতর্পন পদ্ধতি ও মন্ত্র
মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবীপক্ষের সূচনায় পিতৃতর্পণ বা পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা অত্যন্ত প্রীতিপ্রদ এবং আত্মবিশ্বাস প্রদায়ী একটি সংস্কার। যাঁরা কখনও এই পিতৃতর্পণ করেন নি, তাঁদের জন্য এই কয়েক ছত্র ভূমিকা প্রদত্ত হল। নিজেকে অব্রাহ্মণ ভাববেন না। জাতি, গুণ ও কর্মের বিভাগ মাত্র। গীতায় ভগবান বলেছেন চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণ কর্ম বিভাগশঃ। যাঁরা শিক্ষিত তাঁরা সকলেই মন্ত্রোচ্চারণের অধিকারী। এই পিতৃতর্পণের উপকরণ জল ও তিল। যদি তিল না থাকে তবে অন্য কোন তৈলবীজ বা যব ব্যবহার করুন। যদি কিছুই যোগাড় করতে না পারেন, তবে যে কোন শস্য বা ফুল ব্যবহার করুন। উপচার মনযোগে সাহায্য করে, এই সব নিয়ে খুব বেশী বিব্রত হওয়ার প্রয়োজন নাই। স্মরণ করাই প্রধান উদ্দেশ্য। মহিলারা সমানভাবে তর্পণ করার অধিকারী।
জল সম্বন্ধে দু-একটি কথা বললে আরও প্রত্যয়ী হয়ে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে পারবেন। এই সব শাস্ত্রোক্ত পদ্ধতি যে যুগে প্রণীত হয়েছিল, তখন নদী বা বড় সরোবরে স্নান করে জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ করা খুবই সহজ ও স্বাভাবিক ছিল। হাইরাইজের উচ্চতলে বসবাসকারী এবং বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিদের পক্ষে যা করা সম্ভব তাই এখানে বলা হল।
নিজের অভ্যাস মত স্নান করে নিন। একটু চন্দন বা অগুরু লাগাতে পারলে মন আরও সুন্দরভাবে প্রস্তুত হবে। জলদানই প্রধান কাজ। অতএব জলের কথায় আসা যাক। যদি নদীর বা সরোবর বা হ্রদের জল না পান, তবে মিনার্যাল ওয়াটার ব্যবহার করুন। সব অর্থেই এটা শুদ্ধ জল। কোষা কুষি থাকলে ভাল, না থাকলে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর ঝিনুক বা ছোট বাটিও চলতে পারে। তাম্রপাত্র না পেলে তামার টুকরো বা তার জলছুঁয়ে থাকা অবস্থায় পাত্রে রাখলে আরও ভাল হয়। যে জল তর্পণ করবেন, শ্রদ্ধাপূর্বক আসনপিড়ি হয়ে বসে সেই জল একটি গামলায় রেখে তারপর নিম্নোক্তমতে মন্ত্রোচ্চারণ করে শুদ্ধ করে নিন। সব সময় দক্ষিণমুখো হয়ে বসাই ভাল। তারপর পূর্বমূখে বসা।
জলশুদ্ধি
যে গামলায় জল রাখা হয়েছে। সেই গামলায় দক্ষিণ হস্ত ‘অঙ্কুশমুদ্রা’য় করে আঙুল দিয়ে জল স্পর্শ করুন। যাঁরা ‘অঙ্কুশমুদ্রা’ জানেন না তাঁরা সবকটি আঙুল জলে ছোঁয়ান এবং ঐ অবস্থায় হাতটিকে রেখে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করুন। এর অর্থ আপনার পাত্রটির জল উল্লিখিত পাবন পবিত্র নদীজলে পরিণত হল।
“ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী। নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু।“
সামবেদীয় তর্পণবিধি
আচমনের অনেকপ্রকার সংস্কার আছে। দৈবতীর্থ আচমন সকলের উপযোগী ও সরল। এই পদ্ধতিটিতে দক্ষিণহস্তের সবগুলি অঙ্গুলি জলে নিমজ্জনের পর হাত তুলে নিয়ে সব আঙুলের জল ওষ্ঠে ছিটিয়ে দিতে হয়। পরপর তিন বার নিম্নোক্ত মন্ত্রসহযোগে করলেই আচমন সম্পন্ন হয়।
“ওঁ নমো বিষ্ণু নমো বিষ্ণু নমো বিষ্ণু।
নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরে শুচিঃ।“
দুইবার আচমন করে প্রাচীনাবীতি (যাঁদের পইতা নাই তাঁরা এড়িয়ে যান ) এবং দক্ষিণমুখ হয়ে করযোড়ে পাঠ করুন। [পইতা ডান কাঁধে রেখে, বাম দিকে ঝোলালে প্রাচীনাবীতি। অর্থাৎ উপবীতির বিপরীত ।
“ওঁ কুরুক্ষেত্রং গয়া গঙ্গা প্রভাসপুষ্করাণি চ। তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি তর্পণকালে ভবন্তিহ।“
উপবীত হয়ে, অর্থাৎ যে ভাবে সবসময় উপবীত থাকে, সেই ভাবে উপবীত রেখে, পূর্বমুখ হয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠপূর্বক এক এক দেবতাকে এক এক বার জলদান করুন। জল দানের বিধি হল কুশী বা তাম্রপাত্রটিতে জল নিয়ে পাত্রটির জল ডান হাতের তালু ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে অপর একটি পাত্রে ঢেলে দিন।
১।ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।
২।ওঁ বিষ্ণুস্তূপ্যতাম্।
৩।ওঁ রুদ্রস্তূপ্যতাম্।
৪ /ওঁ প্রজাপতিত্ত্বপ্যতাম্।
পরের জলদান প্রায় সব জীবের জন্য; মনে মনে সবার রূপ স্মরণ করুন।
৫।ওঁ দেবা যথাস্তথা নাগা গন্ধর্বাপ্সরসোহসুরাঃ।
ক্রুরাঃ সর্পাঃ সুপর্ণাশ্চ তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ।
বিদ্যাধরা জলাধারাস্তথৈবাকাশগামিনঃ।
নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে ধর্মে রতাশ্চ যে।
তেষামাপ্যায়নায়ৈতদ্দীয়তে সলিলং ময়া।
অতঃপর পশ্চিম মুখ হয়ে নিবীতি অর্থাৎ মালার মত করে পইতা ধারণ করে নিম্নোক্ত মন্ত্র দুইবার পাঠ করে নিজের দিকে কুশীর জলের ধারার মুখ করে অপর পাত্রে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে ঢালিয়া তর্পণ করুন। যদি জলে দাঁড়িয়ে করেন, তবে কুশী ব্যবহার না করে দুই অঞ্জলি জল নিজ গাত্রে ঢালবেন । সর্বদাই ধীরে অর্থাৎ মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে জল ঢালুন।
ওঁ সনকশ্চ সনন্দশ্চ তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ।
কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব বোটুঃ পঞ্চশিখস্তথা।
সর্বে তে তৃপ্তিমায়ান্তু মদ্দত্তেনাম্বুনা সদা।
উপবীতি ও পূর্বাভিমুখ হয়ে নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করে এক এক মহর্ষিকে এক এক বার জলদান করুন। জল দানের বিধি হল কুশী বা তাম্রপাত্রটিতে জল নিয়ে পাত্রটির জল ডান হাতের তালু ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে অপর একটি পাত্রে ঢেলে দিন।
ওঁ মরীচিস্তূপ্যতাম্। ১।
ওঁ অত্রিস্তূপ্যতাম্। ২।
ওঁ অঙ্গিরাস্তূপ্যতাম্। ৩।
ওঁ পুলস্ত্যস্তূপ্যতাম্। ৪1
৫। ওঁ পুলহস্ত্যস্তূপ্যতাম্।
৬। ওঁ ক্রতুস্তূপ্যতাম্।
৭। ওঁ প্রচেতাপ্যতাম্।
৮। ওঁ বশিষ্টস্তূপ্যতাম্।
৯। ওঁ ভৃগুস্তূপ্যতাম্।
১০। ওঁ নারদস্তূপ্যতাম্।
১১। ওঁ দেবাস্তুপ্যতাম্।
অনন্তর প্রাচীনাবীতি হয়ে নিম্নলিখিত প্রত্যেককে পিতৃতীর্থদ্বারা (পদ্ধতিটি ** চিহ্নিত অংশে বিবৃত) পাত্রে কয়েকটি তিল দিয়ে এক এক জলাঞ্জলি দানে তর্পণ করুন।
** বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর মাঝের ফাঁককে ‘পিতৃতীর্থ’ বলে। কুশী বা পাত্রটি ডান হাতের আঙুলের সমান্তরাল ভাবে তালুর উপর রেখে ঢালার সময় ডানদিকে কাত করে বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর ফাঁক দিয়ে ঢালতে হবে।
ওঁ অগ্নিস্বাত্তাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ সোমাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ হবিষ্মন্তঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ উষ্মপাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ সুকালীনাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ বর্হিষদঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
ওঁ আজ্যপাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা।
অতঃপর নিম্নলিখিত মন্ত্র তিনবার পাঠ করে তিনবার পিতৃতীর্থের দ্বারা যমতর্পণ করুন।
সব ব্যবস্থাই উপরের মত।
ওঁ যমায় ধর্মরাজায় মৃত্যবে চান্তকায় চ।
বৈবস্বতায় কালায় সর্বভূতক্ষয়ায় চ।
ঔডুম্বরায় দয়ায় নীলায় পরমেষ্ঠিনে।
বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ।
অনন্তর পিতৃতর্পণ করতে হবে। এই অংশে নিজ পিতা মাতা ও অন্যান্য পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়। দক্ষিণমুখ হয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে (জলে) প্রাচীনাবীতি হয়ে পিতামাতা ও অন্যান্য পূর্বপুরুষদের জল তর্পণ পিততীর্থ দ্বারা করতে হবে। প্রথমে পিতৃগণের আহ্বান করার জন্য কৃতাঞ্জলি হয়ে পাঠ করুন:-
ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতর ইমং গৃহ্নস্তূপোহঞ্জলিম্।
এর পর তিল সহ জল দ্বারা এক এক জন পূর্বপুরুষকে পিততীর্থ দ্বারা জলাঞ্জলি দানে তর্পণ করুন। নিম্নলিখিত মন্ত্রটিতে যাঁর নামে তর্পণ করা হচ্ছে তাঁর নাম, গোত্রনাম ও বর্ণ বসিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
ওঁ বিষ্ণুরোম অমুকগোত্রঃ পিতা অমুকনাম অমুকবর্ণ তৃপ্যতামেতৎ সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা।
নিজের গোত্র বলে ‘অমুকগোত্রঃ’ এর পাদপূরণ করুন। যেমন শাণ্ডিল্য কি ভরদ্বাজ ইত্যাদি।
পিতা বা মাতা বা পিতামহ ইত্যাদি বলা বাধ্যতামূলক নয় । অনেক নাম অনেকবার বলতে ভ্রম হতে পারে বলে এটা বলা হয়। ‘পিতা অমুকনাম’ এর পাদপূরণ আত্মীয়ের সম্পর্ক ও তাঁর নাম যোগ করে করতে হবে। যেমন ‘পিতা অসীমকুমার’ ‘মাতা ইতিকা’ ‘মাতামহ যদুপতি’ ‘প্রপিতামহী মানময়ী’ ইত্যাদি।
ব্রাহ্মণেরা শর্মণঃ বা দেবশর্মণঃ, ক্ষত্রিয়েরা বর্মণঃ, বৈশ্যেরা সাধুঃ এবং শুদ্রেরা দাসঃ বলে ‘অমুকবর্ণ’ এর পাদপূরণ করবেন। বর্ণ উল্লেখ নাও করতে পারেন। শিক্ষিত ব্যক্তিরা নিজ কর্ম বা পেশা অনুযায়ী বর্ণ স্থির করতে পারেন। বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামীর গোত্র উল্লেখ করতে হবে। বর্ণস্থলে ‘দেবী’ বা ‘দাসী’ ব্যবহার করতে হবে। সকলেই ‘দেবী’ উল্লেখিত হওয়ার অধিকারী।
ঊর্ধ্বতন তিনপুরুষ অর্থাৎ প্রপিতামহ/মহী, প্রমাতামহ/মহী পর্যন্ত তিনবার করে তর্পণ করতে হবে। বাকী সব আত্মীয়দের ক্ষেত্রে একবার করলেই হবে। গোত্র না জানা থাকলে সম্পর্ক উল্লেখ করে তর্পণ করতে পারেন। কেবল স্বর্গত স্বজনদেরই তর্পণ করা হয়।
পরবর্তী তর্পণগুলির সামাজিক তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এগুলি মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে অনুষ্ঠান করার সময় ভারতের সনাতন চিন্তাধারার সর্বব্যাপকত্ব ও ভাবের মহানতা নিজ মনে অনুভব করবেন। সকলকে তর্পণ দ্বারা স্মরণ করে নিজেকে এই জগৎসংসারের এক সক্রিয় অংশরূপে প্রকাশ করতে পারবেন।
ভীষ্মতর্পণ:- পিতামহ ভীষ্ম ত্যাগের কারণে উত্তরপুরুষ বিহীন। তিনি সকলের তর্পণের যোগ্য। ভীষ্মোদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত মন্ত্রোচ্চারণ করে তিনবার তিল ছাড়া জল পিতৃতীর্থ দ্বারা তর্পণ করুন।
ওঁ বৈয়াঘ্রপদ্যগোত্রায় সাস্কৃতি প্রবরায় চ।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্মণে॥
তিনবার ভীষ্মতর্পণের পর নিম্নোক্ত মন্ত্রে ভীষ্মদেবকে প্রণাম করুন।
ও ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ।
আভিরঙিরবাপ্নোতু পুত্রপৌত্রোচিতাং ক্রিয়াম্।
ফেলুন। অতঃপর নিম্নলিখিত মন্ত্র একবার পাঠ করে একবার জল দ্বারা তর্পণ করে জল ভূমিতে ফেলুন ।
ওঁ অগ্নিদগ্ধাশ্চ যে জীবা যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম।
ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্ত তৃপ্তা যান্তু পরাং গতিম্।।
এর পর নিম্নলিখিত মন্ত্র একবার পাঠ করে একবার জল দ্বারা তর্পণ করুন।
ওঁ যেহবান্ধবা বান্ধবা বা যেহন্যজন্মানি বান্ধবাঃ।
তে তৃপ্তিমখিলাং য়ান্ত যে চাস্মত্তোয়কাঙ্ক্ষিণঃ।
এর পর নিম্নলিখিত মন্ত্র তিনবার পাঠ করে তিনবার জল দ্বারা তর্পণ করুন।
ওঁ আব্রহ্মভুবনল্লোকা দেবর্ষিপিতৃমানবাঃ। তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে মাতৃমাতামহাদয়ঃ। অতীতকুলকোটীনাং সপ্তদ্বীপ নিবাসিনাম্। ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্ত ভুবনত্রয়ম্।
এর পর নিম্নলিখিত মন্ত্র তিনবার পাঠ করে তিনবার জল দ্বারা তর্পণ করুন।
ওঁ আব্রহ্মস্তম্বপর্য্যন্তং জগত্ত্বপ্যতু।
যাঁরা শারীরিকভাবে সুস্থ নন, তাঁরা শুধু এই তর্পণটি করলেই কার্যসিদ্ধি
সর্বশেষ তর্পণটি স্নানবস্ত্র নিপীড়ন করে সেই জল ভূমিতে নিক্ষেপ করে করতে হবে। পরিধেয় বস্ত্র বা গায়ের চাদরের বা গামছার এক অংশ জলে ডুবিয়ে গায়ে দিন। এর পর নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ধীরে ধীরে বস্ত্র নিঙড়ে সেই জল ভূমিতে ফেলুন।
ওঁ যে চাম্মাকং কূলে জাতা অপুত্রা গোত্রিণো মৃতাঃ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং বস্ত্রনিষ্পীড়নোদকম্।
পরবর্তী সবগুলি ক্রিয়া দণ্ডায়মান অবস্থায় পূর্বমুখী হয়ে করুন।তৎপরে পিতৃপ্রণাম করুন।
ওঁ পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতা হি পরমং তপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতাঃ॥
মাকে প্রণাম করুন।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী।
সূর্য্য প্রণাম করুন।
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং।
ধান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।
অতঃপর কৃতাঞ্জলি হয়ে পাঠ করুন।
ওমদ্য কৃতৈতৎ তর্পণকর্মাচ্ছিদ্রমস্তু। ওমেত্যাদি কৃতেহস্মিন্ তর্পণকর্মণি যদ্দ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষপ্রশমনায় ও বিষ্ণুস্মরণং করিষ্যে। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ॥
একভাবে কৃতাঞ্জলি হয়ে পরবর্তী মন্ত্রপাঠের দ্বারা অনুষ্ঠানের সমাপন করুন।
ওঁ অজ্ঞানাদ্ যদি বা মোহাৎ প্রচ্যবেতাধ্বরেষু যৎ। স্মরণাদেব তদ্বিষ্ণোঃ সম্পূর্ণং স্যাদিতি শ্রুতি। ওঁ প্রীয়তাং পুণ্ডরীকাক্ষঃ সর্বযজ্ঞেশ্বরো হরিঃ। তস্মিংস্তুষ্টে জগত্তুষ্টং প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ।। ময়া যদিদং তর্পণকর্ম কৃতং তৎ সর্বং ভগবদ্বিষ্ণুচরণে সমর্পিতম্।
* ভীষ্মের গোত্র বৈয়াঘ্রপাদ কিন্তু মহাভারতে বৈয়াঘ্রপদ্য লেখা হয়েছে বলে ব্যাসদেবের এই ভুলটি শাস্ত্রে বয়ে বেড়ানো চলছে।