“ওঁ” শব্দকে আদি নাদ(শব্দ) বলা হয় । ওম শব্দটি তিনটি ধ্বনি দিয়ে গঠিত : ‘অ-উ-ম’ । ‘ওঁ’ মন্ত্র ধ্যান ও সাধনার জন্য ব্যবহৃত হয় ভারতীয় সংস্কৃতিতে। সনাতন ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছেন ‘ওঁ’ মন্ত্রের । ওঙ্কার, প্রণব বা ত্র্যক্ষর নামেও পরিচিত । ওঁ শব্দটি সংস্কৃত ‘অব’ ধাতু থেকে উৎপন্ন, যা একাধারে ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রযোজ্য। এই ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী ওঁ-কার এমন এক শক্তি যা সর্বজ্ঞ, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের শাসনকর্তা, অমঙ্গল থেকে রক্ষাকর্তা, ভক্তবাঞ্ছাপূর্ণকারী, অজ্ঞাননাশক ও জ্ঞানপ্রদাতা । ওঁ-কারকে ত্র্যক্ষরও বলা হয়, কারণ ওঁ তিনটি মাত্রাযুক্ত – “অ-কার”, “উ-কার” ও “ম-কার”। “অ-কার”, “আপ্তি” বা “আদিমত্ত্ব” অর্থাৎ প্রারম্ভের প্রতীক। “উ-কার” “উৎকর্ষ” বা “অভেদত্ব”-এর প্রতীক। “ম-কার”, “মিতি” বা “অপীতি” অর্থাৎ লয়ের প্রতীক। এই তিনটি ধ্বনির অর্থও উপনিষদে উল্লেখ আছে। এটি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশের প্রতীক এবং এটি ভু লোক, ভুভা লোক এবং স্বর্গ লোকের প্রতীক। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন “ওঁ” ব্রহ্মান্ডের প্রতীক, ঈশ্বরেরও প্রতীক ।
এবারে “ওঁ” মন্ত্র জপের গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নিন :
তন্ত্র যোগে মনোসিলেবিক মন্ত্রগুলিরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দেবনাগরী লিপির প্রতিটি শব্দে অনুস্বর যোগ করে একে মন্ত্রের রূপ দেওয়া হয়েছে। যেমন,কং,খং, ঘং ইত্যাদি। একইভাবে, শ্রী, ক্লীম, হ্রীম, হূণ, ফট ইত্যাদিও একক মন্ত্রের মধ্যে গণনা করা হয়। জিহ্বা, ঠোঁট, তালু, দাঁত, গলা এবং ফুসফুস থেকে নির্গত বাতাসের সম্মিলিত প্রভাবে সমস্ত মন্ত্রের উচ্চারণ সম্ভব। এটি থেকে নির্গত শব্দ শরীরের সমস্ত চক্র এবং হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলিতে আঘাত করে। এই গ্রন্থিগুলির নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
উচ্চারণের পদ্ধতি:
সকালে ঘুম থেকে উঠে শুদ্ধ হয়ে ওমকার ধ্বনি জপ করুন। পদ্মাসনে বসে ওম জপ করা যেতে পারে, অর্ধ পদ্মাসন, সুখাসন, বজ্রাসনেও ওঁ জপ করতে পারেন । আপনি আপনার সুবিধামত এটি ৫,৭,১০,২১ বার উচ্চারণ করতে পারেন। আপনি জোরে ওম বলতে পারেন, আপনি এটি ধীরে ধীরে বলতে পারেন। জপমালা দিয়েও ওম জপ করা যায়।
এর উপকারিতা:
“ওঁ” মন্ত্র জপ করলে শরীর ও মনকে একাগ্র করতে সাহায্য করবে। হৃদস্পন্দন ও রক্ত চলাচল নিয়মিত হবে। এটি মানসিক রোগ নিরাময় করে। কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। যে ব্যক্তি এটি উচ্চারণ করে এবং যে এটি শোনে তারা উভয়ই উপকৃত হয়। এর উচ্চারণে বিশুদ্ধতার যত্ন নেওয়া হয়।
শরীরে আবেগের ওঠানামা:
সুখকর বা অপ্রীতিকর শব্দের ধ্বনি দ্বারা, শ্রোতা এবং বক্তা উভয়েই আনন্দ, দুঃখ, ক্রোধ, ঘৃণা, ভয় এবং যৌন আকাঙ্ক্ষার আবেগ অনুভব করে। অপ্রীতিকর শব্দ থেকে নির্গত শব্দের কারণে মস্তিষ্কে উৎপন্ন লালসা, ক্রোধ, আসক্তি, ভয়, লোভ ইত্যাদি অনুভূতি হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন দ্রুত করে যার ফলে রক্তে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হতে থাকে। একইভাবে, প্রিয় এবং শুভ শব্দের ধ্বনি মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং রক্তে অমৃতের মতো মনোরম রাসায়নিক বর্ষণ করে।
অন্তত ১০৮ বার ওম জপ করলে পুরো শরীর চাপমুক্ত হয়ে যায়। কিছু দিন পর শরীরে নতুন শক্তি সঞ্চালন শুরু হয়। ওম জপ প্রকৃতির সাথে আরও ভাল সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে আমরা প্রাকৃতিক শক্তি পেতে থাকি। ওম জপ করে পরিস্থিতি অনুমান করা যায়। ওম জপ করলে আপনার আচরণে শালীনতা আসবে যার ফলে আপনার শত্রুরাও বন্ধু হয়ে যাবে। ওম জপ আপনার মনে হতাশার অনুভূতি তৈরি করে না। আত্মহত্যার মতো চিন্তাও মাথায় আসে না। যেসব শিশু পড়াশোনায় মনোযোগ দেয় না বা তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, তাদের যদি নিয়মিত ওম জপ করানো হয়, তাহলে তাদের স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি হবে এবং তারা পড়াশোনায়ও মনোযোগী হতে শুরু করবে।
এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে ভাবী মায়েরা যদি নিয়মিত দিনের কোনও একটা নির্দিষ্ট সময় ওম মন্ত্র জপ করেন, তাহলে বাচ্চার শারীরিক উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থায় মায়ের নানাবিধ জটিলতা হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, প্রসবকালে কোনও ধরনের সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও কমে।
আসলে ওঁ মন্ত্র জপ করার সময় তৈরি হওয়া শব্দ তরঙ্গ দেহ এবং মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন করে যে একাধিক রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক চাপ কমতে শুরু করে।
‘ওঁ’ মন্ত্র ধ্যান ও সাধনার জন্য ব্যবহৃত হয় ভারতীয় সংস্কৃতিতে। সনাতন ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছেন ‘ওঁ’ মন্ত্রের । শরীর এবং মন উভয়ের জন্য অলৌকিক পরিবর্তন দেখতে পাবেন নিয়মিত ‘ওঁ’ মন্ত্রপাঠ করলে। এই শব্দটি খুব শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। চোখ বন্ধ করে এবং গভীর শ্বাস নিয়ে ওম জপ করলে মেলে কাঙ্ক্ষিত ফল। ‘ওঁ’ যত গভীরে গিয়ে জপ করবেন তত বেশি উপকার পাবেন।’ওম’ উচ্চারণ করে মেলে বিবিধ সুবিধা।’ওম’ উচ্চারণের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যা বুঝতে পারলে সম্পূর্ণ লাভ পাবেন। সেগুলি জেনে নিন
এ’ ধ্বনি- ‘এ’ ধ্বনি দিয়ে শুরু করুন, উচ্চারিত হবে ‘আহ’। এই অংশটি বলার সঙ্গে সঙ্গে পেট এবং বুকে কম্পন অনুভব করবেন।
‘উ’ ধ্বনি- ‘উ’ ধ্বনিতে উচ্চারিত ‘ওহ’। কম্পন বুক থেকে গলা পর্যন্ত যাবে।
‘ম’ ধ্বনি- ‘ম’ ধ্বনি দিয়ে শেষ হয়। উচ্চারিত ‘মমম’। আপনি শব্দ সম্পূর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে মাথা এবং ঠোঁটে কম্পন অনুভব করবেন।।