এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ মার্চ : নবদ্বীপের ট্রেনে চড়কান্ডে তরুনীর পরিচয় প্রকাশ্যে আনা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রসূন মৈত্র নামে এক ব্যক্তি । নিজের ফেসবুক পেজে এই খবর জানিয়ে তিনি লিখেছেন,’একজন মহিলার মর্যাদাহানি করে আর তার পরিচয় সার্বজনীন করে যদি সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয় তাহলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ। আমি নিজে একজন আইন মানা নাগরিক( Law abiding citizen) হয়ে এই ধরনের কাজ মেনে নিতে পারিনা। তাই সরাসরি অভিযোগ দাখিল করেছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এর আগে আসানসোল কেসের সময় জিমের গুরু কোবরে সুমনের নামে যখন অভিযোগ করেছিলাম তখন কোবরে কেঁদেকঁকিয়ে আর নিজের বয়সের দোহাই দিয়ে ক্ষমা চেয়েছিল। এই কেসে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ (West Bengal Police) যদি অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা না গ্রহণ করেন তাহলে পুলিশ নিস্ক্রিয়তার জন্যে আদালতে যাওয়ার বিকল্প খোলা আছে।’
প্রসূন মৈত্র প্রোফাইলে নিজেকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন । আজ শুক্রবার(৭ মার্চ) ইমেলে কলকাতা পুলিশ কমিশনার ও জয়েন্ট কমিশনারকে পাঠানো ওই অভিযোগে তিনি লিখেছেন,’প্রিয় মহাশয়, আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে জিম নওয়াজ (প্রোফাইল আইডি- https://www.facebook.com/share/1YZ6Nufd7b/?mibextid=wwXIfr) নামে একজন ব্যক্তি একজন মহিলার পরিচয় প্রকাশ করেছেন ( https://www.facebook.com/100003738689061/posts/pfbid02ToUQ27G8d2azRcwqnSnCS7L bo2ZySoCkisUh9WJLdGmtHjtATnmkLQs4vSXcSQD1I/? ) যার উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করা। আইন মেনে চলা ও সভ্য সমাজে এই ধরনের অভিযোগের পরে উস্কানি দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে আপনার তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ প্রাপ্য।’ তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে কয়েক বছর আগে বীরভূমের লালবাজারের এক কিশোরের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহল নামে একটি পেজ শেয়ার করার পর কী পরিণতি হয়েছিল। উপরোক্ত বিষয়গুলির পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে যে জিম নওয়াজ এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে, যদি থাকে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার এবং একজন মহিলার শালীনতা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য এফআইআর দায়ের করুন। আপনার রেফারেন্সের জন্য স্ক্রিনশট সংযুক্ত করা হল।’ তিনি নিজের ঠিকানা দিয়েছেন,আত্মদীপের সভাপতি উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বলিভাড়া, নবনগরের বাসিন্দা বলে ।
প্রসঙ্গত,গত ৫ মার্চ নবদ্বীপ ধাম থকে বালুরঘাটগামী ১৩৪৩১ নম্বর বালুরঘাট এক্সপ্রেস ট্রেনের এক কামরায় আসনে বসে পাশের সহযাত্রী তরুনীর ভিডিও করছিল এক মুসলিম বৃদ্ধ । তারই প্রতিবাদে বৃদ্ধে মুহুর্মুহু চপেটাঘাত করেন ওই তরুনী । কোনো এক যাত্রী সেই ভিডিও রেকর্ড করে ভাইরাল করে দেয় । মহঃ জিম নওয়াজ(Md Zim Nawaz) নামে এক ব্যক্তি সেই তরুণীর নাম প্রকাশ্যে নিয়ে এসে তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন,’নবদ্বীপ থেকে মালদাগামী রোজাদার বয়ঃজ্যোষ্ঠ ব্যক্তি মাফিকুল ইসলামকে আক্রমণকারী মেয়েটির নাম -***, বাবার নাম- **। গ্রাম+পোেস্ট+থানা-** ।’ তার কথায়, ‘আক্রমণের প্রধান কারণ মুসলিম বিদ্বেষ। ভিডিও করার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মেয়েটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি একাধিক জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছি। একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই, রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরা কতদূর কি করবেন জানি না, তবে মেয়েটিকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া প্রশাসনের হাতে অন্য কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়।’
তরুনীর পরিচয় প্রকাশ্যে আনা মহঃ জিম নওয়াজ নামে ওই ব্যক্তির এই পোস্টের তীব্র সমালোচনা করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন বিজেপির যুবনেতা ও আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পর বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষও তরুনীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । দিলীপবাবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’বিনা অনুমতিতে ট্রেনে এক মহিলার ভিডিও করছিল এক মৌলবী । দেখে সপাটে চড়। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবি করা হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।
ঠিক এই ব্যবহারই হওয়া উচিত এই অভদ্রদের সঙ্গে। বাসের ভাড়া না দেওয়া, বাচ্চা হোক বা মহিলাদের সঙ্গে অশ্লীলতা : এই ধরণের নক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বাংলার বোনেদের – মায়েদের ।’।
এদিকে মহঃ জিম নওয়াজ(Md Zim Nawaz) নামে ওই ব্যক্তি আজ প্রতিবাদীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘চাড্ডিদের বয়ানকে আমি ধর্তব্যের মধ্যেই রাখি না। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে বেশকিছু অতিবোদ্ধা একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটিকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন। এইসব অতিবোদ্ধাদের ফ্যাক্ট ভেরিফাই করার ন্যুনতম যোগ্যতা বা সক্ষমতা কোনোটিই নেই। শুধুমাত্র ধারণার ভিত্তিতে এমন যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন যেন, বৃদ্ধি ব্যক্তি ভুল করে নয়, ইচ্ছাকৃতভাবেই ভিডিও করছিলেন! তাদের যুক্তি, মোবাইলে ভিডিও ভুল করে হয় না, মোবাইল বের করে ক্যামেরা অন করার পর রেকর্ডিং বোতাম টিপলে তবেই ভিডিও হয়। অতিবোদ্ধাদের এই লজিকে সাময়িকভাবে আপনিও কিছুটা বিব্রত হতে পারেন। তাই বিভ্রান্তি দূর করতে ঘটনা পরম্পরা অনুযায়ী বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
গতকাল সকালেই আমি আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের আক্রান্ত মাফিকুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে ফোনে কথা বলি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কিভাবে আপনার মোবাইলের ভিডিও ক্যামেরা অন হয়েছিল? তিনি আমায় বলেন,
“গতকাল(৫ই মার্চ) সকাল আনুমানিক ৮:৩০টায়, মালদা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধুলিয়ান গঙ্গা স্টেশনে যাই। স্টেশনে আমি আমার বাইক পার্ক করি। নিরাপত্তার কথা ভেবে বাইক সহ সেই স্থানটির ভিডিও করার জন্য মোবাইল বের করে রেকর্ডিং বোতাম টিপি। এরপর ভুলবশত ভিডিও রেকর্ডিং অফ না করেই মোবাইলটি পকেটে ভরে নবদ্বীপ-বালুরঘাট ট্রেনে বসে পড়ি। আসলে মোবাইল সম্পর্কে আমি ততটাও সড়গড় নই। বেশকিছুক্ষণ পর মোবাইলটি পকেট থেকে বের করলে আমার সিটের উল্টোদিকে বসা মেয়েটি তার মুখের ভিডিও করার অভিযোগ করে আমার উপর আক্রমণ শুরু করে।”
ওই ব্যক্তি সব শেষে লিখেছেন,’উপরের ঘটনা পরম্পরা জানার পর নিশ্চয় বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, মোবাইলটিতে কিভাবে আনুমানিক আধঘন্টা ধরে ভিডিও রেকর্ডিং হচ্ছিল! অতএব, চাড্ডিদের উৎসেচকের ভূমিকা পালনকারী অতিবোদ্ধা ফেসবুক বাতেলাবাজদের কুযুক্তিতে বিভ্রান্ত হবেন না। প্রশাসনের কাছে এখন আমাদের একটাই দাবি, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের *—* মেয়ে *—* অবশ্যই গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
মহঃ জিম নওয়াজ তার ফেসবুক পেজের প্রোফাইলে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এবং বর্তমান ঠিকানা কলকাতা বলে উল্লেখ করেছেন ।।