বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ করেছিলেন যে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তিনি এটাও বলেন যে এখন আমি কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ? শনিবার (২ আগস্ট, ২০২৫) পাটনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী দাবি করেছিলেন যে বিহারের প্রতিটি বিধানসভা থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, মোট প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি এটিকে ৮.৫% ভোটারের বাদ দেওয়া বলে বর্ণনা করেছেন। তবে, নির্বাচন কমিশন তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তেজস্বীর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। কমিশন একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে পাটনা জেলা প্রশাসন তদন্ত করে দেখেছে যে তেজস্বী যাদবের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে । তবে তেজস্বীর নাম এক জায়গায় নয়,বরঞ্চ দু’জায়গার ভোটার তালিকায় রয়েছে । শুধু তাইই নয়, দুটো পৃথক ঠিকানায় দুটি ভোটার কার্ডও রয়েছে তার । ফলে নির্বাচন কমিশনকে ফাঁসাতে গিয়ে মোক্ষম ফেঁসে গেলেন লালু যাদবের পুত্র তেজস্বী ।
কমিশন আরও জানিয়েছে যে ভোটার তালিকা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সমস্ত যোগ্য ভোটারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে তেজস্বীর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা । সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ তেজস্বী যাদবকে জিজ্ঞাসা করছে যে তিনি ভোটের জন্য কতটা নীচে নেমে যাবেন। যাই হোক, এই বিষয়টি এখন বিহারের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আসলে,তেজস্বী যাদব প্রতারণা করে দুটি জায়গায় ভোটার তালিকায় নিজের নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন। দুটি EPIC নম্বর এবং দুটি ভিন্ন ঠিকানা? এখন তো হট্টগোল হওয়ার কথা ছিল, আর তাই এটা ঘটল।
যাই হোক, তিনি প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছিলেন, বনধের ডাক দিচ্ছিলেন । এখন তার সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল কমিশন । এখন যখন NDA সুযোগ পেল, তখন তারা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তেজস্বীর তীব্র নিন্দা জানাল। তারা দাবি করেছিল যে বিষয়টি বড়, কেলেঙ্কারি বিশাল, তাই পুরো লালু পরিবারের আইডি পরীক্ষা করা উচিত ।
বাস্তবিক তেজস্বী যাদব ভেবেছিল এক,কিন্তু হল এক ।
ইতিমধ্যেই SIR-এর উপর ঝড় উঠেছে, ৬৫ লক্ষ ভোট মুছে ফেলার ফলে ঘুম ভেঙে গেছে, এখন লালু পুত্র হাতেনাতে ধরা পড়েছে । দুটি আইডি তৈরি করা একটি আমলযোগ্য অপরাধ। তাও আবার ভিন্ন ঠিকানায় । আসন্ন বিধানসভার ভোটের আগে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার এখন উপায় খুঁজছেন তেজস্বী । এদিকে নির্বাচন কমিশন তেজস্বী যাদবকে অবিলম্বে তার ভোটার আইডি জমা দিতে বলেছে।
আসলে, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দেশ জুড়ে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । বিহারে এসআইআর-এর কাজ সম্পুর্ণ । অন্তত ৬৫ লাখ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে বলে খবর । এবারে পশ্চিমবঙ্গের পালা । ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এতদিন কংগ্রেস,বামপন্থী,আরজেডি,তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদিম পার্টি লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে বলে অভিযোগ । এছাড়া, মৃত ভোটার, ডবল এন্ট্রি ভোটার রয়েছে রাজ্যগুলিতে কয়েক লক্ষ করে । যেকারণে কমিশন এই ভুতুড়ে ভোটার চিহ্নিত করে নাম বাদ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে৷ আর এতেই গায়ে জ্বালা ধরে গেছে ওই দলগুলোর ।
বিপুল ভোটব্যাংক হারানোর ভয়ে বিজেপি বিরোধী দলগুলি বিধানসভা থেকে সংসদ পর্যন্ত তাদের আওয়াজ তুলছে। সর্বোপরি, বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ বা ৮% ভোট বাদ পড়ার অর্থ বিরোধীদের জন্য বিরাট ক্ষতি। জানা গেছে যে রাহুল গান্ধী ৭ই আগস্ট ইন্ডি জোটের একটি সভা ডেকেছেন। স্পষ্টতই, যেহেতু বিহারে নির্বাচন, তাই মূল আলোচনা হবে বিহার নিয়ে। জোটের বৈঠকের পর, বিরোধীরা নতুন মনোভাব নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেবে। কিন্তু ৬৫ লক্ষ ভোট পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তার বাস্তবতা পুরো দেশ বুঝতে পেরে গেছে। কিন্তু তেজস্বী এখন পর্যন্ত যে হৈচৈ করে আসছেন, তা এখন কমবে না। আরজেডির অবশ্যই যাদব এবং মুসলিমদের ভোট ব্যাংক রয়েছে, যেখানে এবার নীতীশও বড় ধাক্কা খাচ্ছেন। এনডিএও এখন খোলাখুলি খেলবে। স্পষ্টতই, এই শীতে বিহার নির্বাচন খুবই রঙিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।।