প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ ডিসেম্বর : কেউ শ্বশুর শাশুড়িকে বাবা-মা সাজিয়েছে । কেউ জন্মদাত্রী মায়ের থেকে ১৫ বছরের বড় । কেউ আবার প্রতিবেশী দম্পতির অজান্তেই তাদের বাবা-মা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছে । গত নভেম্বরে রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর কাজ শুরু হতেই এমনই চমকপ্রদ বহু তথ্য সামনে আসছে । মূলত এই সমস্ত কান্ডগুলি ঘটিয়েছে বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ।
আর এই ধারাবাহিকতায় পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বিধানসভার মহেশডাঙ্গা ক্যাম্পের ১৮৯ নম্বর বুথের বাসিন্দা বৃদ্ধা বিধবা লালমতি বিশ্বাসকে চরম অতান্তরে ফেলে দিয়েছে । কারন খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর পাঁচ সন্তানের জননী লালমতিদেবীর ষষ্ঠ সন্তানের আমদানি হয়েছে । কোন গুনধর তাকে মা এবং তার মৃত স্বামী প্রমথ বিশ্বাসকে বাবা সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছে সেটাই তিনি এখন খুঁজে পাচ্ছেন না । বিষয়টি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে জেলার রাজনৈতিক মহলে ।
মহেশডাঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা লালমতি বিশ্বাসের স্বামী প্রমথ বিশ্বাস ১৭-১৮ বছর আগে প্রায়ত হয়েছেন। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে । ছেলেমেয়ে সকলের বিয়ে হয়ে গেছে । গত মঙ্গলবার এসআইআর (SIR)এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হলে তিনি জানতে পারেন যে তিন ছেলের পাশাপাশি আরও একজনকে তাঁর ছেলে হিসেবে ওই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়া তালিকায় ১৮৯ নম্বর বুথের ১২০ নম্বর সিরিয়ালে “পবিত্র বিশ্বাস” নামে এক ব্যক্তিকে তাঁদের চতুর্থ ছেলে হিসেবে দেখানো হয়েছে। যিনি আবাার বর্তমান কর্মসূত্রে কাতারে রয়েছেন বলে জানা গেছে । এমন “মহান কান্ড” ঘটানো ব্যক্তিটি কে সেটাই এখন চিহ্নিত করতে পারছেন না ওই বৃদ্ধা ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,মহেশডাঙ্গা ক্যাম্পের ১৮৯ নম্বর বুথটি আগে ১৮৬ নম্বর বুথ ছিল। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ১২২ নম্বর সিরিয়ালে লালমতি বিশ্বাসের নাম নথিভুক্ত ছিল। ওই তালিকায় তাঁর স্বামী প্রমথ বিশ্বাসের নাম ১২১ নম্বর সিরিয়ালে ছিল । একই এলাকার বাসিন্দা জনৈক সুকৃতা বিশ্বাস এই কান্ডটি ঘটিয়েছেন । দিন কয়েক আগে তিনি ওই এলাকার বুথ লেভেল অফিসার(বিএলও)-এর কাছে নিজের ও তার স্বামী পবিত্র বিশ্বাসের ’এনুমারেশন’ ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছিলেন । আর তাতেই তিনি তার স্বামীর বাবা হিসেবে প্রয়াত প্রমথ বিশ্বাস এবং মা হিসেবে লালমতি বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করেন। এমনকি ওই ফর্মে প্রমথ ও লালমতির ’ভোটার আইডি’ নম্বরও লেখা হয়েছিল। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতেই আসল সত্য ফাঁস হয়ে যায় । সামনে চলে এসেছে প্রমথ বিশ্বাস ও লালমতি বিশ্বাস কে “বাবা-মা’ সাজিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলানো ভূয়ো ছেলের পরিচয় ।
তবে বিষয়টি এলাকায় শোড়গোল পড়তেই লালমতি বিশ্বাস সাফ জানিয়ে দেন যে “পবিত্র বিশ্বাস” নামে তার কোনো ছেলে নেই । এমনকি তাকে তিনি চেনেনও না । আজ শুক্রবার তিনি এইদিনকে বলেন, ‘,কি উদ্দেশ্যেই বা কারা এসব করলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না । প্রশাসন তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক ।’ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বুথের বিএলও স্মিতা সরকার (মিস্ত্রী) বলেন,’লালমতি বিশ্বাস আমাকেও বলেছেন যে পবিত্র বিশ্বাস নামে তাঁর কোনও ছেলে নেই। এই কথা জানার পরই বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।’ এই বিষয়ে মেমারি-১ নম্বর ব্লকের বিডিও শতরূপা দাস জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে নিয়ম মেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে এত কাণ্ডের পরেও প্রমথ বিশ্বাস ও লালমতি বিশ্বাস কে নিজের শ্বশুর-শাশুড়ি বলে দাবি করতে ছাড়েননি কুন্ঠা পবিত্র বিশ্বাসের স্ত্রী সুকৃতা বিশ্বাস। তিনি জানান,তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির নাম প্রমথ বিশ্বাস ও লালমতি বিশ্বাস । শাশুড়িকে কখনও দেখেছেন কি না,জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও রাখঢাক না রেকেই বলেন,’না দেখিনি’ । যদিও লালমতি বিশ্বাসের দাবির বিষয়েও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি ।।

