এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৫ অক্টোবর : প্রতিটি শিশুই বাবা-মায়ের কাছে স্নেহ ভালোবাসা খোঁজে । বাবা-মায়ের স্নেহ পেলে পারিবারিক শত অভাবেকেও তারা মানিয়ে নেয় । কিন্তু যখন থেকে হাওড়ার আন্দুল এলাকার বাসিন্দা দেব বাগের মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তখন থেকেই তার মা যেন কেমন হয়ে গেছে৷ ছেলের প্রতি তার তেমন নজর থাকত না । সৎ বাবাও বিশেষ পছন্দ করত না চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া সৎ ছেলে ছোট্ট দেবকে । প্রায় সারাদিন ধরে একটার পর একটা ট্রেনে উঠে যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে বেড়াত সে । একদিন দীঘাগামী একটা ট্রেনে উঠে ভাতার থানার শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী মহম্মদ আনারুল হকের কাছে এসে হাত পাতে ছোট্ট দেব । আনারুল সাহেবের পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও ৭ বছরের সন্তান । ছোট্ট শিশুটির নিষ্পাপ চোখ দুটো দেখে সন্তান স্নেহ জেগে ওঠে আনারুল হক ও তার স্ত্রীর । তারা শিশুটিকে কিছু টাকা দেওয়ার পাশাপাশি খাবারও খাওয়ান । কিন্তু টাকা বা খাবার নয়,শিশুটি দম্পতির স্নেহের ভাষা ঠিক বুঝে যায় । আর তার পরেই দম্পতির পিছু নেয় ছোট্ট দেব ।
আসলে গত সপ্তাহে সপরিবারে রাজ্যের সমুদ্র শহর দীঘায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ভাতার থানার শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা আনারুল হক । তিনি বলেন,’হাওড়া রেলস্টেশনে দীঘাগামী কাণ্ডারী এক্সপ্রেস ট্রেনে বসে আমরা গল্পগুজব করছিলাম । তখনই ওই শিশুটি ভিক্ষা চাইতে আসে । শিশুটিকে দেখে খুব মায়া হয় আমাদের ৷ অল্প কিছু টাকা দেওয়ার পাশাপাশি তাকে কিছু খাবার খাওয়াই । তারপর শিশুটি আর আমাদের পিছু ছাড়েনি ।’
জানা গেছে,আনারুলরা ৬ দিন দীঘায় ছিলেন । ছয়দিন ধরে দেব বাগ তাদের অনুসরণ করে চলেছিল। সকাল বিকেল সমুদ্র সৈকতে পৌছে যেত। মহম্মদ আনারুল হক তাকে খাওয়া দাওয়া করাতেন । হাতে কিছু টাটাও দিতেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় আর ছেলেটা পিছু ছাড়েনি ৷ বাধ্য হয়ে শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন আনারুল হক। তিনি বলেন,’শিশুটির কোথায় বাড়ি জানতে চাইলে শুধু বলত ‘দীঘা’ । বাবা-মায়ের নাম পর্যন্ত বলেনি আমাদের ৷ বাড়িতে আসার পর কোনো রকমভাবে তার বাড়ির মোবাইল নম্বর তার কাছ থেকে জেনে নিই । তারপর ওই নম্বরে ফোন করে জানতে পারি শিশুটির বাড়ি হাওড়ার আন্দুল এলাকায়। শিশুটির সৎ বাবাকে আমাদের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে বলি । আজ উনি এসে ছেলেকে নিয়ে গেছেন ।’
কিন্তু ছোট্ট দেব কিছুতেই শিকারপুর ছেড়ে যেতে রাজি নয়। কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। শিশুটির কান্না দেখে মহম্মদ আনারুল হক ও তার স্ত্রীও কেঁদে ফেলেন । বাবার সাথে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় দেব বলে,’আমি এই কাকুর(মহম্মদ আনারুল হক) কাছে থাকব । বাবা মা আমায় একদম ভালোবাসে না ।’ জানা গেছে, শিশুটির মা ভিক্ষা করেন । বাবা জনমজুরি করতেন । কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে শিশুর বাবা রোগে মারা যান । ফের বিয়ে করেন তার মা । একটা সরকারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র দেব । নিত্যান্ত অবহেলায় মানুষ হওয়া তার । স্কুলের ছুটির পরেই ট্রেনে ট্রেনে চড়ে ঘুরে বেড়াত আর চেয়ে পেট চালাত । সেই কারনে ভাতারের ওই ব্যবসায়ী ও তার স্নেহ পেয়ে তাদের নিজের বলেই ভাবতে শুরু করে ছোট্ট শিশুটি ।।