জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জী,বর্ধমান,১৫ ডিসেম্বর : একটা সময় সংবাদ জগত ছিল শহর কেন্দ্রিক। মুষ্টিমেয় সংবাদপত্রের কয়েকজন সাংবাদিক মূলত শহর কেন্দ্রিক সংবাদ পরিবেশন করত। কালেভদ্রে গ্রামগঞ্জের খবর স্থান পেত। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ জগতেরও বিবর্তন ঘটে। শহরের সীমা অতিক্রম করে সংবাদ জগত প্রবেশ করে গ্রামের অন্দরমহলে। শহর কেন্দ্রিক সংবাদপত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে স্থানীয় পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো। স্থানীয় টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে থাকে। পাশাপাশি সংবাদ পরিবেশনে অনলাইন পোর্টালগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করা যায়না । সংবাদ জগতে সাংবাদিক হিসাবে আবির্ভাব ঘটে অনেক নতুন মুখের। আর্থিক কারণে ছোট ছোট মিডিয়া হাউসগুলোর পক্ষে নতুন সাংবাদিককুলের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়না। ফলে কর্মক্ষেত্রে অনেককেই সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই বুঝতে পারেনা কোনটা খবর, কোনটা খবর নয়। কোন খবরটা করা উচিত কোনটা নয়। খবর করার সময় নিজের নিরাপত্তার জন্য কি কি তথ্য বা হার্ড কপি রাখতে হবে। অথবা কখনই বা ‘ক্রস চেক’ করতে হবে। প্রেস অ্যাক্টই বা কি। এরকম অসংখ্য সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে আসে কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটি (ট্রাস্ট)। সাংবাদিকদের স্বার্থে গত ১২ ই ডিসেম্বর বর্ধমান শহরের টাউন হলে আয়োজন করা হয় এক সাংবাদিক প্রশিক্ষণশালার। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কয়েকটি দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল এবং স্থানীয় টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল ।
প্রশিক্ষণশালা কার্যত হয়ে উঠেছিল নক্ষত্রমেলা। বিচারপতি, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, উকিল, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্হ আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন সংবাদ জগতের কয়েকজন বিখ্যাত সাংবাদিক। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শাহীদুল্লাহ মুন্সী, কলকাতা হাইকোর্টের এজিপি আনসার মণ্ডল, বর্ধমান কোর্টের সঞ্জয় ঘোষ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ বৈদুর্য্য ঘোষাল, বাংলা স্টেটসম্যান পত্রিকার সম্পাদক শেখর সেনগুপ্ত, পূবের কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, সাংবাদিক প্রবীর চ্যাটার্জ্জী, রানা সেনগুপ্ত, উত্তাল ঘোষ, মুকুল রহমান, পার্থ চৌধুরী, অরূপ লাহা, আই.জে.এসের সম্পাদক দেবাশীষ দাস, বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য ও অলোক মাজি, বর্ধমান পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য আইনুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য বিশ্বনাথ রায় ও অপার্থিব ইসলাম এবং কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সমস্ত সদস্য সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ।উপস্থিত সাংবাদিকদের করতালির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রাক্তন বিচারপতি শাহীদুল্লাহ মুন্সী। সহযোগিতা করেন মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ।
বিচারপতি সহ প্রতিটি বক্তা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের গুরুত্ব ও ভূমিকা উপস্থিত শতাধিক সাংবাদিকের সামনে তুলে ধরেন। তাদের মাথা উঁচু করে, শিরদাঁড়া সোজা রেখে সত্য খবর পরিবেশনের পরামর্শ দেন। যেভাবে দেশের অসংখ্য সাংবাদিককে শাসক দলের রোষের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেই বিষয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রবীণ সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহ করার সময় তাদের যেসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে সেগুলি তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে আসা উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। মাসের শেষে প্রতিটি সাংবাদিকের যাতে নির্দিষ্ট আয় হয় সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য প্রতিটি বক্তা সরকার ও মিডিয়া হাউসগুলির কাছে অনুরোধ করেন। প্রতিটি সাংবাদিক যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে তারজন্য তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেকেই সরকারের কাছে অনুরোধ করেন।
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রশিক্ষণ নিতে আসা সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন বলেন, ‘যেভাবে প্রত্যেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের জন্যই আজকের এই প্রশিক্ষণশালা সফল হয়েছে ।আগামী দিনেও প্রতি বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের প্রশিক্ষণশালার আয়োজনের চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব সাংবাদিক শাসক দলের রোষে পড়ে মিথ্যা মামলার শিকার হন তাদের এবং প্রকৃত দুস্থদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি আইনি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করব।’।