পুরুষের আর্তনাদ বা কান্না দিয়ে কি কোনো কবিতা হয়!
কবিতা মানে নারী পেলব প্রকৃতি, অশ্রুজল সহানুভূতি
কবিতা মানে উপমা অলংকার শব্দসম্ভার নারীত্বের বিভূষণ
কত রূপ, কত অভিনয় মোহিনী মায়া পূর্ণ ছলাকলা!
শতকরা সংখ্যায় হয়তো নিতান্ত কম বে-আব্রু বেশরম
তোমরা পুরুষের দিকে অতিসহজেই আঙুল তোলো
শঠ-প্রবঞ্চক-কাপুরুষ তকমা দাও নারীত্বের আস্ফালনে।
দোহাই কবিবর,
কবিতা থেকে আঙুল তোলো, লেখো জীবনীগল্প
চলো, এক নির্ভেজাল বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে।
তোমার কলমে উপমা অলংকারে কোনো কবিতা নয়,
আঁকো এক কঠিন বাস্তব রূঢ় সত্য জীবনের বাঁকে-বাঁকে।
কিছু দৃশ্য তুলে ধরো কল্পনার মেঘমুকুরে নয়,
একেবারে প্রকৃত অবয়বে শব্দপিঞ্জরের গায়ে
খোদাই করে রাখো কিছু শব্দচিত্র নির্বাক স্থাপত্যে,
বহমান জীবন আলেখ্যে নীরব সমর্পণে, আত্মদানে।
জানি না সে আত্মদানের অন্তরালে
আর্তনাদ না প্রতিবাদ না প্রেমের অভিশাপ
শুধু জানি এটাই চরম বাস্তব অদৃষ্ট পরিহাস।
— ——————————
কোর্টে যখন কেস উঠল অবাক হয়ে দেখলেম তাকে
কত নীচে সে নামাতে পারে আমাকে মিথ্যে অপবাদে।
এজলাসে ঠকঠক যেন হাতুড়ির ঘা গোপন কুঠুরিতে,
জজ্ ব্যারিস্টার সলিসিটর বাদী-প্রতিবাদী পক্ষে-বিপক্ষে
কত সত্যি-মিথ্যে আড়ালে অবয়বে কালো-সাদা মিলেমিশে,
ওদিকে সুবিচারের প্রতীকী মূর্তি হাতে তুলাদন্ড,
চোখ বাঁধা — ধাঁধা লাগে চোখে অন্দর অন্তরের দৃশ্যায়নে,
“যা বলিব সত্য বলিব” যেন নীরব পরিহাস!
সত্যি কি নিক্তি মেপে প্রকৃত বিচার হয়!
আলো-আঁধারে জীবন কথা কয় —
অস্ফুট বিলাপ, বোবাকান্না, নিদারুণ অভিনয়!
টনটনে ব্যথা বক্ষপিঞ্জরে হৃদযন্ত্র বুঝি বিকল হয়
এতবড় মিথ্যে বদনাম! চোখের সামনে অন্ধকার,
ছিঁড়ে-কুড়ে খায় স্মৃতিরা সব, একি পরিণাম!
পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায় হিসাব গোলায়।
গুপ্ত কুঠুরিতে তখন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি ফুটন্ত লাভা
সমঝোতা মুখ লুকায় প্রাচীরঘেরা কার্নিশে
সীমানা পেরিয়ে ধু-ধু বালুচর শুষ্ক মরুভূমি মিথ্যা আশে।
ইচ্ছে হলো অনেক কিছু বলি টেনে খুলে দিই মুখোশ
সুচারু অভিনয়ে কেসটা সাজিয়েছে ভালোই,
তবু মনে হয় সত্য, ন্যায় কোথাও তো আছে
একবার চেষ্টা করি সেটাই সামনে আনতে,
জানি ব্যর্থ অসফল হব আমি, তবুও তবুও…
ইচ্ছে হলো অনেক কিছু সবার সামনে তুলে ধরি।
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি এ কাজ কি আমায় মানায়!
ভদ্রতা শিষ্টাচার তো ব্যবহারে পারিবারিক সম্মানে
কেমনে আমি নামাব তাকে নীচে সর্বসমক্ষে,
সে কালি যে লাগবে এসে আমার গায়ে ধেয়ে।
একদিন তো বেসেই ছিলাম ভালো
অঙ্গীকারে বলেছিলাম রাখব তারে ভালো,
রক্ষিব তার মান-সম্মান যতই আসুক
ঝড়-তুফান, অভাব-অনটন।
রাখলাম তার মান। নির্বাক, নিশ্চুপ…
নির্বিবাদে মেনে নিলাম সব অপমান-ভার।
প্রতিবাদী হতে পারিনি, শুধু নীরব আর্তনাদ।
পুরুষ তো! নীলকন্ঠ, বিষের জ্বালায় নীল!
গলায় গরল নয় তো সরল জীবন নিরবধি,
মনের কোণে দগ্ধ ক্ষত ভগ্ন খাঁচায় তীব্র দহন
তবু লুকিয়ে রাখা অশ্রুজলে ঝাপসা দু’নয়ন।
জীবন চলে জীবন নামে অদৃষ্টেরই কঠিন রাশে
মিথ্যে মায়া, ভাঙা কাঁচ বাষ্পবারি দীর্ঘশ্বাসে।।
শেষ হলো মোর গল্পখানা,
লেখো তোমার কলমগুণে
পুরুষ মানেই সব দোষী নয়
নারীরাও যে ফাঁসিয়ে দেয়
মিথ্যাদোষে অনেকসময়।।