জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,২০ ডিসেম্বর :জন্মের সময় অঙ্গগত ত্রুটি নিয়ে অনেকেই জন্ম গ্রহণ করেন। পৃথিবীর রূপ-রস উপভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন এবং পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আধুনিক চিকিৎসাও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারে না। অথচ সময়মতো অঙ্গ পেলে বহু মানুষ হয়তো বেশ কয়েক দিন পৃথিবীতে আনন্দ উপভোগ করতে পারত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রচারের অভাবের জন্য ইচ্ছে থাকলেও অনেকে মরণোত্তর অঙ্গদান করতে পারে না। অনেক সময় কুসংস্কারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মাঝেও দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে কলকাতার গণদর্পণ সংস্থা।
গত ১৯ শে ডিসেম্বর বার্ধক্য জনিত কারণে মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের প্রথম সারির সৈনিক ও গণদর্পণের প্রাক্তন সহ-সভাপতি কলকাতার গলফ গ্রীণের বাসিন্দা অতুলন ভাট্টাচার্য না ফেরার দেশে পাড়ি দেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। মৃত্যুর সময় তিনি রেখে যান স্ত্রী ও দুই পুত্রকে।
প্রসঙ্গত,১৯৮৬ সালে ৫ ই নভেম্বর প্রফেসার জে বি এস হলডেনের ৯৫ তম জন্মদিনে সুবর্ণ বণিক সভাঘরে যে ৩৪ জন মানুষ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন অতুলন ভাট্টাচার্য ছিলেন ওই ৩৪ জন অঙ্গীকারীদের মধ্যে একজন। শুরু থেকেই অতুলন বাবু গণদর্পণের মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাদু খেলা দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মনে বিজ্ঞান মনস্কতার প্রচার করতেন। তারই প্রচেষ্টার ফলে গণদর্পণের আন্দোলন অন্যমাত্রা পায়।
অঙ্গীকার মত মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওনার চোখ দুটির রেটিনা রাতেই সংগ্রহ করেন এবং ওনার মরদেহ পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয়। জানা যাচ্ছে সন্তানদের উপস্থিতিতে ওনার মরদেহ ২০ শে ডিসেম্বর নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
গণদর্পণের পক্ষ থেকে ওনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও ওনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংস্থার সম্পাদক মণিশ সরকার বললেন – আমরা একজন সারথি ও অভিভাবককে হারালাম। আমাদের চরম ক্ষতি হয়ে গ্যালো। তবে আমরা তার দেখানো পথ ধরেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাব ।।