এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৬ ফেব্রুয়ারী : যত অনলাইন ব্যাঙ্কিং লেনদেন বাড়ছে ততই বাড়ছে সাইবার প্রতারণা । প্রতারণা রুখতে পুলিশ যতই সক্রিয় হচ্ছে ততই ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলতে নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে সাইবার প্রতারকরা । এবারে পুলিশও ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের সচেতন করতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করল । কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে ‘সাইবারস্মার্ট সিটিজেন কমিকস সিরিজ’ প্রকাশ করছে তাদের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজগুলিতে । আজ সাইবারস্মার্ট সিটিজেন কমিকস সিরিজ -এর পঞ্চম পর্বে ‘ফোনে ভুয়ো লটারি জেতার আশ্বাস দেওয়া প্রতারকদের প্রতিক্রিয়া’ কিভাবে জানানো উচিত তা কমিকসের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে পুলিশ । সেই কমিকসে প্রতারক একজন ব্যাঙ্ক গ্রাহক মহিলাকে বলেছে,’হ্যালো! অভিনন্দন! আপনি গ্র্যান্ড রয়্যাল হোটেলে একটি কমপ্লিমেন্টারি বিলাসবহুল সুটে থাকার সুযোগ জিতেছেন-শুধুমাত্র ৫০০ টাকা প্রসেসিং ফি দিতে হবে৷’
উত্তরে মহিলা বলছেন,’অসাধারণ! আপনি কি আমাকে সেই হোটেলের ছবি, আপনার আইডি এবং আপনার একটি সেলফি তুলে পাঠাতে পারেন?’
প্রতারক : ”ওহ… আমরা সাধারণত এই তথ্যগুলি শেয়ার করি না, ম্যাম। কিন্তু এটি একটি সীমিত সময়ের অফার!’
মহিলা : ‘আচ্ছা, বুঝলাম। দুর্ভাগ্যবশত, আমি এই ধরণের তথ্য যাচাই না করে এগোতে পারব না ।’
প্রতারক : ‘কিন্তু ম্যাম, এই অফারটি শুধুমাত্র আপনার জন্যে এবং সীমিত সময়ের জন্যে আছে !’
মহিলা : ‘খুব ভালো কথা, কিন্তু আমি আমার নিজের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিই। আপনি ওই তথ্যগুলির বিষয়ে জানালে, আমি আপনার অফারটি অবশ্যই বিবেচনা করবো ৷’ পাশাপাশি পুলিশ ‘হ্যাশট্যাগ ড্রপ ইনফর্ম’ ব্যবহার করেছে ।
এর আগে গতকাল কলকাতা পুলিশ জানিয়েছিল যে
১.৭৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ জালিয়াতির একটি মামলায়, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে (সাইবার থানা কেস নং 101/24)। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একটি স্টক ব্রোকিং কোম্পানির নকল লোগো তৈরি করে এবং উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত ব্যক্তিকে ১.৭৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে, তারপর সেই টাকা আত্মসাৎ করে। গ্রেপ্তারের সময়, তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন (যার মধ্যে ১টি আইফোন), ৮টি ব্যাংক চেক বই, ১টি পাসবুক, ৯টি এটিএম কার্ড, ১টি সিমকার্ড, ১.৫ লাখ নগদ টাকা, ৩টি কোম্পানির হোর্ডিং, স্ট্যাম্প এবং অন্যান্য বহু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত,ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি) -র রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত নথিভুক্ত হওয়া অভিযোগের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে রাজ্যে ৭১২টি সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে খাস কলকাতাতেই রুজু হয়েছে ১৭২টি মামলা ।কলকাতা পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত এক বছরে শহরে সব মিলিয়ে সাইবার প্রতারণা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার আর তার মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।মূলত টিকিট বুকিং, ডিজিটাল অ্যারেস্ট, মাদক পাচারের ভয় দেখিয়ে, কেওয়াইসি আপডেট, শেয়ারে বিনিয়োগের টোপ, ওটিপি শেয়ারের মাধ্যমে এই প্রতারণা করা হয়েছে। যায় ফলে কলকাতার বিভিন্ন অংশের বাসিন্দারা এই বিপুল অঙ্কের টাকা হারিয়েছেন। সাইবার প্রতারণা রুখতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র একাধিক পদক্ষেপ করেছে। দেশজুড়ে সাইবার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ৬ লক্ষেরও বেশি সিমকার্ড এবং ১ লক্ষের বেশি আইএমইআই নম্বর ব্লক করেছে কেন্দ্র সরকার। গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছিল, দেশ জুড়ে সাইবার প্রতারণার ৯ লক্ষ ৯৪ হাজারের বেশি অভিযোগের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।।