জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,পূর্ব মেদিনীপুর,০১ অক্টোবর : ‘হৃদ মাঝারে রাখব ছেড়ে দেবনা’- ঠিক তাই গত কয়েক বছর ধরে পিছিয়ে পড়া পূর্ব মেদিনীপুরের দাসপাড়ার ছেলেমেয়েদের হৃদয় মাঝে ধরে রেখেছেন পাড়ারই ছেলে সৌম্যদীপ দাস । আক্ষরিক অর্থে নয় বাস্তবে এখানকার বাসিন্দারা খুবই গরীব। একই পরিবারের তিনটি প্রজন্মের মহিলারা কার্যত লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে জীবন ধারণ করে। পুরুষরা নাকি দেশি মদ তৈরি করে। অভাব এদের নিত্য সঙ্গী। ফলে শিক্ষার আলো সেখানে পৌঁছায়নি। ক্রমাগত তারা মূল সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়েছে। শুধু তাদের কাছে শিক্ষার আলো নয় তাদের হৃদয়ে ধরে রাখার জন্য এবং একইসঙ্গে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি গড়ে তোলেন ‘হৃদি-পল্লব’। তার আশা একদিন এটা তার পল্লব বিস্তার করে মহীরূহ হয়ে উঠবে।
গত তিন বছরের মত এবছরও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে পঞ্চমীর দিন দাসপাড়া কালীমন্দির চত্বরে এলাকার দুই শতাধিক দুঃস্থ শিশুর হাতে পুজোর নতুন পোশাক ও মিষ্টির প্যাকেট উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হয়। এরা মূলত ‘হৃদি-পল্লব’ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। তখন বরাবরের মত উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী মহাদেব সেনগুপ্ত, কোলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য, শিক্ষক সুজন বেরা, সীমা দাস সেন, প্রদীপ চক্রবর্তী সহ আরো অনেকেই। সঙ্গে শিশুদের অভিভাবকরা। প্রায় ১৫০ জন শুভানুধ্যায়ী আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আগামী দিনেও তিনি ও তার দলের সদস্যরা মানুষের পাশে থাকার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
‘হৃদি-পল্লব’- এর কুমারী পূজো দেখুন আর গান শুনুন মুসলিম দম্পতির :-
এর আগে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় ঢাক বাজিয়ে এবং এক বিশেষ দুর্গাপুজোর আয়োজনের মধ্যে দিয়ে। যেখানে এক অব্রাহ্মণ শিশু কন্যার দ্বারা অপর এক শিশু কন্যা পুজিতা হয়। উদ্যোক্তাদের মতে এটি ছিল নারীর প্রতি অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতীকি পুজো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে দুর্গাপটের গান শোনান মেদিনীপুরের মুসলিম দম্পতি খুকুমণি চিত্রকর ও শ্যামল চিত্রকর। পেশায় এদের পদবীতে পরিণত হয়েছে। আর ছিল সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে অংশগ্রহণ করে কলাক্ষেত্র ও নৃত্যাঙ্গনা ড্যান্স গ্রুপের শিক্ষার্থীরা ।
প্রসঙ্গত এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েক বছর আগে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সৌম্যদীপবাবু ‘হৃদি-পল্লব’ প্রতিষ্ঠা করেন । পাশে পান নিজের ছাত্র জীবনের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। আর পেয়েছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী মহাদেব সেনগুপ্তকে। মূলত তাদের সহযোগিতায় শিশুদের জন্য প্রতি রবিবার শুরু করেন বিদ্যালয় । পরে পাশে পেয়েছিলেন আরও অনেক শুভানুধ্যায়ীকে।
সৌম্যদীপ বাবু বললেন,’যে অর্থে ‘স্বেচ্ছাসেবী’ শব্দবন্ধনী ব্যবহার করা হয় এটা ঠিক সেটা নয়। এর কনসেপ্ট সম্পূর্ণ আলাদা। ভূমিপুত্র হিসাবে এলাকার সমস্যা আমি বুঝি। আমার লক্ষ্য শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়ে এখানকার শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা । আশাকরি সবার সহযোগিতায় একদিন আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।’ যারা প্রতি মুহূর্তে তার পাশে থাকেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।।