ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি এসএ ডাঙ্গেকে যখন ব্রিটিশরা জেলে পাঠিয়েছিল, তখন তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে তিনি ১৯২৪ সালে একটি চিঠি লিখেছিলেন…’মালিক, আমি সবসময় আপনাদের প্রতি অনুগত এবং আপনাদের প্রতি আনুগত্য হারানোর কোন ইচ্ছা নেই আমার, কিন্তু এটা করা উচিত নয়।’ দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি লেখেন,’মালিক, আমি জেলের পরিবেশ সহ্য করতে পারি না, দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।’ আর এই জেল কালাপানির নয়, কানপুরের একটা সাধারণ জেল ছিল।
যে বামপন্থীরা বীর সাভারকারকে (যাকে দুটি কালাপানির সাজা দেওয়া হয়েছিল) নিয়ে মজা করার চেষ্টা করে, এটি তাদের ভারতীয় জনকের বাস্তবতা, কিন্তু কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা যখন ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেছিল, তারা তাদের সেই ইতিহাসকে অদৃশ্য করে দিয়েছে। এ ছাড়া হিটলার ও স্ট্যালিনের মধ্যে চুক্তি হলে তারা এখানে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে, কিন্তু হিটলার চুক্তি ভঙ্গ করে রাশিয়া আক্রমণ করার সাথে সাথেই তারা ব্রিটিশদের সাথে ফিরে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা শুরু করে। আজ এই লোকেরা হিটলারকে অন্যদের কাছে ফ্যাসিবাদী বলে। এর পরে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা নেহরুকে ক্ষমতা দিলে বামপন্থীরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে কারণ রাশিয়া ভারতের স্বাধীনতা স্বীকার করেনি। পরবর্তীতে নেহেরু তার বোনকে রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেও তখনও রাশিয়া রাজি হয়নি। অবশেষে, সম্ভবত ১৯৫২-৫৩ সালে, যখন রাশিয়া ভারতের স্বাধীনতা মেনে নেয়, তখন এই বামপন্থীরাও ভারতের স্বাধীনতাকে মেনে নেয়।
তা ছাড়া ভারতের কেরালা বিশ্বের একমাত্র রাজ্য যেখানে একটি বামপন্থী সরকার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছে (না হলে তারা সর্বত্র অভ্যুত্থান করত)… কিন্তু জয়ের পর তারা দেশের আইনকে প্রতিস্থাপিত করেছে। কেরালায় তাদের নিজস্ব আইন, তাদের নিজস্ব শিক্ষা তারা তাদের নিজস্ব সিস্টেম, তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে শুরু করে… তাই ভারতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে প্রথম সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া… ১৯৬২ সালে যখন চীন ভারতে আক্রমণ করেছিল কারণ তারা জানতে পেরেছিল যে একজন দুর্বল চরিত্রের ব্যক্তি এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, যিনি সেই সময়ে চীনা সৈন্যদের রসদ সরবরাহ করছিলেন যখন চীন তিব্বত দখল করেছিল, তখনই চীন সেনা অভিমুখ বদলে ভারতের দিকে করে এবং আক্রমণ করে দেয় । সামনের দিকে তারা ভারত আক্রমণ করে… তারপর এই বামপন্থীরা এখানে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে । কারন তখন কমিউনিস্ট মাও সে তুঙ চীনের রাষ্ট্রপতি । এছাড়াও,১৯৬৯ সালে, এই লোকেরা ইন্দিরার সাথে আপোস করে এবং ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাহিত্য ক্ষেত্র, মিডিয়া, চলচ্চিত্র একাডেমিয়া ইত্যাদিতে অনুপ্রবেশ করা শুরু করে যাতে তারা আগামী প্রজন্মের মধ্যে বামপন্থাকে জাগিয়ে তুলতে পারে যার জন্য নিজের ধর্ম ও দেশের প্রতি বিদ্বেষ ছিল প্রথম শর্ত । যেটা তারা আজও চালিয়ে যাচ্ছে । ভারতের হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু যদি কেউ থেকে থাকে তা ইসলামের প্রতি উদার মানসিকতা রাখা এই বামপন্থীরাই ।
ভারতীয় বামপন্থীদের আর একটা ভন্ডামি হল যে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ভারতকে সেনাবাহিনীর দখলে থাকা একটি দেশ বলেছিল, যাকে ১৬ খণ্ডে ভাগ করা উচিত বলে মনে করেছিল । কাশ্মীরের “আজাদি” থেকে শুরু করে “ভারত তেরে টুকড়ে হোঙ্গে”… এই স্লোগানগুলি তাদেরই অবদান। যদিও পরে তারা ইশতেহার থেকে এটিকে সরিয়ে দেয়, এই সমস্ত জিনিস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মিডিয়া, একাডেমিয়া, চলচ্চিত্র সর্বত্র প্রবেশ করেছে এবং আজ তার প্রভাব কিছু সংবাদমাধ্যমের মধ্যে দেশিবাসী লক্ষ্য করছে । জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি(জেএনইউ)কে আজ এই প্রকার দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের কার্যত আখড়ায় পরিনত করেছে ।
বামপন্থীরা যেখানেই ক্ষমতায় ছিল সেখানেই এত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে যে তার হিসাব করা কঠিন। সরকারী পরিসংখ্যান শুধু পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৮,০০০ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছিল জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সিপিএম । এই মমতা ব্যানার্জি, যিনি একসময় সংসদে কাগজপত্র ছিঁড়তেন বাংলাদেশীদের তাড়ানোর জন্য, তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছিলেন কারণ তিনি যখন কংগ্রেসে ছিলেন তখন এই বামপন্থীদের সাথে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ জোট ছিল । যে কারণে প্রদেশ কংগ্রেসকে তরমুজ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল…উপরে সবুজ ভিতরে লাল। প্রনব মুখার্জি, সৌমেন মিত্র,প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির মত তাবড় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে জ্যোতি বসুর সুসম্পর্ক ছিল। আর নবাগত মমতাও সিপিএমের বিষয়ে মুখ খুলতে পারতেন না, তাই মমতা কংগ্রেস ছেড়ে নিজের আলাদা দল গঠন করেছিলেন। যাইহোক, আজ সেই বাংলাদেশী রোহিঙ্গারা এখন মমতার আত্মীয় হয়ে উঠেছে এবং সেই একই বামপন্থী “হার্মাদ”রা এখন তৃণমূলের সম্পদ হয়ে গেছে ।
একইভাবে, কেরালায় যারা বামপন্থী তাদের ইতিহাসও একই রকম, যারা আরএসএস সম্পর্কে বলত যে তাদের মৃতদেহ লবণের বস্তায় ভরে ফেলে দিতে যাতে হাড়গুলোও উদ্ধার করা না যায় এবং… সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কে? এক সময়ের এই সড়ক ছাপ নেতাকে শিষ্টাচার শিখিয়েছিলেন একজন তরুণ ইন্সপেক্টর, যাকে আজ আপনারা ভারতের এনএসএ হিসাবে চেনেন ।
এর পরে,এটা তো সকলেরই জানা যে কিভাবে আজও জিহাদিদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশ বিরোধী এজেন্ডা চালায় এই বামপন্থীরা । জিহাদি রাস্তায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এই বামপন্থীরা বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ করে তাকে রক্ষা করে। কেউ শাহরুখ বা অনুরাগ মিশ্রের মতো হয়ে উঠতে পারে না। এমনকি ২০২০ সালের দিল্লির হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গাতেও, সকলে দেখেছে যে কীভাবে এই বুদ্ধিজীবী জিহাদিরা এই দাঙ্গার মাস্টারমাইন্ডকে রক্ষা করছে এবং তাকে “নিরীহ মুসলিম” বলে অভিহিত করছে। শহুরে নকশালরা জঙলি নকশালদের রক্ষা করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে, কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এমনকি কংগ্রেস তাদের বন্দুকধারীদের গান্ধীবাদী বলে এবং নির্বাচনে তাদের সাহায্য নেয়, কিন্তু সস্তায় বিদ্যুত এবং জল পাওয়া লোকেরা ছত্তিশগড় বা দিল্লিতে কি চলছে তা তারা দেখে না ।
বামপন্থীদের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরতে গেলে একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে । কিন্তু এই কটি ঘটনাক্রমেই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এই শ্রেণীর মানুষগুলো কতটা কাপুরুষ এবং দেশদ্রোহী ছিল । স্বাধীনতার আগে এবং আজও তাদের একই কাজ চলছে…আর তাদের তো একটা স্লোগানও আছে “ভারত কি বর্বাদি তক…জং রহেগি জং রহেগি” । আরেকটা বিষয়, এই বামপন্থীরা লিবারেল, সেকুলার, বামপন্থী, কমিউনিস্ট, সোশ্যালিস্ট, ফেমিনিস্ট ইত্যাদি নামেও পরিচিত ।পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে তারা যতই আলাদা দল বা সংগঠন তৈরি করুক না কেন…কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে তারা একইভাবে ঐক্যবদ্ধ । যেভাবে ইসলাম বনাম বাম বা বাম বনাম খ্রিস্টধর্ম চলছে, কিন্তু ভারতে তারা সবাই হিন্দুদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে।।