প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ নভেম্বর : বিদ্যুৎ চুরি রুখতে সর্বতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর।’হুকিং’ আটকানোর জন্য রাজ্য সরকার প্রচারও চালাচ্ছে।তবুও বিদ্যুৎ চুরিকরে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগ উঠলো খোদ শাসক দলের বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এমন কীর্তির প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী বিজেপি ও সিপিএম নেতৃত্ব।ক্ষোভ চেপে রাখেন নি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়ার বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের বাড়ি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়া গ্রামের রাস্তার ধারে।সেই বাড়ি থেকে মেরে কেটে ২০০ মিটার দূরে কংক্রিটের রাস্তার ধারে তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ি ।সেখানে মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার বাড়িটি বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায়ের। এর ঠিক উল্টোদিকে দোতলা পাকা বাড়িতে থাকেন বিধায়কের শ্যালকরা। ওই জায়গার ঢালাই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার থেকে ‘হুকিং’ করে বিধায়কের শ্যালক ও শাশুড়ি তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। বেশ কিছু দিন ধরে বিধায়কের শ্যালক ও শাশুড়ি ’হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ দপ্তর নিরবই থেকে গেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।শনিবার এই ’হুকিং’ এর ছবি ক্যামেরা বন্দি করে ব্লকের শাসক দলের অন্য নেতারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেন। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে তাঁরা কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
তবে তৃণমূল বিধায়কের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহারের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ।তিনি বলেন,’বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে রাজ্য সরকার প্রচার চালাচ্ছে।বিদ্যুৎ দপ্তর অভিযানও চালায়। অন্যরা কেউ হুকিং করে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করলে তাদের জেল-জরিমানা হচ্ছে। সেখানে বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিদ্যুৎ চুরি করে দিনের পর দিন বাড়িতে ব্যবহার করলে আঙুল তো উঠবেই।’ ‘হুকিংয়ের’ বিরুদ্ধে তো বিধায়কেরই প্রচার জারি রাখার কথা।তার পরিবর্তে যদি বিধায়কের আত্মীয়রাই ’হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ টানেন তাহলে অন্যদের তিনি সচেতন করবেন কোন মুখে !’
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিদ্যুত চুরিকরে ব্যবহার নিয়ে বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগকে রবিবার ফোন করা হলে তিনি বলেন,’যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে,তাহলে বিদ্যুৎ দফতর বা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।এখানে আমার কিছু বলার নেই।আইন সবার জন্য সমান ।’ বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায় অবশ্য ‘হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা করা হয়,’আপনাদের পাকা বাড়ি ও মাটির বাড়িতে আলাদা আলাদা ভাবে পোল থেকে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ টানা রয়েছে ,বাড়ির বাইরে মিটারও রয়েছে ,তাও বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহারের কারণ কি ?’ এর উত্তরে সুমিত্রা রায়ের সাফাই,’১০ হাজার টাকার উপর বিদ্যুতের বিল বাকি রয়েছে। বাড়িতে শিশু রয়েছে। অন্ধকারে তারা কান্নাকাটি করে,সে জন্যেই ‘হুক’ করেছি।’
কিন্তু বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ‘হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে বলে তো বিরোধীরা স্বোচ্চার হয়েছে,এ নিয়ে কি বলবেন
। উত্তরে বিধায়কের শাশুড়ি জানান,’লজ্জার বিষয় । আমরা অন্যায় করে ফেলেছি । বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ খুলে ফেলব।’ আর নিজেদের
দোতলা বাড়ির কাছে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের বড় শ্যালক অভিজিৎ রায় জানিয়েছেন,বাড়ির মিটারের সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। সে জন্যেই হুকিং করতে হয়েছিল। হুকিং খুলে দেওয়া হবে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) আয়েশা রানীকে ঘটনার কথা জানানো হলে তিনি বলেন,’বিদ্যুৎ দপ্তরকে বলব এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।’ এ দিকে তৃণমূল বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের’ হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে সংবাদমাধ্যম নড়েচড়ে বসেছে জেনে টনক নড়ে বিদ্যুৎ বন্টন বিভাগের।সেটা আঁচ করে ’হুকিং’ তার খুলে সরিয়ে ফেলেন বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোজজন।
এই গোটা ঘটনা নিয়ে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র শাসক দলকে কার্যত তুলোধনা করেছেন । তিনি বলেন,’তৃণমূল মানেই চুরি। বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহার করাটা তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাছে মামুলি বিষয়। আরও বড় বড় চুড়িতে ওরা হাত পাকিয়ে ফেলেছে। তৃণমূল বিধাকের আত্মীরা বিদ্যুৎ চুরি করেছে বলে বিদ্যুৎ দপ্তর নিরবতা দেখিয়ে গেছে।অন্য কেউ এভাবে ’হুকিং করে’ বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে এখন তার জেল জরিমানা হয়ে যেত । এই ঘটনাই প্রমাণ করে বাংলায় এখন আইনের শাসন নয় ,শাসকের আইন চলছে’ ।।