এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৭ ডিসেম্বর : আরজি করের তরুনী চিকিৎসক ‘অভয়া’র ধর্ষণ খুনের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে । স্থানীয় টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ওঠে প্রমান লোপাটের মত গুরুতর অভিযোগ । তাকে বেশ কিছুদিন হাজতবাসও করতে হয়েছে । ওই ঘটনার পর থেকে রাজ্য পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে রাজ্যবাসী । রাজ্য পুলিশকে “দলদাস” আখ্যা দেয় বিজেপি । তারপর থেকে নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরাতে সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ । বিভিন্ন থানার পুলিশের সাফল্যের খতিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে মানুষের বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য পুলিশ । কিন্তু পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার পুলিশের এমন একটা কীর্তি সামনে এসেছে যাতে পুলিশের মানসিকতা নিয়েই ফের প্রশ্ন চিহ্ন খাড়া করে দিয়েছে ।
আসলে ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে কেতুগ্রামের শাঁখাই গ্রামের কাছে একটি সরষে খেতের অদূরে একের পর এক পূর্ণবয়স্ক হনুমানের অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয় । ঘটনাস্থল থেকে চারটি হনুমানের দেহ উদ্ধার করে কাটোয়া বনবিভাগ ৷ পরে আরও ৬ হনুমান মারা যায় । বনবিভাগ জানতে পারে যে সাগর দাস নামে স্থানীয় এক কৃষক ওই সরষে খেতের মালিক। সন্দেহ যে তাঁরই দেওয়া বিষ থেকে বিষক্রিয়ায় হনুমানগুলির মৃত্যু হয়েছে । সাগর দাসকে একাধিকবার তলব করে বনবিভাগ । তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখে বনবিভাগ থেকে এফআইআর দায়েরও করা হয়। কিন্তু এযাবৎ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি ।
হনুমানের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিলেন আউশগ্রাম এলাকার বাসিন্দা রাধামাধব মণ্ডল নামে এক পশুপ্রেমী। ওই নৃশংস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা শাসকের কাছে তিনি অভিযোগও জানিয়েছিলেন । আর এতেই তিনি কেতুগ্রাম থানার পুলিশের বিষ নজরে পড়ে গেছেন বলে অভিযোগ ।
এখন বনবিভাগের মামলায় তাকেই মূল স্বাক্ষী করে তিন দিনের মধ্যে কেতুগ্রাম থানায় তলব করা হয়েছে । বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাধামাধব মণ্ডলকে কেতুগ্রাম থানার ইনচার্জ এসআই রনিত দাস একটা নোটিশ (NOTICE U/S 179 B.N.S.S., 2023) করে বলেছেন,’আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে উপরে উল্লিখিত মামলাটি (Ref: Ketugram P.S. Case No. 513/24 Dated 01.12.2024 u/s 9 of wild life protection Act 1972 Amended) হিমাংশু মন্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে, ডিআর/ফর, লেফটেন্যান্ট সেগেন মন্ডল সি/ও ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার বর্ধমান ডিভিশন, গোলাপবাগ, পূর্ব বর্ধমান। নিম্নস্বাক্ষর করে মামলার তদন্ত চলছে। যেহেতু এটা প্রতীয়মান হয় যে আপনি উপরে উদ্ধৃত মামলার তথ্য/পরিস্থিতি এবং তার তদন্তের সাথে পরিচিত। অতএব, আপনাকে এতদ্বারা উল্লিখিত মামলার বিষয়ে নোটিশ পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে কেতুগ্রাম থানায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য জানানো হচ্ছে।’
শুধু তাই নয়,নোটিশে এটাও বলা হয়েছে যে প্রয়োজন অনুযায়ী উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার(B.N.S) ২০৮ এর অধীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। অবশ্য ১৫ বছরের কম বয়সী এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, মহিলা বা মানসিক বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি বা তীব্র অসুস্থ ব্যক্তিকে থানায় শারীরিক উপস্থিতি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় যদি না তারা নির্দেশ অনুসারে তদন্তে যোগ দিতে এবং যোগদান করতে ইচ্ছুক না হয়।’
এখন ১০ অবলা হনুমানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যায়বিচার চেয়ে চরম ফাঁপরে পড়েছেন পেশায় লেখক রাধামাধববাবু । তার অভিযোগ,’হনুমানের নৃশংস হত্যার ঘটনায় আমি তদন্ত চেয়ে জেলাপ্রশাসনের কাছে আবেদন করায় কেতুগ্রাম পুলিশ আমাকে হয়রানি করার জন্য বনবিভাগের দায়ের করা মামলায় আমাকে সাক্ষী করে তলব করেছে৷’ যদিও তিনি আজ শুক্রবার লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন যে বইমেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না। অবশ্য তিনি এও বলেন, ‘তদন্তকারী আধিকারিক আমার বাড়িতে এলে আমি সহযোগিতা করব।’ এখন দেখার বিষয় কেতুগ্রাম থানার পুলিশ পশুপ্রেমী রাধামাধব মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিএনএসের ২০৮ (সরকারী কর্মচারীর আদেশের আনুগত্যে অনুপস্থিতি) ধারায় মামলা রজু করে কিনা । আর মামলা হলে আইন অনুযায়ী রাধামাধববাবু সাধারণ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন যা এক মাস পর্যন্ত হতে পারে, বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন ।।