এইদিন ওয়েবডেস্ক,তিরুবনন্তপুরম (কেরালা),২০ জানুয়ারী : প্রেমিককে কীটনাশক মেশানো তরল খাইয়ে খুনের ঘটনায় প্রেমিকাকে ফাঁসির সাজা দিল কেরালার আদালত । আজ সোমবার নেয়াত্তিংকারা অতিরিক্ত দায়রা আদালতে বহুল আলোচিত শ্যারন রাজ (Sharon Raj) হত্যা মামলায় অভিযুক্ত গ্রীষ্মাকে (Greeshma) মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেছে । যৌন সঙ্গমের জন্য বাড়িতে ডেকে এনে শ্যারন রাজকে প্রেমের অভিনয় করে কীটনাশক মিশিয়ে আয়ুর্বেদিক ক্বাথ খেতে বাধ্য করেছিল গ্রীষ্মা । তৃতীয় অভিযুক্ত, গ্রীষ্মার কাকা নির্মলাকুমার নায়ারকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ।
শ্যারন এবং গ্রীষ্মার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে। একই বাসে কলেজে যাতায়তের সময় তাদের পরিচয় ও প্রেম । দেড় বছর ধরে তাদের প্রেম চলতে থাকে। ইতিমধ্যে, দুজনে তিরুবনন্তপুরমের ভেট্টুকাড গির্জায় পৌঁছে গোপনে বিয়ে করে । প্রেমের সম্পর্কের সময় দুজনে বেশ কয়েকবার যৌন সম্পর্কেও লিপ্ত হয়েছিল । তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করত। কিন্তু ২০২২ সালের ৪ মার্চ, গ্রীষ্মা একজন সেনা জওয়ানের সাথে বাগদান করে । স্বচ্ছল জীবনের আশায় প্রেমিকের পিছু ছাড়ানোর বিষয়ে মনস্থির করে ফেলে গ্রীষ্মা । অন্যদিকে শ্যারন খুব মনমরা হয়ে পড়ে । শ্যারনের প্রেম থেকে সরে আসতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে গ্রীষ্মা । আদালতে দেওয়া পুলিশের চার্জশিটে বলা হয়েছে যে, গ্রীষ্মা ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর,সকাল ৭.৩৫ টা থেকে শ্যারনকে যৌন সঙ্গমের জন্য বাড়িতে আসতে বাধ্য করে গ্রীষ্মা। তার আগে যৌন ভাষা ব্যবহার করে শ্যারনকে প্রলুব্ধ করে ।সকালে শ্যারন যখন প্রেমিকার বাড়ি আসে, তখন তাকে কীটনাশক মিশ্রিত তরল খেতে দেয় প্রেমিকা । সে ভালোবাসার ভান করে শ্যারনকে তেতো পানীয় পান করার চ্যালেঞ্জ জানায় । এদিকে প্রেমে অন্ধ যুবক প্রেমিকার দেওয়া সেই বিষযুক্ত তরল পান করে ফেলে।
পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছে,প্রেমিকের পিছু ছাড়াতে তার বিরুদ্ধে “জাঠক দোষ” নামে একটি মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে দেয় প্রেমিকা । সেই অনুযায়ী সে ছড়িয়ে দেয় যে রাশিফল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে তার প্রথম স্বামী মারা যাবে । এই পদক্ষেপটি ছিল আদপে প্রেমিককে ভয় দেখানোর জন্য একটা কৌশল, যাতে প্রেমিক গ্রীষ্মার প্রেমের রাস্তা থেকে সরে যায় ।
কিন্তু প্রেমিকার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে শেষ পর্যন্ত প্রেমিকা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় । বিষাক্ত তরল পান করানোর বিষয়টি মূলত গ্রীষ্মার মস্তিষ্ক প্রসূত । এনিয়ে সে রীতিমতো গবেষণাও করতে শুরু করে । গ্রীষ্মা গুগলে অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে, তার কাকা খামারের জন্য যে কীটনাশক কিনেছিলেন তা পান করলে একজন ব্যক্তি নিশ্চিত মারা যেতে পারে । এভাবেই সে ভালোবাসার ভান করে শ্যারনকে ডেকে পাঠিয়ে বিষযুক্ত তরল পান করিয়ে তাকে হত্যা করে । পরে,কীটনাশকের বোতলের লেবেলটি সরিয়ে বাড়ির পাশের রাবার বাগানে ফেলে দেওয়া হয়।
গ্রীষ্মার মা’ও খুনের কথা জানতেন। গ্রীষ্মার কাকা তাকে প্রমাণ লোপাট করতে সাহায্য করেছিল । যদিও গ্রীষ্মাকে তার মৃত্যুর ঠিক আগে পর্যন্ত অভিযুক্ত করার কথা শ্যারন ভাবেনি। অন্যদিকে, গ্রীষ্মা তার শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ভালোবাসার অভিনয় করে যায় । কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগে, শ্যারন নিজেই তার প্রিয়জনদের সবকিছু খুলে বলেছিল। ১১ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর কিডনি এবং লিভার সহ অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ায় মৃত্যু হয় তার ।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে,আজ সাজা ঘোষণা করার সময় আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলেছে,যৌন ঘনিষ্ঠতার ভান করে শ্যারনকে আমন্ত্রণ জানানো এবং পরবর্তীতে অপরাধ সংঘটনের ঘটনা উপেক্ষা করা যাবে না। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। গ্রীষ্মা তাকে রেকর্ড না করতে বলা সত্ত্বেও শ্যারন সন্দেহজনক তরলের ভিডিও রেকর্ড করার মতো প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে তিনি কিছু সন্দেহ করেছিলেন। শ্যারন এক ফোঁটা জলও না খেয়ে ১১ দিন ধরে জীবনের জন্য লড়াই করেছিলেন।’
আদালত আরও পর্যবেক্ষণ করেছে যে গ্রীষ্মা তার প্রেমিক শ্যারনের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাকে আবেগগতভাবে ব্যবহার করেছে। শ্যারনের কাছ থেকে মানসিক চাপের দাবির সমর্থনে তার কাছে কোনও প্রমাণ নেই, আদালত বলেছে, গ্রীষ্মার আত্মপক্ষ সমর্থনে শ্যারন যে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে তারও কোনও প্রমাণ নেই। বিপরীতে, শ্যারন কখনও কোনও বার্তা বা যোগাযোগে তাকে দোষারোপ করেননি। শ্যারন অভিযুক্তের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও, তিনি একই সাথে তার বাগদত্তার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন।
এটা স্পষ্ট যে অপরাধটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং কোনও উস্কানি ছাড়াই করা হয়েছিল। তার অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গ্রীষ্মার ধূর্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল । অপরাধের তীব্রতার আলোকে তার তরুণ বয়সের যুক্তি বিবেচনা করা যায় না। প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে গ্রীষ্মার হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না শ্যারন ।
অভিযুক্ত গ্রীষ্মার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা), ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩২৮ (জীবনের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বিষ প্রয়োগ) এবং ২০৩ (মিথ্যা তথ্য প্রদান করে ন্যায়বিচারে বাধা) ধারায় অভিযুক্ত করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে আজ ।।