জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,১১ ডিসেম্বর :বাহ্যিক নয় বরাবরের মত আন্তরিকতার আড়ম্বরের মধ্যে দিয়ে গত শনিবার (১০ ডিসেম্বর ২০২২) কলকাতার নলিনী গুহ সভাগৃহ মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটল ‘কাব্যতরী’ সাহিত্য পত্রিকার ‘সারা বাংলা কবিতা উৎসব ও বইমেলা সংখ্যা-২০২৩’। শতাধিক কবি-সাহিত্যিকদের সৃষ্টি সমৃদ্ধ এটি ‘কাব্যতরী’ সাহিত্য পত্রিকার ষষ্ঠ বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যা। পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় এক সুন্দর ও আকর্ষণীয় সাহিত্যানুষ্ঠানের ।
অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই বর্ধমান, ক্যানিং, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বনগাঁ, বার্ণপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রানের উচ্ছ্বাসে ও গভীর আন্তরিকতায় সাহিত্যকে ভালবেসে একে একে হাজির হন সাহিত্য প্রিয় প্রায় শতাধিক কবি-সাহিত্যিক। পত্রিকার সম্পাদক প্রবীর কুমার চৌধুরীর টানে অসুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘদিন পর কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন কবি মধুমিতা হালদার। তরুণ কবিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন বর্ষীয়ান কবি কমল দে সিকদার। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক হুমায়ুন কবির ঢালি, কবি ড. নাঈমা খানুম, কবি রাজিয়া রহমান পিংকি। এপার বাংলার কবিদের মধ্যে ছিলেন শঙ্খচুর চক্রবর্তী,অমিতাভ মিত্র, পিনাকী বসু, মিনতি গোস্বামী, শঙ্কর ব্রহ্ম, ড.সুকান্ত কর্মকার,কৌশিক গাঙ্গুলি, চন্দ্রবলি ব্যানার্জ্জী,মনোরঞ্জন আচার্য, বিশিষ্ট প্রকাশক নিগমানন্দ মন্ডল সহ আরও অনেক সুপরিচিত কবি-সাহিত্যিক। পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে বরণ করা হয়।
এর আগে সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী দীপ্তি রায় বিশ্বাস, শুভা রায়, মিনতি গোস্বামী, সুস্মিতা দত্ত, শান্তা চ্যাটার্জ্জী, লীপিমিতা তনুশ্রী, মধুমিতা হালদার, মুনমুন মুখার্জী, কাকলি চ্যাটার্জ্জী, মৌমিতা চ্যাটার্জ্জী, সঞ্জিত মণ্ডল ও প্রবীর কুমার চৌধুরী। উপস্থিত কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটি অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। কখন ও কিভাবে যে চার ঘণ্টা পেরিয়ে যায় বোঝা যায়নি। দূর থেকে আসা কবিদের মধ্যে সেভাবে বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াতাড়ি করতে দেখা যায়নি। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে কবিতা উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি কমল দে সিকদার । সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি নিমাই চন্দ্র দাস ।
ভিড়ে ঠাসা সভাগৃহে কবিতার ছন্দে উপস্থিত কবিরা আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে শুরুটা করেছিলেন কবি কমল দে সিকদার। শতাধিক কবির উপস্থিতি লক্ষ্য করে তিনি যখন বলে ওঠেন – ‘আয় সবাই বেঁধে বেঁধে থাকি’- উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সবাই। হাততালিতে ভরে ওঠে সভাগৃহ। তারই রেশ ধরে ওপার বাংলার শিশুসাহিত্যিক হুমায়ুন কবির বলেন ওঠেন – এত কবি-সাহিত্যিকের মিলন প্রাঙ্গনে এসে আমি আপ্লুত ও চমকিত হলাম। এএক অন্য অভিজ্ঞতা।
আজকের অনুষ্ঠানে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পাঁচজন কবিকে ‘অনিল কুমার চৌধুরী’ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের কবি ড. নাঈমা খাতুন ও কবি রাজিয়া রহমান পিংকি এবং এপার বাংলায় কবি পিনাকী বসু, সুজিত কুমার দাস এবং শোভন ব্যানার্জ্জী ।
সুদূর বার্ণপুর থেকে এসেছিলেন কবি মুনমুন মুখার্জ্জী । তিনি বললেন,’দূরত্বটা যথেষ্ট বেশি হলেও প্রবীরদার আন্তরিকতার জন্য মনে হয় অনুষ্ঠান মঞ্চটার পাশেই আমার বাড়ি।’
সাহিত্যের টানে দূর দূরান্ত থেকে যেভাবে কবি সাহিত্যিকরা ছুটে এসেছেন তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘কাব্যতরী’ পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা প্রাণপুরুষ প্রবীর কুমার চৌধুরী বললেন – আজ সত্যিই খুব আনন্দের দিন। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের উপস্থিতিতে সভাগৃহ হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের মিলন মেলা। আশাকরি আগামীদিনেও এদের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন প্রতিভাদের পাশে পাব। তিনি আরও বলেন – যুগ যুগ ধরে সমাজ সংস্কারে সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। মানুষের হারিয়ে যাওয়া ঘুমন্ত মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে আমরা সাহিত্যের শরণাপন্ন হয়েছি। আমরা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সাহিত্যের প্রসারে ব্রতী হয়েছি ।।