শ্যামসুন্দর ঘোষ,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৭ জুন : দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন কমলেকামিনী পূজো ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার কামাল গ্রাম । মঙ্গলবার থেকে শুরু হল এই পূজো । ৪-৫ দিন ধরে চলে পূজোর জের । দেবীর পূজো ঘিরে গ্রামে মেলা বসেছে । প্রতিদিন আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের । এদিন পূণ্যার্থীদের জন্য ভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।
কাটোয়া-১ ব্লকের সরগ্রাম অঞ্চলের কামাল গ্রামের কূলদেবী কমলেকামিনী । দেবীর নাম থেকেই গ্রামের নাম ‘কামাল’ হয় । কথিত আছে,আজ থেকে প্রায় দুই শতাধিক বছর আগে কমলা দিঘিতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন রানী নামে এক স্থানীয় জেলেনি । তখন তাঁর ঘাড় জালে দেবী লক্ষ্মীর সোনার মূর্তিটি উঠে আসে । মূর্তিটি বাড়িতে এনে রেখে দেন ওই মহিলা । পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে গ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ কমলাকান্ত রায়ের হাতে দেবীর মূর্তিটি তুলে দেন তিনি । তখন থেকেই প্রতি বছর আষাঢ় নবমী তিথিতে দেবীর বাৎসরিক পূজার সূচনা হয় ।
গ্রামবাসী উজ্জ্বল সোম বলেন,’শুরুর দিকে কয়েক বছর গ্রামের ব্রাহ্মণ কমলাকান্ত রায় নিত্যসেবা ও বাৎসরিক পূজো পরিচালনা করতেন । পরে তার অবর্তমানে গ্রামবাসীরা মিলিত খরচায় পূজো পরিচালনা করে আসছে । প্রথম দিকে মাটির ঘরে দেবীর পূজো হত । বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীদের চাঁদায় একই জায়গায় পাকা মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে ।’
কামাল গ্রামের দেবী কমলাকামিনীর মূর্তি ও পূজা পদ্ধতিতে রয়েছে অভিনবত্ব । চতুর্ভুজা দেবীর উপরের ডান হাত বরাভয় মূদ্রায় । বাম হাতে পদ্ম এবং নিচের দু’হাত ধ্যান মূদ্রায় । দেবীর দু’পাশে দুই হাতি শুড় দিয়ে জল ছেটাচ্ছে দেবীকে । গ্রামবাসী তরুনকান্তি মাঝি,হারাধন রায়রা বলেন,’সাধারণত বৈষ্ণব মতে দেবী লক্ষ্মীর পূজো হয় । কিন্তু আমাদের গ্রামের কমলে কামিনীর পূজো হয় শাক্ত মতে । রয়েছে বলিদান প্রথা ।’ তাঁরা জানান,পূজোর দিন দেবীকে প্রথমে দোলায় চাপিয়ে কমলা দিঘিতে নিয়ে গিয়ে স্নান করানো হয় । দিঘির ঘাটে দেবীর পূজো হয় । তারপর ফের দেবীকে দোলায় চাপিয়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ঘোরানো হয় । বাড়ির সামনেই গৃহস্থের মানতের পাঁঠা বলি দেওয়া হয় ।
এদিন কামাল গ্রামের কমলেকামিনী পূজো উপলক্ষে প্রতিটি পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা ভিড় জমিয়েছে । আশপাশের লোকজনও দেবীর পূজো দিতে আসে কামাল গ্রামে । পূণ্যার্থীদের ভিড় ও ঢাক-কাঁসরের আওয়াজ ফলে উৎসব মুখর হয়েছে গোটা গ্রাম ।।