এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৩ অক্টোবর : ‘সাধনসঙ্গী’ করে সারা জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের বাসিন্দা এক তরুনীর সঙ্গে দিনের পর দিন সহবাস করছিলেন উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী নামে এক ধর্মগুরু । উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের বাসিন্দা ওই ধর্মগুরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় ‘কথাবাচক’ হিসাবে পরিচিত । তার আধ্যাত্মিক প্রবচনে আকৃষ্ট হয়ে ওই নরাধমকে বিশ্বাস করে জীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিলেন ধার্মিক মেয়েটি । প্ররোচিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন । কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তরুনী । মঙ্গলকোট থানায় গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয় । মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত । আজ বুধবার মঙ্গলকোট থানার পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে তাকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কিন্তু মঙ্গলকোটের বাসিন্দা হয়েও উত্তরপ্রদেশের একজন ধর্মীয় ‘কথাবাচক’-এর সঙ্গে পরিচয় কিভাবে হল ?
যেটা জানা যাচ্ছে যে খুব ছোট থেকেই ধর্মপ্রবণ ওই তরুনী । ইউটিউবে নিয়মিত ধর্মীয় ‘কথাবাচক’দের প্রবচন শুনতেন । একদিন গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রীর প্রবচন শুনে তিনি খুব আকৃষ্ট হয়ে পড়েন । পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন তরুনী ।গোবিন্দ বল্লভ দেশ জুড়ে প্রবচন দিয়ে বেড়াতেন । পশ্চিমবঙ্গেও এসেছেন একাধিকবার । ২০২৩ সালে মে মাস নাগাদ বীরভূম জেলার ভাগবত পাঠের আসরে আসেন গোবিন্দ বল্লভ । তরুনীকে সেখানে আসতে বলেন তিনি । ধর্মীয় ভাবে বিভোর তরুনী ওই আসরে যান । সেখানেই গোবিন্দ বল্লভের সঙ্গে তার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় । তারপর গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রীর ‘ভক্ত’ থেকে শিষ্যা হয়ে যান তরুণী ।
তরুনী জানিয়েছেন,ওই বছরের জুন মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা এলাকায় প্রবচন শোনাতে যান গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী । সেখানেই তরুনীকে তিনি দীক্ষা দেন । আজীবনের দায়িত্বভার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘সাধনসঙ্গী’ করার জন্য তিনি তরুনীকে রাজিও করিয়ে ফেলেন । আর তার এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে মারাত্মক ভুল করে বসেন তরুনী৷ তরুনীর অভিযোগ যে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে দিনের পর দিন ধরে ধর্ষণ করে যাচ্ছিল ওই গুরুজী । কিন্তু কয়েক মাস পর থেকেই তরুনীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে । এমনকি যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী তরুনীকে অপমানজনক কথাবার্তা বলত । লজ্জায় ঘেন্নায় গত জুলাই মাসে তরুণী গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন । কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান । তবে দীর্ঘদিন হাসপাতালে তাকে চিকিৎসাধীন থাকতে হয় । কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর গত ২০ জুলাই তিনি মঙ্গলকোট থানায় গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন । পুলিশ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার( বিএনএস) অধীনে ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রতারণা, অপমানসূচক কথাবার্তা বলা ইত্যাদি একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করে । গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন গোবিন্দ বল্লভ শাস্ত্রী। কিন্তু বিচারক তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন ।মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনের ওই গুরুজী । আজ আদালতের মাধ্যমে তাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ।।