এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),৩০ এপ্রিল : সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেমিকার ব্লাকমেলিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ভাগিরথীতে মরনঝাঁপ দিল প্রেমিক । বাঁচাতে গিয়ে নদীর স্রোতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তার এক বন্ধু । এক পরিচিত যুবক তার প্রাণ বাঁচালেও প্রেমিকের কোনো সন্ধান করতে পারেননি তিনি । মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের মরিঘাটে । আজ বুধবার সকাল থেকে নিখোঁজ প্রেমিক সম্রাট বিশ্বাসের (১৮) সন্ধানে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের বাহিনী । কিন্তু বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ তরুণের কোনো সন্ধান মেলেনি বলে জানা গিয়েছে ।
জানা গেছে,কাটোয়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লী এলাকায় বাড়ি সম্রাট বিশ্বাসের । বছর পাঁচেক আগে মারা গেছেন তার বাবা বুদ্ধদেব বিশ্বাস ।দিদি পিঙ্কি বিশ্বাসের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা সারথীদেবী। কাটোয়ার নিচুবাজারে একটি জুতোর দোকানে কাজ করতেন সম্রাট বিশ্বাস ।দিদি পিঙ্কিদেবী বলেন,’আমার ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতার কোনও একটি মেয়ের প্রেম ছিল। শুনেছি ইনস্ট্রাগামে পরিচয় হয়। তবে মেয়েটা ভাইয়ের কাছে প্রায়ই টাকাপয়সা চাইত। ভাইকে ব্লাকমেইল করত। ভাই অনলাইনে টাকা পাঠাতে বাধ্য হত।’ তার জেরেই ভাই সম্রাট গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ তার ।
জানা গেছে,সম্রাটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কটোয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেলতলার বাসিন্দা গণেশ রাজবংশী একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। দোকানের ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুই বন্ধু মিলে মরিঘাটে ভাগীরথীর ধারে বেড়াতে আসার অভ্যাস । মঙ্গলবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি৷ গণেশের কথায়,’আমরা নদীর পাড়ে পায়চারি করতে করতে নিজেদের স্মার্টফোন ঘাঁটছিলাম । সম্রাট ওর প্রেমিকার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল । ফোনের স্পিকার অন করে রেখেছিল সম্রাট । তখন শুনতে পাই সম্রাটের প্রেমিকা ওকে বলছে,’তুমি গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে মরো।’ এই কথা শোনার পরেই মোবাইলটি পাড়ে নামিয়ে রেখে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয় সম্রাট ।
জানা গেছে,বন্ধুকে নদীতে ঝাঁপ দিতেই গণেশ চিৎকার করে লোকজন ডাকাডাকি করে । কিন্তু রাত অনেকটা হওয়ায় তখন আশপাশে কেউ ছিল না । ঘাট থেকে একটু দূরে ছিলেন কাটোয়ার সুকান্তপল্লীর বাসিন্দা অনির্বাণ দাস(২২) নামে এক যুবক। তিনি গণেশের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন । তার আগেই বন্ধুকে বাঁচাতে গনেশ নিজের মোবাইল ফোন পাড়ে নামিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন । কিন্তু গণেশও তলিয়ে যান । যদিও অনির্বাণ সাঁতার কেটে তাকে জাপটে ধরে পাড়ে তুলে আনেন । অনির্বাণ বলেন,’সম্রাটের দুটো হাত নদীর জল উপরে কয়েকবার উঠতে দেখেছি। সাঁতার কেটে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু সে অনেকটা দূরে চলে যাওয়ার পর আর দেখতে পেলাম ।’ সম্রাটের প্রাণ বাঁচাতে না পেরে চরম আফসোস করছেন তিনি । এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন সম্রাটের মা মা সারথীদেবী । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা । যদিও এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত এনিয়ে থানায় নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে ।।