দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৪ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার রোণ্ডা গ্রামের
রূপা দাস নামে এক গৃহবধুকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছিল ২০১২ সালে । এই মামলায় স্বামী,শ্বাশুড়ি, জা ও খুড়শ্বশুরকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল কাটোয়া দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালত । বুধবার এই সাজা শোনান বিচারক মধূছন্দা বোস । কারাদণ্ডের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্তদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেন বিচারক । সাজাপ্রাপ্তরা হলেন নিহত বধুর স্বামী সমীর দাস, শাশুড়ি পদ্ম দাস, খুড়শ্বশুর তরুণ দাস এবং জা রীনা দাস । সাজা ঘোষণার পর নিহত বধুর বাবা সমর দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এতদিন পর আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে । তবে আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা শোনালে আরও খুশি হতাম ।’
আদালত ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,কাটোয়ার দাঁইহাটের গোপখাজি এলাকার বাসিন্দা সমর দাসের মেয়ে নিহত রূপা দাস । ২০১০ সালে রোণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন দাসের ছেলে সমীর দাসের সঙ্গে তাঁর দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল । ২০১২ সালের ১১ ফ্রেবুয়ারি রাতে শ্বশুরবাড়িতে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন রূপাদেবী । তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । আটদিন পর রূপাদেবীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলে মেয়েকে নিজের কাছে রাখেন সমরবাবু । কিন্তু ওইবছর ২৫ ফ্রেবুয়ারি মারা যান রূপা । আর এরপরেই সমরবাবু মেয়ের স্বামী সমীর দাস, শ্বশুর অর্জুন দাস, শাশুড়ি পদ্ম দাস,খুড়শ্বশুর তরুন দাস ও জা রীনা দাসের বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় এফআইআর দায়ের করেন ।
মৃতার বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে মেয়ে জানিয়ে গিয়েছিল ঘটনার দিন সন্ধ্যায় স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় । তারপর সে কোনও রকমে মুখ থেকে কাপড় বের করে চিৎকার করতে শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে । তখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যায় । এরপর প্রতিবেশীরাই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ।
নিহত বধুর বাবা সমর দাস পুলিশকে জানান,বিয়ের সময় পাত্রপক্ষের চাহিদা তিনি মতো তিন ভরি সোনার গহনা, ৯০ হাজার টাকা, একটি সাইকেলসহ বিভিন্ন দানসামগ্রী দিয়েছিলেন । কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বাপের বাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্য মেয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন । মেয়ের শ্বশুরবাড়ির চাহিদামত তিনি ধারদেনা করে ১০ হাজার টাকা তখন দিয়েছিলেন । কিন্তু তার কিছুদিন পর ফের ১০ হাজার টাকা আনার জন্য তারা চাপ দিতে থাকে । কিন্তু তাঁর মেয়ে টাকা আনতে অস্বীকার করে । আর সেই অপরাধেই তাঁর মেয়েকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয় জামাইসহ বাকিরা ।
জানা গেছে,মৃতার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । ধৃতদের আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতে পাঠানো হয় । তবে তারা সকলেই ৪২ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে যায় । এরপর ২০১২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল পুলিশ । ইতিমধ্যে নিহত রূপা দাসের শ্বশুরের মৃত্যু হয় ৷ মঙ্গলবার বাকি অভিযুক্তদের দোষী সব্যস্ত করা হয় । এদিন সাজা ঘোষণা করেন বিচারক । দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর দোষীরা সাজা পাওয়ায় খুশি নিহত বধুর বাপের বাড়ির লোকজন ।।