দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৩ জুলাই : কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধুকে কুপিয়ে খুনের মামলায় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল কাটোয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত । বুধবার বিচারক সুকুমার সূত্রধরের এজলাসে এই সাজা ঘোষণা করা হয় । যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামি নেপু মণ্ডলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা,অনাদায়ে অতিরিক্ত একবছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ।
জানা গেছে,দাঁইহাট মেটিয়ারিঘাট এলাকায় বাড়ি অভিযুক্ত নেপু মণ্ডলের । একই এলাকার বাসিন্দা চঞ্চলা রাজোয়ার(৪০) নামে এক গৃহবধুকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত নেপু । এই খুনের মামলার সরকারপক্ষের আইনজীবী সরোজ দাস বুধবার রায় ঘোষণার পর বলেন, ‘কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই বধূকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল নেপু মণ্ডল । আদালত যথাযথ বিচার করেছেন । নিহতের পরিবার সুবিচার পেলেন ।’
পরিবার সুত্রে জানা গেছে, নেপু মণ্ডল নিহত চঞ্চলা রাজোয়ারদের পূর্ব পরিচিত । বাড়িতে যাতায়াতও ছিল তাঁর । আর সেই সুযোগে চঞ্চলাদেবীকে সে কুপ্রস্তাব দিত বলে অভিযোগ । কিন্তু চঞ্চলাদেবী তা প্রত্যাখ্যান করতেন । খুনের ঘটনার দু’দিন আগেও বধুর বাড়িতে গিয়েছিল নেপু । তখন পরিবারের লোকজন তাকে তাড়া করে । কিন্তু ছুটে পালিয়ে যায় সে । এরপর ২০১৩ সালের ২২ জুন নৃসংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়ে দেয় নেপু ।
জানা গেছে,এই খুনের মামলায় ২০১৩ সালের ৩১ আগষ্ট আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল কাটোয়া থানার পুলিশ । সাক্ষী ছিল মোট ১৬ জন । কিন্তু ১২ জন সাক্ষী দেয় । তার মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনজন মহিলা । তাঁরা হলেন কলাবতী চৌধুরী, সুমিতা রাজোয়ার ও রথ রাজোয়ার । তিনজনই নিহত চঞ্চলা রাজোয়ারের প্রতিবেশী এবং তাঁর সঙ্গে জনমজুরির কাজ করতেন । ওই তিন মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন চঞ্চলাদেবীসহ তাঁরা চারজন মিলে মাঠে কাজে যাচ্ছিলেন । সেসময় মাঠে পাটজমির ভিতরে লুকিয়ে ছিল নেপু । তাঁরা কাছাকাছি আসতেই সে পাটখেত থেকে বেড়িয়ে আসে । এরপর সে চঞ্চলাদেবীকে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় ।
জানা গেছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চঞ্চলাদেবীর । এই ঘটনায় মৃতার ছেলে মাধব রাজোয়ার কাটোয়া থানায় নেপু মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রজু করেছিলেন । অভিযোগ দায়েরের দু’সপ্তাহের মধ্যেই পুলিশ তাকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পাকড়াও করে আনে । মঙ্গলবার নেপু মণ্ডলকে দোষী সব্যস্ত করেছিল আদালত । বুধবার সাজা ঘোষণা হয় । দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর অবশেষে দোষীর সাজা ঘোষণা হওয়ায় খুশি নিহত বধুর পরিবার ও পরিজন ।।