এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৩ : দিন দুয়েক আগে ছেলে রোগে মারা গেছেন । শরীরে পচন ধরে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে । অথচ একই ঘরে বসবাস করেও টেরই পেলেন না ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ মা ! আজ বুধবার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা জানতে পেরে ঘরে গেলে যুবকের পচন ধরা দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে । এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া এলাকায় । খবর পেয়ে কাটোয়া থানার পুলিশ আজ দুপুরে গিয়ে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম বুদ্ধদেব রায় (৪২)।চিকিৎসকদের সন্দেহ অন্ততঃ দেড় দুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের । আরও মর্মান্তিক ঘটনা হল যে বুদ্ধদেববাবুর মা শান্তিলতাদেবী যথারীতি নিজের ও ছেলের জন্য দুপুরের রান্না করছিলেন ।
জানা গেছে,শান্তিলতাদেবীর স্বামী মদনমোহন রায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী ছিলেন । কেতুগ্রামের কাঁদরার বাসিন্দা মদনমোহনবাবু কর্মরত অবস্থায় মারা যান । তাদের তিন ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের কেতুগ্রামেই বিয়ে হয়েছে । বড় ছেলে দীপক রায় বাবার চাকরিটি পান । বর্তমানে তিনি কাটোয়া হাসপাতালে গ্রুপ ডি কর্মী। দীপক বিবাহিত এবং পরিবার নিয়ে আবাসনে থাকেন । মদনমোহনবাবুর ছোট ছেলে সৌমেন কাঁদরায় বাড়িতে থাকেন। মেজো ছেলে বুদ্ধদেব অবিবাহিত ছিলেন এবং মোটর সাইকেল গ্যারেজের মেকানিকের কাজ করতেন ৷ কাটোয়া শহরে সর্দারপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে মাকে নিয়ে থাকতেন তিনি । শান্তিলতাদেবীর পেনশন ও ছেলের রোজগারে দু’জনের খরচখরচা চলত ।
দীপক রায় জানান, তার অশিতিপর মা শান্তিলতাদেবী বয়সের কারণে কিছুটা মানসিক রোগে আক্রান্ত। তার মেজো ভাই এক সপ্তাহ ধরে তাঁর ভাই টাইফয়েডে ভুগছিলেন । তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু আজ তার মা আবাসনে এসে জানান যে বুদ্ধদেব খুব অসুস্থ। একথা শুনে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখেন বুদ্ধদেবের দেহ বিছানায় পড়ে রয়েছে এবং দেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ।
জানা গেছে,কাটোয়া শহরের সর্দারপাড়ায় একটা দোতলার বাড়িতে শান্তিলতাদেবীরা ভাড়া থাকতেন। বাড়ির উপরতলায় একটি ছোটখাট মেস রয়েছে । নিচের তলায় একটি ঘরে বুদ্ধদেব ও তাঁর মা ভাড়া থাকতেন । পাশাপাশি ঘরে অন্য একটি পরিবার ভাড়া থাকেন। মেজো ছেলের অসুস্থতার খবর বড় ছেলের পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও জানান শান্তিলতাদেবী। সকলে আসার পর যুবকের দেহটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু চিকিৎসকরা জানান অন্তত দেড় দুই দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে তার । তবে ছেলে মারা গিয়েছে জানতেন না শান্তিলতা দেবী। এদিনও তিনি যথারীতি দু’জনের জন্য দুপুরেত রান্না করেছিলেন । এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে ।।

