এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১২ নভেম্বর : বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের হতাশায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন দ্বাদশ শ্রেণীর এক মেধাবী ছাত্রী । মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার দাঁইহাট শহরের বকুলতলা এলাকায় । মৃত ছাত্রীর নাম তৃষিতা চক্রবর্তী (১৮) । দাঁইহাট গার্লস হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তৃষিতা । সোমবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগায় মেয়েটি । প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন । তবে মেয়ের এই মর্মান্তিক পরিণতির পরেও মৃতার মা তনুকা চক্রবর্তীকে হাসপাতালে দেখা যায়নি । অবশ্য উপস্থিত ছিলেন মৃতার বাবা তরুণ চক্রবর্তী । তরুণবাবু তার প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়ের উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলেছেন । যদিও এনিয়ে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানার কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,তরুণ চক্রবর্তী কাটোয়ার মাকালতোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । দাঁইহাটের বকুলতলার তার শ্বশুরবাড়ি । চলতি বছরে স্ত্রী তনুকার সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় । তারপর থেকে দাঁইহাটের বকুলতলায় মা শর্বানীদেবীর সঙ্গে বাপেরবাড়িতে থাকছেন তনুকা । তাদের একমাত্র মেয়ে তৃষিকা তার মায়ের কাছেই থাকতেন । বিচ্ছেদের আগে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছিলেন তরুণবাবু । বিচ্ছেদের পর তিনি অন্যত্র থাকতে শুরু করেন । অবশ্য বিচ্ছেদের পরেও বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তৃষিকার ।
কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের কারন কি ?
এই প্রসঙ্গে তরুণ চক্রবর্তীর দাবি, করোনা পরিস্থিতির সময় তনুকার শরীরের ওজন কমে যাওয়ায় তিনি আয়ূর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্রে যাতায়াত শুরু করেন৷ আর তখনই পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল তনুকা । এনিয়ে বাড়িতে নিয়মিত অশান্তি হলে তারা দু’জনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন । এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে তারা আদালতে আবেদন করেন । অবশেষে চলতি বছরের ৪ জুন তাদের আইনত বিচ্ছেদ হয়ে যায় ।
জানা যায়,তৃষিকা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী বলে পরিচিত এলাকায় । পড়াশোনার পাশাপাশি সঙ্গীত,নৃত্য এবং আবৃত্তিতে পারদর্শী ছিলেন । ওইসমস্ত বিষয়ে প্রতিযোগিতায় একাধিকবার পুরষ্কারও জিতেছেন। কিন্তু তিনি বাবা-মায়ের বিচ্ছেদকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি । মায়ের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হত । তবে শুধু তৃষিকা নন,মেয়ের বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি তনুকার বৃদ্ধা বিধবা মা শর্বানীদেবীও । এনিয়ে মেয়ের সঙ্গে তার অশান্তিও হত । আর সেই অশান্তির জেরে কেতুগ্রামে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা । তরুণবাবুর অভিযোগ যে তার প্রাক্তন স্ত্রী তনুকাদেবীর মানসিক নির্যাতনের কারণেই তার মেয়ে তৃষিকা চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে । যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে তনুকাদেবীর কোনো মতামত পাওয়া যায়নি । কিন্তু একমাত্র সন্তানের মুখ শেষ বারের মত দেখতে না আসায় ওই মহিলার মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । এদিকে একজন মেধাবী ছাত্রীর এই প্রকার মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায় ।।