এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,২৮ মে : হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে গাড়ি চালকদের কাছে জোর করে টাকা আদায় করছে তালিবান জঙ্গিরা । তালিবান জঙ্গিদের এই প্রকার তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের গাড়ি চালকরা । গাড়ি চালকরা জানিয়েছেন, তালিবান প্রশাসনের অধীনে কাবুল পৌরসভা ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে প্রতিদিন গাড়ির চালকদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৬০ আফগানি আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট লোককে নিয়োগ করা হয়েছে । ওই সমস্ত লোকেদের হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তাক করে ধরে গাড়ি চালকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ । এমনকি টাকা না দিলে গুলি করে প্রাণে মারার হুমকির পাশাপাশি জনবহুল ও পাবলিক স্টেশন দিয়ে গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না বলে শাসানো হচ্ছে ।
কাবুল শহরের ট্রাক চালক আসাদুল্লাহ বলেন,’আমি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গাড়ি চালানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত । কিন্তু এর আগে আমি এমন পরিস্থিতির মধ্যে কখনো পড়িনি । তালিবানরা আমাদের কাপড় দেয় এবং বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৬০ আফগান নিয়ে নেয় । তালিবান আসার পর প্রথম দিকে আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৫ আফগানি চার্জ করা হত । তারপর তারা সেটা বাড়িয়ে ৩০ এবং ৫০ আফগানি করে । এখন তারা ট্রাক পিছু ৬০ আফগানি করে তুলছে । আল্লাহ করুন এর চেয়ে বেশি চার্জ যেন আর না করে তারা । তা হলে আমাদের কাজ চলে যাবে ।’ তিনি জানান, গাড়ির ট্যাক্সের খরচ বাদ দিয়ে তিনি দিনে ১৫০ থেকে ২০০ আফগানি আয় করেন, যা তার পরিবারের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট নয় । এর উপর তালিবানের তোলাবাজিতে চরম সঙ্কটে পড়েছেন তারা ।
কাবুল শহরের বাস চালক আহমেদ গাড়ির চালকদের কাছ থেকে তালিবানের টাকা নেওয়াকে চালকদের প্রতি অবিচার হিসেবে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন,’একদিকে কাজ নেই, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি চরমে পৌঁছেছে। আমাদের দৈনিক আয়ের অর্ধেক তালিবানদের দিতে হচ্ছে । এটা চরম অন্যায়।’ তিনি আরও বলেন,’আগের সরকারে আমি পাঁচ-ছয় পীরকে সওয়ারী হিসেবে নিতাম, কিন্তু এখন দুই পীরের বেশি হয় না ।’
অন্যদিকে তালিবানরা গাড়ির ধরন অনুযায়ী যাত্রীবাহী গাড়ির যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে । কাস্টার গাড়িতে প্রতিটি যাত্রীর ভাড়া ৫ আফগানি, তিউনিস ও মার্সিডিজ ১০ আফগানি এবং ট্যাক্সি ২০ আফগানি । আহমদ এই সম্পর্কে বলেন,’এই সরকারের কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই । তেলের দাম বাড়লে বা কমলে তারা আমাদের গাড়ি ভাড়া পরিবর্তন করতে দেয় না ।’
কাবুলের প্রাইভেট কারের চালকরা বলছেন, পৌরসভা প্রতি মাসে প্রাইভেট কার থেকে প্রায় ছয় মিলিয়ন আফগানি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু বিনিময়ে কোনো পরিষেবা দেয় না। তালিবান মিউনিসিপ্যালিটি এখনও ব্যাখ্যা করেনি যে কত টাকা সংগ্রহ করা হয় এবং কীভাবে তা ব্যয় করা হয়। তালিবানের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে, কাস্টার গাড়িগুলিকে দৈনিক ৬০ আফগান দিতে হবে । মার্সিডিজ, তিউনিস এবং লাইন ট্যাক্সিগুলিকে পাবলিক স্টেশন থেকে রাইড নেওয়ার বিনিময়ে প্রতিদিন ৪০ আফগান দিতে হবে ।
গাড়ি চালকদের দাবি,তালিবানরা চাঁদাবাজি না করে দিয়ে নাগরিকদের যথাযথ পরিষেবা দিক । মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের দরজা খুলে দিক । তাতে শহরে যাত্রী বাড়বে এবং তাদের ব্যবসারও উন্নতি হবে ।
প্রসঙ্গত,আফগানিস্তানে তালিবান শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে নাগরিকদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে । বেকারত্ব ও দারিদ্র্য সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে । তালিবানরা নিজেদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এর আগে দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ব্যবসায়ীরা আয়কর চার থেকে ছয় গুণ বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। তাদের আরও অভিযোগ যে পৌরসভা প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ।
আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের প্রায় দুই বছরের মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ নাগরিক দু’বেলার দু’মুঠো অন্ন সংস্থান করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে । জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান এইড (ওসিএইচএ) এর রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় ৮০ শতাংশ আফগান নাগরিক কম আয় জনিত সমস্যার সম্মুখীন,২০ মিলিয়ন মানুষ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন এবং আরও ৬ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন ।।