পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএমের ‘মহান কমরেড’ প্রয়াত জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি রয়েছে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামে। শৈশবের কিছুটা সময় কাটে এই গ্রামের বাড়িতেই কাটে জ্যোতি বসুর । অযন্ত-অবহেলায় যখন বাড়িটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তখনই (২০২৩ সালে) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি পড়ে এ বাড়িটিতে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক নিবাসে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় । কিন্তু তার আগেও ৩ মুসলমি পরিবার বাড়ির একাংশ দখল করে বসবাস শুরু করে৷ তারা এখনো সেই বাড়িতেই বসবাস করছে বলে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল বাংলাদেশের সংবাদপত্র দৈনিক জনকণ্ঠ । বর্তমানে বাংলাদেশের কট্টর ইসলামি শাসনে জ্যোতি বসুর পৈতৃক বাড়ি ঠিক কি অবস্থায় আছে তা স্পষ্ট নয় ।
তখন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল,শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে ২.৪ একর জমির ওপর বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য জ্যোতি বসুর বাড়ির মূল ভবনের উত্তর পাশে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট একটি মোটেল, রেস্টুরেন্ট, জ্যোতি বসুর স্মৃতি কর্নার, পিকনিক স্পট, গাড়ি পার্কিং, ভূমি উন্নয়নসহ চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। এটি চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহম্মদ মোকাম্মেল হোসেন উদ্বোধন করে বারদী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেন । তা ছাড়া জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়িতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট গ্রন্থাগার, সেমিনার কক্ষ ও জ্যোতি বসুর স্মৃতি জাদুঘর গড়া হয় বলেও জানানো হয় ।
বারদী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের জ্যোতি বসুর দ্বিতীয় মূল ভবনটির দেওয়ালে সাঁটানো নামফলক থেকে জানা যায় ১৩২৯ বাংলা সনের ১৩ অগ্রহায়ণ পাচু ওস্তাগরের মাধ্যমে দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটির নিচ তলায় দুটি শোবার ঘর ও একটি বৈঠকখানা, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুটি শয়ন ঘর ও একটি ব্যালকনি। বর্তমানে তিনটি মুসলিম পরিবার বাড়িটি দখল করে বসবাস করছে। এতে মূল ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ওই পত্রিকাটি জানায় । ভেঙে পড়ছে ছাদের ঢালাই, জানালা, দরজা, খসে পড়ছে দেওয়ালের প্লাস্টার, হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িটির মূল সৌন্দর্য।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জ্যোতি বসু। উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও ‘বামপন্থি রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ’ জ্যোতি বসুর বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও দুর্বলতা ছিল সবসময়। ভারতের প্রখ্যাত বাম রাজনীতিক ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই কলকাতার ৪৩/১ হ্যারিসন রোডের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে বাংলাদেশে তার পৈত্রিক ভিটা সোনারগাঁ উপজেলার বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামে। তার পিতা ডাঃ নিশিকান্ত বসু বারদী চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সেই সুবাদে জ্যোতি বসুর ছোটবেলার অনেকটা সময়ই কেটেছে বারদীর পৈত্রিক বাড়িতে। ১৩২৯ বাংলা সালের ১৩ অগ্রহায়ণ পাচু ওস্তাগারের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয় বাড়িটি। ২ একর ৪ শতক বাড়িটি মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি দ্বিতল ভবন, বাড়িটিতে একটি পুকুর ও একটি কূপ। এ ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল ও তালসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ। খাবার জলের জন্য জ্যোতি বসুর পরিবার যে কূপ ব্যবহার করতেন সেটি এখন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জ্যোতি বসুর পিতা ডাঃ নিশিকান্ত বসু ছিলেন প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।পেশাগত কারণে তিনি জ্যোতি বসুর জন্মের আগেই বারদী থেকে কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি চিকিৎসা পেশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুযোগ পেলেই তিনি সপরিবারে বেড়াতে আসতেন বারদীর চৌধুরীপাড়ায় নিজ বাড়িতে। সেই সুবাদে সোনারগাঁয়ে বারদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জ্যোতি বসুর শৈশবের অনেক স্মৃতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,জ্যোতি বসুর এই বাড়িটি মূলত তার দাদুর ছিল। জ্যোতি বসুর দাদু শরৎ চন্দ্র দাস ও ঠাকুমা খিরদা সুন্দরীর সংসারে জ্যোতি বসুর মা হেমলতা বসুই ছিলেন একমাত্র সন্তান। সেই সূত্রে এই বাড়ির মালিক হন হেমলতা বসু। ডাঃ নিশিকান্ত বসুর সঙ্গে হেমলতা বসুর বিয়ের পর স্ত্রীর সুবাদে এই বাড়িটির মালিক হন জ্যোতি বসুর পিতা। ডাঃ নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা বসুর সংসারে তাদের তিন সন্তান সুরেন্দ্র কিরণ বসু, জ্যোতি বসু ও মেয়ে সুধা বসু। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জ্যোতি বসু ১৯৮৭ সালের ২০ জানুয়ারি এবং ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর স্ত্রী বাসন্তি ঘোষ ওরফে কমলা বসু ও তার ছেলে চন্দন বসুকে সঙ্গে নিয়ে বারদীতে তার পৈত্রিক বাড়িটি দেখতে আসেন। ১৯৮৭ সালে জ্যোতি বসুর সঙ্গে বারদীতে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে জ্যোতি বসুর সঙ্গে বারদীতে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। সে সময় ভারত থেকে জ্যোতি বসুর সঙ্গে আসেন পশ্চিমবঙ্গের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসুর দাদা ডাঃ সুরেন্দ্র কিরণ বসু এবং বোন সুধা বসুও।
জন্মের পর জ্যোতি বসুর নাম নির্ধারণের পূর্বে প্রথমে জ্যোতিন্দ্র এবং পরে রথীন্দ্র রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার পিতা ডাঃ নিশিকান্ত বসু তাকে লরেটা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তির সময় জ্যোতি বসু নাম রাখেন। কিন্ডারগার্টেনের পড়া শেষ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর লন্ডন গিয়ে জ্যোতি বসু বার ‘এট ল’ পাস করে ১৯৪০ সালে কলকাতা ফিরে আসেন এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারি বাসন্তি ঘোষ ওরফে কমলা বসুর সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। ১৯৪৬ সালে তিনি রাজ্য পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি পলিটব্যুরো সদস্যসহ ১৯৪৬ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ সালে জ্যোতি বসু যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট দলের সদস্য হিসেবে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে ২০০০ সালের ৬ নবেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর সাফল্যের সঙ্গে একটানা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেন। জ্যোতি বসু ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে । ২০০০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে দলের অন্যতম সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় জ্যোতি বসু তার এই পৈত্রিক বাড়িটি গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আগ্রহে জ্যোতি বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করার ঘোষণা করেন । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগারের নির্মাণ কাজ শুরু করে। যার প্রথম তলায় রয়েছে পাঠাগার কক্ষ, মহাফেজখানা ও শৌচাগার।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু এই মহান রাজনীতিবিদ ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন। ছোট বেলায় জ্যোতি বসু মা হেমলতা বসু মারা যাওয়ার পর থেকেই তার পৈত্রিক বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে জ্যোতি বসুকে দেখাশোনা করতেন আয়াতুন নেছা বিবি নামের এক মহিলা। পরবর্তীতে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় আয়াতুন নেছা বিবিকে। বর্তমানে আয়াতুন নেছা বিবির ছেলে হাবিবুল্লার ও শহিদুল্লাহর ওয়ারিশরা এ বাড়িটি দখল করে বসবাস করছেন। জ্যোতি বসুর বাড়িতে যাওয়ার পথও বন্ধ । বসবাসের কারণে বাড়িটির মূল সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সংস্কার করে বাড়িটির আদিরূপ ফিরে আনতে না পারলে জ্যোতি বসুর স্মৃতি বারদী থেকে হারিয়ে যেতে পারে। আয়াতুন নেছা বিবির নাতি দেলোয়ার হোসেন জানান, জ্যোতি বসুর মা মারা যাওয়ার পর আমার দাদি আয়াতুন নেছা বিবি জ্যোতি বসুকে লালন পালন করত। জ্যোতি বসুর পিতা ভরতে চলে যাওয়ার আগে আমার দাদি আয়াতুন নেছা বিবি ও আমার বড় চাচা হাবিবুল্লাকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছে থাকার জন্য। সে সূত্রে আমরা ওয়ারিশ হিসেবে বসবাস করছি।
বাংলাদেশের তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ তখন ওই সংবাপত্রটিক্স বলেছিলেন, জ্যোতি বসু ভারতের তথা উপমহাদেশের একজন কিংবদন্তী রাজনীতিবিদ। তিনি ব্যারিস্টারি পাশ করে সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতির জগতে আসবেন। তিনি বিলেতে পড়াকালীন কমিউনিস্ট শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছিলেন। দেশবিভাগের আগে তিনি ইংল্যান্ডে ছিলেন । সে সময় জওহরলাল নেহরু একবার লন্ডনে যান। তখন তিনি জওরলাল নেহরুকে বলেছিলেন, ভারতে সমাজতন্ত্র কায়েম করুন। তখন জওহরলাল নেহরু তাঁকে বলেছিলেন,’আগে ভারতবর্ষ স্বাধীন হোক, তারপর আমরা ভারতে সমাজতন্ত্র কায়েম করার ব্যাপারে ভেবে দেখব ।’ আসলে ইংল্যান্ডে পড়ার সময়ই তিনি সমাজতন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তাই ভারতে ফিরে আইন পেশা নয়, রাজনীতিকেই পেশা হিসাবে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি হচ্ছে একটা ব্রত। সমাজ পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি হচ্ছে একটা ব্রত। আজকালকার অনেক রাজনীতিবিদ এটা জানেন না, মনেও করেন না। অনেক রাজনৈতিক দলও সে আদর্শ লালন করে না।
তার কথায়,জ্যোতিবাবু কিন্তু রাজনীতিকে ব্রত হিসাবে নিয়েছিলেন । ১৯৪৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তিনি প্রথম নির্বাচিত হন। জ্যোতিবাবু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ। বিরোধী দলের বিধায়ক থাকাকালীন তিনি বিধানসভায় জমিদারি প্রথা বিলোপের কথা বলেছিলেন। যখন প্রশ্ন আসল, বাংলার মুসলমানরা কেন দলে দলে অসমে যাচ্ছে, তখন তিনি বলেছিলেন যে, জমিদারদের অত্যাচারে বাংলার মুসলমানরা অসমে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি বলেছিলেন, সাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমিদারি প্রথা বিলোপ করা প্রয়োজন। কমিউনিস্ট পার্টি যখন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। দীর্ঘদিন তিনি বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি পশ্চিমবাংলায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন রাশিয়ায় কমিউনিস্ট শাসনের পতন হল, তখনও তিনি পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিজমের পতাকা উড্ডীন রেখেছিলেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের জন্য তিনি অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন।
ড: মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশের তিনি বিশেষ সুহৃদ ছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করেন, তখন জ্যোতি বসু ঢাকায় এসেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে তাঁদের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়েছিলেন। ছোটবেলায় তাঁকে যে মহিলা কোলে নিয়ে ঘুরতেন, সেই মহিলা তখনও বেঁচেছিলেন, শতবর্ষী। তাঁকে আদর করেছিলেন, ‘আমার জ্যোতি’ বলে। জ্যোতিবাবু ভারতে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরেই সেই মহিলা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। জ্যোতি বসুর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে মেশার সৌভাগ্য আমার হয়নি। কিন্তু আমি যেটুকু জেনেছি জ্যোতি বসু সম্পর্কে, তা হল তিনি বাংলাদেশের একজন বিশেষ সুহৃদ ছিলেন।
তিনি বলেছিলেন,গঙ্গার জলচুক্তি নিয়ে আমরা জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করেছিলাম যে গঙ্গার জলের ব্যাপারে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেছিলেন, গঙ্গার জলের ওপর বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার আছে। গঙ্গার জল বাংলাদেশের পাওয়া উচিত। সেটাই ছিল ভারতের কোনও রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আমাদের প্রতি সমর্থন।।