জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জি,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২১ ফেব্রুয়ারী : এ গ্রামে আধুনিকতার লেস মাত্র নেই । নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কঠিন জীবন সংগ্রাম করতে হয় গ্রামবাসীদের । বাড়ি ঘরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দারিদ্র্যের ছোঁয়া । কিন্তু এলাকাটাকে গাছ-গাছালির অপরূপ পরিবেশে ভরিয়ে তুলেছে প্রকৃতি । প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছওয়ায় থাকতে থাকতে কখন যেন শিল্পী সত্তায় ভরে উঠেছে গ্রামের মহিলা পুরুষদের মন । আর সেই শিল্পী সত্তার প্রতিফলন ঘটেছে তাদের পর্নকুঠির গুলির দেয়ালে দেয়ালে । চারপাশে দেখা প্রকৃতির রূপ নিজেদের ছোট্ট বাড়িগুলির দেওয়ালে দেওয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন তারা । সেই কারণে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের জঙ্গল সুন্দরী বলে পরিচিত দেবশালা অঞ্চলের বড়ডোবা মৌজার অখ্যাত লবনধার গ্রাম পরিচিত হয়ে হয়ে উঠেছে ‘ছবির গ্রাম’ বলে । আদিবাসীদের এই গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে ছবির ক্যানভাসের টানে প্রতিবছর আসে প্রচুর পর্যটক । এবার গ্রামটাকে আরো আকর্ষণীয় করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ‘লবনধার অন্নপূর্ণা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ।
গ্রামবাসীদের উদ্যোগে এবং সংস্থাটির সক্রিয় সহযোগিতায় নবরূপে সেজে উঠছে লবণধারা গ্রাম । তারা ‘অরণ্যে অন্নপূর্ণা’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছে । এই কর্মসূচির আসল উদ্দেশ্য হল ‘ছবির গ্রাম’কে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা । প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের তুলির টানে আদিবাসীদের বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে ফুটে উঠছে দেবদেবী,গাছ গাছালি, ফুলফল, বনের পশুপাখি থেকে শুরু করে মানব মানবীর চিত্র । তুলে ধরা হচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতিকেও । ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর লবনধারা গ্রাম সেজে উঠছে নবরূপে । স্থানীয় গ্রামবাসী এবং ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই প্রকার উদ্যোগ জঙ্গল সুন্দরী লবনধারা গ্রামকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
প্রসঙ্গত, তিন শতাব্দী ধরে আউশগ্রামের জঙ্গলে বসবাস করছে আদিবাসীরা । লবনধারা গ্রামের উদ্ভবের পিছনে জড়িয়ে রয়েছে একটা ইতিহাস । শোনা যায়, সেই সময় গোটা এলাকাটি ঘেরা ছিল জঙ্গলে ঘেরা । সত্তরের দশকে এলাকাটি ছিল বাম চরমপন্থী সংগঠন নকশালদের ঘাঁটি । সেই সময় আউশগ্রামের বেনাচাপড়ায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের বেশকিছু লোকজন বসবাস করতেন । নকশালদের ভয়ে তারা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন । বড়ডোবার তীরে ছিল এক বিশাল বটগাছ । বেনাচাপড়া থেকে উঠে এসে ওই বটগাছ কেন্দ্র করে একটা বসতি গড়ে তোলে তারা । আদিবাসীরা গ্রামটির নাম দিয়েছিলেন ‘নতুনগ্রাম’ বলে । কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে গ্রামটি পরিচিতি লাভ করে লবনধারা গ্রাম বলে । সেই থেকেই জঙ্গল সুন্দরী এই গ্রাম লবনধরা বলে পরিচিত হয়ে আসছে । গ্রামকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে বাড়ির দেয়াল গুলিতে ছবি এঁকে সাজিয়ে তুলতে শুরু করেন আদিবাসীরা । সেই পরম্পরা আজও চলে আসছে ।।