এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ মে : মঙ্গলবার রাতে কলকাতার জোড়াসাঁকো থানার অন্তর্গত বড়বাজারের মেছুয়াবাজার ফলপট্টি এলাকায় হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশু,মহিলাসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে । গুরুতর অসুস্থ হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন । এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজ্য সরকার, কলকাতা পুরসভা থেকে শুরু করে স্থানীয় জোড়াসাঁকো থানার পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি দাবি করেছেন, হোটেলের মালিক চাওলার সঙ্গে চিটেগুড়ের ব্যবসা করে জোড়াসাঁকো থানা । আর মুনাফার টাকা যায় কালীঘাটে । উল্লেখ্য,কালীঘাটেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাড়ি ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বড়বাজারের মেছুয়া বাজার ফলপট্টি এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায়সহ অনান্যরা । শুভেন্দু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘কলকাতার জোড়াসাঁকো থানা একটা দুর্নীতিগ্রস্ত থানা৷ স্থানীয় লোকেরা বলছে যে হোটেলের মালিক চাওলার সঙ্গে থানার চিটেগুড়ের ব্যবসা আছে। যত অবৈধ কাজ এখানে করেন । এর দমকলের লাইসেন্স নেই, এর অস্থায়ী অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই, হোটেলের প্রবেশ প্রস্থান এবং আপৎকালীন দরজা নেই । তা সত্ত্বেও তিনি এখানে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন । তার কারণ টাকার বিনিময়ে পুলিশের আশীর্বাদ আছে।’
কলকাতার পুরসভার মেয়র ও পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নিশানা
শুভেন্দু বলেন,’আর কর্পোরেশন তো ব্যস্ত । পুরসভার যিনি মেয়র তিনি ধর্মীয় সভা করতে ব্যস্ত । তিনি কখনো বলছেন দাওয়াতে ইসলাম । কখনো বলছেন ৫০ ভাগ লোক উর্দুতে কথা বলুক আমি চাই । তিনি তার কাজে ব্যস্ত । তিনি ধর্মকর্ম তে ব্যস্ত । স্বাভাবিক ভাবেই আজকের তার এগুলো দেখার সময় নেই৷ তাই কলকাতাতে ট্রেড লাইসেন্সের ফি ৪০০-৫০০ গুণ বেড়ে গেছে । হোল্ডিং ট্যাক্স ৪০০-৫০০ গুণ বেড়ে গেছে । জলের কর চাপিয়েছে । কিন্তু যে কলকাতা থেকে এত রাজস্ব পুরসভা বা রাজ্য সরকার রোজগার করে,যে বড়বাজারে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্য হয়, একটি অর্থকরী জায়গা বহু লোকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়, সেখানে প্রত্যেকটা ভবনকে যতুগৃহ বানিয়ে রেখে দিয়েছি । যে কারণে কর্মসূত্রে কলকাতায় আসা লোকজনের পরিবারকে ১৪ টি মৃতদেহ নিয়ে ফিরে যেতে হল ।
অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যু হয় তাদের মধ্যে ১২ জনকে চিহ্নিত করা গেলেও দুজনকে এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ । এ বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী প্রতিক্রিয়া হল,’পুলিশের একটাই এজেন্টা হলো টাকা রোজগার করা। কারণ এদের মুখ্যমন্ত্রী হলেন চোর । মমতা চোর সবাই জানে । আর তার লোকেরা চুরি করবে ভাগ নেবে এটা স্বাভাবিক । কারণ ১০০ টাকা তুলে ৭৫ টাকা কালীঘাটে পাঠাতে হয় । ঘোষিত অবস্থান । আর এনিয়ে দমকল বিভাগ, আবগারি বিভাগ, পুরসভা এবং পুলিশ সব একসঙ্গে জড়িয়ে আছে । একসঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে এই অপকর্মগুলো করছে । পশ্চিমবঙ্গে অতিথি হয়ে আসা বাইরের লোকের রাজ্যের দেহ হয়ে যাচ্ছে, এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ এই সরকার করেছে । তারা দিঘাতে জলসায় ব্যস্ত । গান হচ্ছে, নাচ হচ্ছে কোমর দুলছে, নিরামিষ খাবারের ফোয়ারা উঠছে, সঙ্গে লাল নীল জলের ফোয়ারা উঠছে । আর এখানে মানুষকে এই অবস্থায় ফেলা হয়েছে ।’ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এর প্রতিবাদ করবে বলে তিনি জানান ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বড়বাজারের যে হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে থানা এবং দমকল অফিসের দূরত্ব খুব কম। অথচ এখানে দমকল পৌঁছাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নিয়েছে এবং হাইড্রোলিক ল্যাডার ছিলনা । আমরা শুনেছি হাইড্রোলিক ল্যাডারও সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাথে দীঘাতে ছুটি কাটাচ্ছিল । খুব দ্রুততার সঙ্গে যদি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হতো তাহলে মৃতের সংখ্যা এত বেশি হতো না। এটা প্রমাণিত সত্য । এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারীর বলেন,’কলকাতা পৌরসভার মেয়র ও পুরো মন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের একজন মন্ত্রী গত পরশু দিন এখানে এসেছিলেন কিন্তু সংবাদমাধ্যম বা বোডার্সদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হতাহতদের সংখ্যা বা কি কি পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা তারা জানাননি । তারা কিছু রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর বিশ্রাম করতে চলে যান । তিনি বলেন, পুরো সরকারটা দিঘাতে থাকার কারণে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়নি ।যেটা সাধারণত এমারজেন্সির ক্ষেত্রে করা হয় । হোটেলের বোডার্স বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মূলত দক্ষিণ ভারত, উড়িষ্যা ও বিহার সহ অন্য রাজ্যের বাসিন্দা ।’
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য সরকার মৃতদের সংখ্যা এবং পরিচয় গোপন করছিল । তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুর মাঝেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিহতদের জন্য দু লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন । তিনি এই ঘোষণা এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানান । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কোন পোস্ট দেখতে পাবেন না । কারণ তিনি ঘুমাচ্ছিলেন । এমনকি তার সরকার কোন ক্ষতিপূরণ, হেল্পলাইন নাম্বার, মৃতদেহের পরিচয় ঘোষণা করা, আহতদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য কিছুই দেয়নি ।’
মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে কলকাতায় অগ্নিকাণ্ডের পরিসংখ্যান
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,এই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে ২০১১ সাল থেকে ২০২৫ সাল অব্দি ৮ টা গুরুতর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে । যাতে শতাধিক নিরীহ মানুষ তাদের মূল্যবান জীবন হারিয়েছে । ২০১১ সালে আমরি হাসপাতাল, ২০১৮ বাগরি মার্কেট, পার্কস্ট্রিট অফিস বিল্ডিং ২০১৮, গণেশ চন্দ্র অভেনিউ বাসা বাড়িতে আগুন ২০২০ অক্টোবর, ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্ট্রান্ড রোড অফিসে আগুন, ২০২২ সালের এপ্রিলে ট্যাঙরার গুদাম ঘরে আগুন, ২০২৪ সালের জুন মাসে অ্যাক্রোপলিশ মলে আগুন এবং ২০২৫ সালের তাজা ঘটনা ঋতুরাজ হোটেলে আগুন ।’ তিনি বলেন,’এই সরকার ভাতা এবং তোষণের রাজনীতিতে ব্যস্ত । কলকাতার ঘন জনবসতিপূর্ণ জায়গাগুলোকে কার্যত যতুগৃহে পরিণত করেছে । আমরা জানি পশ্চিমবঙ্গে একটাই পোস্ট, আর সেটা হল মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার । বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট । আপনার দমকল মন্ত্রী দিঘায় ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত । তার দমকল ৪৫ মিনিট পর এসেছে । লোকগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছে । কলকাতার প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত বড় বাজারের মতো জায়গায় শুধু এই ঘটনা ঘটে তাহলে জেলা, মহকুমা বা ব্লকে যেখানে দমকল নেই সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কি অবস্থা হতে পারে সহজে অনুমেয় ।’।