এইদিন ওয়েবডেস্ক,চৌতাকুয়(নিউইয়র্ক),১৩ আগস্ট : “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস”(The Satanic Verses) -এর লেখক সালমান রুশদির(Salman Rushdie) উপর হামলা চালালো এক জিহাদি যুবক । নিউইয়র্কের গ্রামীন এলাকা বাফেলো(Buffalo) থেকে ৮৯ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনে (Chautauqua Institution) শুক্রবার সন্ধ্যায় বক্তৃতা রাখার সময় ৭৫ বছর বয়সী রুশদির উপর হামলা হয় । ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০-১৫ বার ছুরি দিয়ে হামলা চালায় ওই দুষ্কৃতী । তড়িঘড়ি লেখকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । বর্তমানে ভেন্টিলেটরে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে । তবে প্রাণে বেঁচে গেলেও লেখকের একটি চোখ, একটি কিডনি ও একটি হাতের স্নায়ূ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেখকের এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি( Andrew Wylie)। পুলিশ হামলাকারী যুবক নিউ জার্সির(New Jersey) ফেয়ারভিউ (Fairview) -এর বাসিন্দা হাদি মাতার(Hadi Matar,24) কে গ্রেফতার করেছে ।
ভারতের মুম্বাইয়ের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সালমান রুশদি । তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং উদারনৈতিক চিন্তাভাবনার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত । রুশদিকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের কট্টর সমালোচক বলে মনে করা হয় । তিনি ২০১২ সালের নিউইয়র্কে একটি বক্তৃতায় বলেছিলেন যে সন্ত্রাসবাদ আসলে ভয়ের শিল্প ৷ সন্ত্রাসবাদকে ভয় না পেয়ে একে নির্মূল করতে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বুকার জয়ী এই উপন্যাসিক ও লেখক । কিন্তু এই উদারনৈতিক মনোভাবের কারনেই ইসলামি কট্টরপন্থীদের টার্গেট হয়ে যান তিনি ।
রুশদির ১৯৮৮ সালে লেখা “দ্য স্যাটানিক ভার্সেস” উপন্যাসটিতে নবী মুহাম্মদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গোটা বিশ্বজুড়ে হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল । এই বইকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে দাঙ্গায় অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে রুশদির নিজ শহর মুম্বাইতে ১২ জনের মৃত্যু হয় । ১৯৯১ সালে বইটির একজন জাপানি অনুবাদককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল । একজন ইতালীয় অনুবাদক ছুরির আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন । ১৯৯৩ সালে বইটির নরওয়েজিয়ান প্রকাশক তিনবার গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু বরার জোরে তিনি বেঁচে যান । বইটি ইরানে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । এমনকি রুশদির বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালে মৃত্যু ফতোয়া জারি করেছিলেন প্রয়াত নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি । রুশদির মাথার দাম ৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঘোষণা করা হয়েছিল । যদিও ফতোয়া ঘোষণার বছরেই মৃত্যু হয় খোমেনি । তবে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এযাবৎ এই ফতোয়া প্রত্যাহার করেননি । তারপরেই আত্মগোপনে চলে যান রুশদি । চব্বিশ ঘণ্টা সশস্ত্র প্রহরীর নিরাপত্তার মধ্যে থাকতেন তিনি । অবশেষে দীর্ঘ ৯ বছর পর ফের তিনি জনসমক্ষে বের হন ।
এদিকে প্রতি মুহুর্তে সালমান রুশদির প্রাণহানীর আশঙ্কা থাকলেও চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনের অনুষ্ঠানে তাঁর নিরাপত্তার জন্য কেবলমাত্র একজন রাষ্ট্রীয় সৈন্য এবং একজন কাউন্টি শেরিফের ডেপুটি নিয়োগ করা হয়েছিল । স্বভাবতই এনিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।।