এইদিন ওয়েবডেস্ক,রাঁচি,২৯ মে : ভারত থেকে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করার জন্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় ৷ আর তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য সরকারকে নোটিশ জারি করে এই বিষয়ে উত্তর চেয়েছিল । কিন্তু ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস সরকারের দাবি রাজ্যে কোনও অনুপ্রবেশকারী বাস করে না । যাদের অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে তাদের কথা মানবিকভাবে বিবেচনা করা উচিত । জানা গেছে, নোটিশের জবাব না দিয়ে ঝাড়খণ্ড সরকার নিজেই পিটিশনের বিরোধিতা করেছে। ঝাড়খণ্ড সরকার যুক্তি দিয়েছে যে পিটিশনে উল্লিখিত বিপদ সঙ্কেতগুলো শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে । এর পেছনে কোনো সত্যতা নেই । পাশাপাশি নাগরিকত্বের বিষয়টি নাগরিকত্ব আইন এবং বিদেশী আইন অনুসারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে পরামর্শও দিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী,ভারতে প্রায় চার কোটি বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী বসবাস করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমরাও বিপুল সংখ্যায় বসবাস করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে । ঝাড়খণ্ডে প্রায় ১৫ লক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাস করে বলে ঝাড়খণ্ড পুলিশের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে । ২০১৮ সালে তৈরি ওই রিপোর্টে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করার কথা উল্লেখ আছে । এই কারনে পাকুড় ও সাহেবগঞ্জ সহ রাজ্যের সমস্ত জেলায় এনআরসি কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে পুলিশের ওই রিপোর্টে ।
গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় অনুপ্রবেশের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন,বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ঝাড়খণ্ডের ডেমোগ্রাফির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । গোড্ডা, পাকুর, সাহেবগঞ্জ, দেওঘর, জামতারাসহ কাটিহার, আরারিয়া, বিহারের কিষাণগঞ্জ এবং বাংলার মুর্শিদাবাদ, মালদহের জনসংখ্যা পুরোপুরি বদলে গেছে । স্বাধীনতার সময় এসব জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ শতাংশ । কিন্তু এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০ শতাংশ । কোথাও কোথাও ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে মুসলিম জনসংখ্যা । ফলে আজ সংস্কৃতি বিপন্ন,অপরাধের বৃদ্ধি হচ্ছে,স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ পাচ্ছে না । এই কারনে ঝাড়খণ্ড জেলার পাশাপাশি বিহার ও বাংলার কিছু এলাকায় এনআরসি কার্যকর করার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন নিশিকান্ত দুবে ।
ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের বিধায়ক অনন্ত ওঝার কথায়, ‘হঠাৎ করেই ঝাড়খণ্ডে ডাকাতি, খুন, ছিনতাই প্রভৃতি অপরাধ বেড়ে গেছে । এসবের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা । ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনায় উপজাতীয় সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করছে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা । আদিবাসী মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করা হচ্ছে। তাদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে । তারপর তাদের সম্পত্তি দখল করে ভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠছে অনুপ্রবেশকারীরা ।’ তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখন উপজাতীয় মেয়েদের বিয়ে করে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যন্ত করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে ।’ তা সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ড সরকার অনুপ্রবেশকারীর কথা অস্বীকার করছে না বলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । এদিকে এই পরিস্থিতির মাঝে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস সরকারের এরূপ নরম মানসিকতা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল ।।
তথ্যসূত্র পাঞ্চজন্য ।