দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যুর সত্যতা পড়লে চমকে যাবেন ! ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং সর্দার প্যাটেলকে সোমনাথ মন্দিরের জন্য ভারী মূল্য দিতে হয়েছিল । এটা সর্বজনবিদিত যে জওহরলাল নেহেরু সোমনাথ মন্দিরের পক্ষে ছিলেন না। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সম্মতিতে সর্দার প্যাটেল সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেন। প্যাটেলের মৃত্যুর পর মন্দিরের দায়িত্ব পড়ে কে এম মুন্সির ওপর। মুন্সি নেহরুর মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রী ছিলেন। গান্ধী ও প্যাটেলের মৃত্যুর পর নেহরুর বিরোধিতা আরও তীব্র হয় । এক বৈঠকে তিনি মুন্সীকে তিরস্কারও করেছিলেন । তার বিরুদ্ধে হিন্দু-পুনরুজ্জীবনবাদ ও হিন্দুত্ববাদকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগও তুলেছিলেন নেহেরু । কিন্তু, মুন্সি সাফ বলেছিলেন যে তিনি সর্দার প্যাটেলের কাজ অসম্পূর্ণ রাখবেন না।
কে এম মুন্সিও একজন গুজরাটি ছিলেন, সোমনাথ মন্দির নির্মাণের পর তিনি মারা যান। দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদকে মন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানানো হয়ন। তিনি অত্যন্ত গর্বের সাথে এই আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু জওহরলাল নেহরু যখন এটি জানতে পারলেন তখন তিনি চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি নিজে সোমনাথ যেতে অস্বীকার করে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদকে একটি চিঠি লেখেন। রাজেন্দ্রবাবুও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। নেহরুর কথা উপেক্ষা করে তিনি সোমনাথ উদ্বোধনে গিয়ে শক্তিশালী ভাষণ দেন। জওহরলাল নেহেরু এতে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিলেন। তার ইগোতে আঘাত লেগেছিল । তিনি এটাকে নিজের পরাজয় বলে মনে করেন । এদিকে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের জন্য সোমনাথ যাওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল কারণ এরপর নেহেরু তার সাথে যেভাবে আচরণ করেছিলেন তা আশ্চর্যজনক ।
সোমনাথ মন্দিরের কারণে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং জওহরলাল নেহরুর মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে ওঠে যে রাজেন্দ্র বাবুকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিলে নেহেরু তাঁকে দিল্লিতে একটি বাড়ি পর্যন্ত দেননি। দিল্লিতে থেকে রাজেন্দ্রবাবু বই লিখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু, নেহরু তাঁর প্রতি অবিচার করেছিলেন। একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদকে পাটনায় ফিরতে হয়। এমনকি পাটনায় তার নিজের বাড়িও ছিল না । টাকাও ছিল না । সেখানে প্রচুর সরকারি বাংলো ও বাড়ি থাকা সত্ত্বেও নেহেরু তাকে পাটনায় কোনো বাড়ি দেননি। ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ অবশেষে পাটনার সাদাকাত আশ্রমের একটি স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকতে শুরু করেন । ছিল না কোন পরিচর্যাকারী না ডাক্তার। তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। তিনি হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হন । সারাদিন কাশতেন । পূর্বের পদমর্যাদার কথা ভেবে একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সাহায্যের জন্য ভিক্ষাও করতে পারেননি । এদিকে রাজেন্দ্রবাবু পাটনায় আসার পর, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কী অবস্থায় বাস করছিলেন তা জানার চেষ্টাও করেননি নেহেরু ।
শুধু তাই নয়, যখন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে, তখন বিহারে কংগ্রেস পার্টি ক্ষমতায় ছিল। শেষ অবধি ডাঃ রাজেন্দ্র বাবু ভালো স্বাস্থ্য সুবিধা পাননি। তার সাথে চরম উদাসীন আচরণ করা হয়। যেন কারো নির্দেশে এসব ঘটছে। তিনি কাশিতে খুব কষ্ট পেতেন। তার কাশির উপসর্গ সারাতে পারে এমন একটি মেশিন ছিল পাটনা মেডিকেল কলেজে । সেই মেশিনটাও দিল্লিতেও পাঠিয়ে দেওয়া হয় । তার মানে রাজেন্দ্রবাবুকে হত্যার জন্য সম্পূর্ণ ও কঠিন ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
একবার জয়প্রকাশ নারায়ণ সাদাকাত আশ্রমে আসেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং গণপরিষদের স্পিকার কীভাবে থাকেন। জেপি তার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান । তিনি কেঁদে ফেলেন । তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছিল না। জেপি তাৎক্ষণিকভাবে তার সহকর্মীদের রুমটিকে বাসযোগ্য করে তুলতে বলেন। কিন্তু একই ঘরে থাকতেই ১৯৬৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজেন্দ্রবাবু মারা যান।
ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যুর পরও নেহরুর হৃদয় বিগলিত হয়নি। তাঁর উদাসীনতা শেষ হয়নি; নেহরু তাঁর শেষকৃত্যেও যোগ দেননি। শেষ সফরের দিন নেহেরু জয়পুরে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, রাজস্থানের রাজ্যপাল ডঃ সম্পূর্ণানন্দ পাটনায় যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু নেহেরু তাকে সেখানে যেতে দিতে রাজি হননি। যখন নেহরু জানতে পারলেন যে সম্পূর্ণানন্দ জি পাটনায় যেতে চান, তখন তিনি সম্পূর্নানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন একটি রাজ্যে সফরে আসেন এবং সেখান থেকে যদি গভর্নর উধাও হয়ে যান তাহলে কেমন লাগে । এর পর ডাঃ সম্পুরানন্দ পাটনা যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। শুধু তাই নয়, নেহেরু রাজেন্দ্র বাবুর উত্তরসূরি নিযুক্ত করেন ডঃ এস রাধাকৃষ্ণনকে । তাকেও পাটনায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু,রাধাকৃষ্ণান নেহেরুর কথা শোনেননি এবং রাজেন্দ্রবাবুর শেষকৃত্যে যোগ দিতে তিনি পাটনায় পৌঁছেছিলেন । ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের প্রতি নেহেরুর এই প্রকার প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাব যা তার শাসক হওয়ার অযোগ্যতাকে প্রমাণ করে । আজব দেশ, মহাত্মা গান্ধীর পাশে সঞ্জয় গান্ধী জায়গা পেতে পারেন কিন্তু এদেশে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির সম্মান নেই । এমনকি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকেও কংগ্রেস সোমনাথ মন্দিরের পক্ষে থাকার কারণে কোনো সম্মান দেয়নি, অন্যদিকে মসজিদপ্রেমীদের বড় মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল।
সারা দেশে শুধু গান্ধী পরিবারের নামে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্কিম তৈরি করা হয়েছে, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় , নিজেদের নামে নামকরণ করেছে পরিবারটি । এটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে এদেশে মহানুভবতা ও আত্মত্যাগের কপি রাইট শুধু নেহেরু-গান্ধী পরিবারেরই । ঈশ্বর সত্য , সত্যকে সমর্থন করাই হল ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, আপনার কর্মই নির্ধারণ করবে আপনি কে, আপনি নিজে নয় । আর ইতিহাসকে বিকৃত করে, সত্যকে লুকিয়ে রেখেও দিল্লির ওই বিতর্কিত পরিবারটি নিজেদের প্রকৃত স্বরূপ ঢেকে রাখতে পারেনি । কালক্রমে সব প্রকাশ্যে আসছে এবং আসবেও ।।