প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ জানুয়ারি : বালি- মাটির মত প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করা যাবে না। বালির অবৈধ কারবার বন্ধে প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।বহুবার প্রশাসনিক সভা থেকে এই নির্দেশ দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে বালির অবৈধ কারবার এখনও যে রমরমিয়ে চলছে তা আরও একবার প্রমাণ করেদিল রবিবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নশিপুরের ঘটনা । যে ঘটনায় আবার এলাকার এক তৃণমূল নেতারও নাম জড়িয়েছে। তা জানতে পেরে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
জামালপুর বিধানসভার বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম নশিপুর। এই গ্রাম ও তার আস পাশের চক্ষণজাদি, শম্ভুপুর, জামুদহ প্রভৃতি গ্রামগুলির খুব কাছ দিয়েই বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ । নিত্যদিনই সেখানকার দামোদর নদ থেকে বালি তোলা চলছেই।কতটা বৈধ ভাবে আর কতটা অবৈধ ভাবে এইসব এলাকার দামোদর নদ থেকে বালি তোলা হয় তা নিয়ে এলাকাবাসীও সন্দিহান।
তারই মধ্যে এলাকার প্রধান সড়ক পথ দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ওভারলোড
বালি বোঝাই ট্রাক ও ডাম্পার চলাচল নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন নশিপুর সহ আস পাশের গ্রামের বাসিন্দারা।রবিবার সকালে মূল রাস্তা ছেড়ে একেরপর এক ওভারলোড বালি বোঝাই ট্রাক নশিপুরের গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়তেই সেইক্ষোভে
ঘৃতাহুতি পড়ে। যা সামালদিতে পুলিশকেও গ্রামে ছুটে যেতে হয় ।
এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে,ছুটির দিন হলেও এদিন সকালে ওভার লোড বালির গাড়ি
ও বালির চালান চেকিংয় বেরিয়ে পড়েন ব্লকের
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক (বিএলআরও )
দিলীপ দেবনাথ।আর সেই চেকিংয়ের মুখে পড়ে
কার্যত যেন দিশেহারা হয়ে যায় কালাড়াঘাট- পলেমপুর সড়কপথ ধরে চলাচল করতে থাকা বালি বোঝাই ট্রাকে চালকরা গাড়ি নিয়ে সোজা ঢুকে পড়ে নশিপুর গ্রামের । আর তাতেই চটে লাল হয়ে যান গ্রামের বাসিন্দারা। বালির গাড়ি গুলি আটকে রেখে গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এই খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ক্ষোভ বিক্ষোভ সামাল দেয় ।
গ্রামবাসী শেখ সবর আলি ও সোহরাব মল্লিক সহ আরো অনেকে অভিযোগে জানিয়েছেন, মূল রাস্তায় গাড়ির চেকিং চলছিল। ভয় পেয়ে ৮ টি ওভারলোড বালি বোঝাই ট্রাক নসিপুর গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। এর কারণে রাস্তারও ক্ষতি হয়।এমনকি গ্রামের রাস্তা জুড়ে বালি বোঝাই ট্রাক গুলি দাঁড়িয়ে থাকায় এলাকাবাসীয় যাতায়াতেও সমস্যা তৈরি হয় । এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে বালির গাড়ি আটকে ক্ষোভ বিক্ষোভ ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। এই খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে পৌছালে পুলিশের সামনেও গ্রাম বাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে । উত্তেজনা চরমে উঠলে পুলিশ বুঝিয়ে সুজিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় । বালি বোঝাই একটি ট্রাকের চালক তাঁর ট্রাকে ওবারলোড বালি থাকার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন,’বালি লোড করে ওভার লোড ট্রাক নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলাম । বিএলআরও আর পুলিশ অবিযানে নেমেছে এই খবর ’পাসিং পার্টির’ কাছ থেকে পেয়ে ট্রাক নিয়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকে যাই । কিছুটা যাবার পর বুঝতে পারি এই রাস্তা দিয়ে গন্তব্যে যাওয়া যাবে না । তাই গ্রামের রাস্তাতেই ট্রাক দাঁড় করিয়ে দিয়ে সরে পড়েছিলাম’। অতিরিক্ত জেলালাসক (ভূম)ইউনিস রিসিন জানিয়েছেন,জেলা ও ব্লক দুটি স্তরেই অবিযান চালানো হচ্ছে।
নসিপুর গ্রাম নিবাসী হান্নান মীর সহ অন্যান্য কয়েকজন জানান,প্রতিরাতে প্রায় ৪০০- ৫০০ ওভারলোড বালি বোঝাই ট্রাক ও ডাম্পার এলাকার মূল রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে । বালির গাড়িই প্রতিদিন রাত আটটার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত রাস্তার দখল নিয়ে । ফাঢ়ির লরি থেকে ঝরতে থাকা জল পড়ে রাস্তা বিপদজনক হয়ে থাকে ।রাস্তাও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেরুগ্রাম অঞ্চলের শাসকদলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানির মদতেই এমন বালির করবারের রমরমা চলছে বলে গ্রাম বাসীরা অভিযোগ করেন। তাঁরা এও বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই এতদ অঞ্চলে অবৈধ বালির কারবারের রমরমা চলেই যাচ্ছে বলে নসিপুর গ্রামের বাসিন্দারা এদিন অভিযোগ করেন।
যদিও বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি দাবি করেছেন,“,তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমি বেআইনি কারবারে যুক্ত থাকলে দল তো আগেই ব্যবস্থা নিত ।এদিনের ঘটনা বিষয়ে যা বলার সেটা প্রশাসনকেই জানাবেন“। তৃণমূল নেতা এমনটা দাবি করলেও ,কয়েক মাস আগেই তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা ও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন।
বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাদের জানিয়েছেন,বেরুগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি মৌজায় বালি খাদান চলে। অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দানির মদতেই সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বালি লুট হয় বলে বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন,প্রশাসন, পুলিশ ও পরিবহন দফতর সজাগ রয়েছে। জামালপুর, খণ্ডঘোষের বিভিন্ন রোডে নাকাও চলে । এইসবের ফাঁক গলে ওভারলোড বালির ট্রাক বেরিয়ে যেতে পারবে না ।।