এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৫ আগস্ট : ‘কোটা বৈষম্যবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন’-এর নামে ব্যাপক নাশকতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে-এ- ইসলামি নামে চরমপন্থী ইসলামি সংগঠনের সদস্যরা ।বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার একটি থানার দরজায় তালা ঝুলিয়ে ১১ জন পুলিশকর্মীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে । শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দিনভর সংঘর্ষে সারা দেশের ২৭ থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও রেঞ্জ অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে বাংলাদেশের জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই সংঘাতের জেরে ডজন কয়েকের মৃত্যু এবং তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
মৌলবাদিদের হিংসার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না সেদেশের হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরও । নোয়াখালীর একটি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । কিশোরগাঁও(Kishorgan)-এর দিলাপুর(Dilapur) গ্রামে একটি কালী মন্দিরে ভাঙচুর চালিয়েছে অজ্ঞাত মৌলবাদীদের দল । দেবী কালীর প্রতিমা ভাঙচুরের সময় তারা ‘জয় মা কালি আয়ো গোর্খালি’ শ্লোগান দিয়েছিল বলে অভিযোগ । এদিকে বাংলাদেশ ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত । রবিবার বিদেশ মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতীয়দের বাংলাদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের নাম করে রবিবার বাংলাদেশে নজিরবিহীন হিংসার ঘটনা ঘটেছে। দিনব্যাপী সংঘাত–সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ১৪ জন পুলিশ সদস্যসহ ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি।শনিবার সরকারের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয় জামাত ও বিএনপির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরের দিন রবিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শাসকদলের সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । সকাল থেকেই সংঘর্ষের খবর পাওয়া শুরু হয়।
খবর অনুযায়ী, ফেনীতে ৯ জন, সিলেট ও নরসিংদী জেলায় ৬ জন করে, সিরাজগঞ্জে পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন, ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরে ৮ জন করে, বগুড়ায় ৫ জন, রংপুর জেলায় ৪ জন, মাগুরা, পাবনা, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩ জন করে, শেরপুর জেলায় ২ জন এবং জয়পুরহাট, ভোলা, হবিগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ এবং বরিশালে ১ জন করে মারা গেছেন। বাংলাদেশের আদালত বলেছে যে সকল নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ গ্রহণের অধিকার রয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে পুলিশকে অবশ্যই আইনি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। হাইকোর্ট পুলিশকে কঠোরভাবে পুলিশ রেগুলেশন অফ বেঙ্গল (পিআরবি) মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে ।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নামে চুড়ান্ত নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ জামায়াত-এ-ইসলামির জঙ্গিরা । ঢাকায়, সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭ জন নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন হলেন তৌহিদুল (২২), ওবায়দুল্লাহ সিদ্দিক (২৩), হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্র, রমিজউদ্দিন হাবিব রুপ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারা । ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের মৃতদেহ রাখা হয়েছে।
নরসিংদীতে, মাধবদী উপজেলায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে বিক্ষোভকারীরা ৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে। সংঘর্ষের সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, থানা ও প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী, এবং ঘটনাস্থলের ছবি থেকে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করার জন্য যখন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মীরা রাস্তায় নামে তখন পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।অনেক স্থানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, যার ফলে হিংসাত্মক সংঘর্ষ শুরু হয় এবং অনেক ছাত্র নিহত ও আহত হন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ব্যাপক হিংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে সরকার রবিবার বিকেল ৬টা থেকে রাজধানী এবং দেশের কিছু অংশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফিউ জারি করেছে। ঢাকা মহানগর এলাকা এবং সকল বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিল্প এলাকা, জেলা ও উপজেলা সদরে কার্ফিউ জারি করা হয়েছে।এছাড়াও, দেশজুড়ে ব্যাপক হিংসাত্মক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার জন্য তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। উচ্চ আদালত আজ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো না করার জন্য দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, কিন্তু এই বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।বিচারপতি মুস্তাফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি শুনানি করে এই আদেশ দিয়েছেন।।