প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ নভেম্বর : মালোকাই চ্যানেল জয়ের পর থেকে সায়নী দাস কার্যতই যেন বিশ্ববন্দিতা জলকন্যা বনে গিয়েছেন।তাই এই বাংলার পূর্ব বর্ধমানের কালনা নিবাসী সায়নীকে নিয়ে “জলপরী-দ্য নাইয়াড” নামকরণে এক ঘন্টার তথ্যচিত্র বানিয়ে ফেলেছেন পরিচালক সঞ্জীব নাথ। কেনিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য মনোনিত হল সেই তথ্যচিত্র । ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে সেই তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শো।ইংলিশ চ্যানেল সহ রটনেস্ট, ক্যাটলিনা ও মলোকাই চ্যানেল জয়ী সাঁতারু সায়নীকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক স্তরের ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালের জন্য মনোনীত হওয়ায় খুশি বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীরা।একই ভাবে খুশি সায়নী ও তাঁর বাবা মা ।
তথ্যচিত্রের পরিচালক সঞ্জীব নাথ জানিয়েছেন, সায়নী শুধুমাত্র একজন সাঁতারু নয় ।সায়নী সকল নারীদের কাছে লড়াই ও প্রেরণার প্রতীক। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই জিইয়ে রেখে সাঁতারু সায়নী দাস একের পর এক সাফল্যের চুড়ায় পৌছেচে । ক্রিকেট-ফুটবলের মতো সাঁতারেও যে বিশ্বজয় করা যায় সেটা বাস্তবে সায়নী করে দেখিয়েছে । তাঁর জয়ে শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারতের মুখ উজ্বল হয়েছে।সেই কারণেই সায়নী দেশের নারীদের কাছে অনুপ্রেরনা প্রতীক হয়ে উঠেছে“।সঞ্জীব নাথ বলেন,’এইসব কিছু বিচার করেই আমি সায়নীকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরীর সিদ্দান্ত নিয়ে ফেলি ।সেই তথ্যচিত্র কেনিয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফিল্ম ফেষ্টিভ্যালের জন্য মনোনীত হওয়ার পাশাপাশি তার একটি প্রিমিয়ার শোও হয়ে গিয়েছে।’
কালনা শহরের বারুইপাড়ায় বাড়ি সায়নও দের।তাঁর বাবা রাধেশ্যাম দাস সদ্য স্কুল শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। মা রুপালী দেবী সাধারণ গৃহবধূ।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সায়নী দাস ছোট বয়স থেকেই সাঁতারে তাঁর দক্ষতার পরিচয় দেয়। তার পর থেকে মেয়ের সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সাথী হন পাড়ার পুকুর থেকে শুরু হয় সায়নীর সাঁতারের অনুশীলন। পরে কালনার ভাগীরথী নদী ও সুইমিং পুলে অনুশীলন করে সায়নী নিজেকে আরো দক্ষ করে তোলে । মেয়ের এই লড়াইয়ের সর্বক্ষণের সাথী থাকেন বাবা রাধেশ্যাম বাবু ও মা রুপালীদেবী। মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য রাধেশ্যাম বাবু নিজের বাড়ি পর্যন্ত বন্দক দিতে পিছপা হন নি।অদম্য জেদ ও লড়াই কে পাথেয় করে সায়নী এরপর ইংলিশ, রটনেস্ট ক্যাটলিনা চ্যানেল এমনকি এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা হিসাবে মলোকাই চ্যানেলও জয় করে। তাঁর এই জয় গর্বিত করে বাংলা সহ দেশের সকল নারী ও ক্রীড়ামোদি দের।আজ জলকন্যা হিসাবেই বিশ্ববন্দিতা হয়েছেন সায়নী।তাঁর অসম লড়াই ও অভিজ্ঞতার কাহিনী স্থান পেয়েছে ’জলপরী -দ্য নাইয়াড’ তথ্যচিত্রে ।
তবে এতকিছুর পরেও সায়নীর আক্ষেপ ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলা নিয়ে আবেগ উন্মাদনা থাকলেও সাঁতার নিয়ে সেভাবে উন্মাদনা থাকে না। সায়নীর সেই আক্ষেপের কথা তথ্যচিত্রেও ধরা পড়েছে।উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রশিক্ষণ পেলে যে কোন কন্যাই যে কন্যারত্ন হয়ে উঠতে পারে, তথ্যচিত্রে সেই বার্তাই দিতে শোনা গিয়েছে সায়নীকে। তথচিত্র নির্মাতা সঞ্জীব নাথ কে ধন্যবাদ জানিয়ে সায়নী বলেন,’সাঁতারের জন্য আমার লড়াই ও সংগ্রামের কাহিনী সঞ্জীব বাবু তাঁর তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছেন ।সেই তথ্যচিত্র কেনিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়ছে,এটা আমার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি ।’।