এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,২২ জুলাই : তামিলনাড়ুর হসুরে আইফোন কোম্পানিতে চাকরির টোপ দিয়ে ৫৬ জন যুবতীকে ভিন রাজ্যে পাচারের ছক বানচাল করে দিল জলপাইগুড়ি রেলপুলিশ। সোমবার রাতে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে এনজেপি-পাটনা ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে ওই তরুনীদের উদ্ধার করে জিআরপি এবং আরপিএফের যৌথবাহিনী । উদ্ধার হওয়া তরুনীরা জলপাইগুড়ি কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, ডুয়ার্স প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে । এই ঘটনায় দক্ষিণবঙ্গের ভাটপাড়ার বাসিন্দা জিতেন্দ্র কুমার পাশওয়ান এবং শিলিগুড়ির পোড়াঝাড় এলাকার বাসিন্দা চন্দ্রিমা করকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । পুলিশের অনুমান যে এই ঘটনার পিছনে বড়সড়ো নারী পাচারকারী চক্র জড়িত আছে । সেই চক্রের হদিস পেতে পুলিশ দুই পাচারকারীকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করছে । এই ঘটনায় আরপিএফ মহিলা সাব-ইনস্পেকটর সারিকা কুমারীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৩(৩)/৩(৫) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ধৃতদের জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেয় রেলপুলিশ । জিআরপি সুপার কুঁয়রভূষণ সিং জানান, ‘মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাচারচক্রে আর কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জানা গেছে,উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার ৫৬ জন তরুণীকে তামিলনাড়ুর হসুরে আইফোন কোম্পানিতে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় । সোমবার রাতে তাদের ট্রেনে চড়ার কথা বলা হয়েছিল ৷ কিন্তু তামিলনাড়ুরগামী ট্রেনের পরিবর্তে তাদের তোলা হয় ডাউন এনজেপি-পাটনা ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস ট্রেনে ৷ শুধু তাই নয়, ওই তরুণীদের টিকিট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি । পরিবর্তে তাদের হাতে কোচ ও কম্পার্টমেন্টের নম্বর কালি দিয়ে লিখে দেওয়া হয়েছিল । এদিকে ট্রেন জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়ার আগেই খবর পেয়ে যায় জিআরপি । এরপর জিআরপি এবং আরপিএফ যৌথভাবে অভিযান চালায় ।
এনজেপি স্টেশনে সাব-ইনস্পেকটর আত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় ও বর্ষা প্রধানের নেতৃত্বে জিআরপি ও আরপিএফের ২৭ সদস্যের দল গঠন করে তল্লাশি চালান । ডাউন ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় প্রবেশ করে পুলিশ দেখতে পায় একসঙ্গে বসে রয়েছেন ৫৬ জন তরুণী। কারও কাছেই টিকিট নেই, বরং হাতেই কালি দিয়ে লেখা ছিল কোচ ও বার্থ নম্বর!
তরুণীদের সঙ্গে থাকা জিতেন্দ্র ও চন্দ্রিমা পুলিশের জেরায় ভেঙে পড়ে । জানা যায়, তামিলনাড়ুর হসুরে আইফোন কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার নাম করে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৫৬ জন তরুনীকে যৌন ব্যবসায় কাজে লাগানো । ধৃত দুই নারী পাচারকারীর কাছ থেকে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে যে, তরুণীদের মধ্যে কয়েকজনকে আগেই “পশ্চিমবঙ্গ সোসাইটি ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট” -এর নাম করে দার্জিলিং জেলায় এক মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল হোটেল রিসেপশন, স্পা পরিষেবা ইত্যাদি ।
এদিকে রেল পুলিশের তরফ থেকে খবর পেয়ে নিউ জলপাইগুড়ি জিআরপি থানায় এসে জড়ো হয় তাদের পরিবারের লোকজন । এরপর একে একে তরুণীদের তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।।

