শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১১ নভেম্বর : ২১ ফুটের ভগবান শিবের উপর দন্ডায়মান ২৪ ফুটের দেবী কালীর পূজো ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের জয়রামপুর গ্রাম । প্রায় দেড় শতাধিক বছর প্রাচীন জয়রামপুর গ্রামের শ্যামাকালীর পূজো । গ্রামের মূল পূজো হওয়ায় শারদোৎসবের মতই দেবীর পূজোর আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা । গ্রামের মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে পূজোতে অংশগ্রহণ করেন । গ্রাম্যদেবীর পূজো ঘিরে ৬-৭ দিন ধরে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । রাত পোহালেই শুরু হবে দেবীর আরাধনা । তার আগে জয়রামপুর গ্রাম জুড়ে কার্যত সাজোসাজো রব ।
জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা অশোক কুমার দত্ত
জানান,দেড় শতাধিক বছর আগে মন্তেশ্বরের জয়রামপুর গ্রামের চিত্র বর্তমান চিত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল । গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত ছোট্ট এই গ্রামটির পরিবেশ কিছুটা তপোবনের মত ছিল । গ্রামের এক ধারে জঙ্গল ঘেরা পরিবেশে শ্রীদাম ব্যানার্জি নামে এক সাধক দেবী কালীর সাধনায় মগ্ন থাকতেন । তিনি বলেন,’বাবা-ঠাকুরদার কাছে শুনেছি যে সেই সময় গ্রামে দেবী দূর্গা বা দেবী কালিকার পূজো হত না । সেই কারনে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা মিলে গ্রামে কালি পূজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । তারা একদিন সমবেতভাবে সাধক শ্রীদাম ব্যানার্জির শরণাপন্ন হন । তখন ওই সাধকের পরামর্শেই ২১ ফুটের শিবের উপর দন্ডায়মান ২৪ ফুটের শ্যামা কালী প্রতিমা গড়ে দেবীর পূজো শুরু হয় । ওই সাধকই পূজোর সূচনা করেন । তারপর থেকে আজও জয়রামপুর গ্রামে দেবীর পূজো হয়ে আসছে ।’
জানা গেছে,প্রথম দিকে গ্রামের কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে গ্রামে চাঁদা তুলে পূজো পরিচালনা করতেন । অনেক পরে জয়রামপুর নিউ আনন্দ সংঘ নামে একটা ক্লাব গঠন করে পূজো পরিচালনা করে আসা হচ্ছে । চাঁদার অর্থে গ্রামের মাঝে একটি পাকা মন্দিরও নির্মান করা হয় । ক্লাবের সদস্য দিনেশ কুন্ডু জানান, দেবীর পূজো ৫ থেকে ৭ দিন ধরে চলে । পূজোর দিনগুলিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এবারে ৬ দিন ধরে উৎসব চলবে । ওইদিন গুলিতে ছোটদের নৃত্য,যাত্রা, বাউল গান,অর্কেস্ট্রা প্রভৃতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । আগামী ১৬ নভেম্বর দেবীমাকে নিরর্জন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, বিশালাকৃতির দেবী প্রতিমাকে নিরর্জনের সময় প্রথম দিকে সুবিধার মুখে পড়তে হত । পরে সেজন্য একটি লোহার ট্রলিতেই প্রতিমা গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসীরা । নিরর্জনের দিন গ্রামের হাজার হাজার মহিলা ও পুরুষ মিলে ট্রলিটি ঠেলে গ্রামের জরুলি পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায় । সেখানেই নিরর্জন করা হয় দেবীকে । দেবীর নিরর্জন দেখতে আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক দর্শনার্থী ভিড় জমায় পুকুর পাড়ে ।
গ্রামের বধূ রাখি পাইন এবং মেয়ে শান্তিদেবী বলেন, ‘পূজোর দিনগুলিতে আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার হাজার শ্রদ্ধালু দেবীকে পূজো দিতে আসেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভিড় করেন । পূজোর দিনগুলিতে আমাদেরও দম ফেলার ফুরসত থাকে না । একদিকে প্রতিটি পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা এসে জড়ো হয়, তাদের আতিথেয়তার দায়িত্ব সামলানো তার উপর পূজোর আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের সারাদিন কেটে যায় । রাতে ফাঁকা হলে সবাই মিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখি ।’
জানা গেছে, জয়রামপুর গ্রামের দেবী শ্যামাকালীকে অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করা হয় । গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যে মন্দির প্রাঙ্গনের মাটি শরীরে লাগালে মৃগী, শরীরের ব্যাথা জনিত সমস্যা প্রভৃতি রোগ প্রশমিত হয় । আশপাশের বহু গ্রামের রোগীরাও দেবীর কৃপা লাভের আশায় মন্দির প্রাঙ্গনের মাটি নিয়ে যান । এভাবে বহু মানুষের রোগের নিরাময়ও হয়েছে বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা ।।