এইদিন ওয়েবডেস্ক,পশ্চিম বর্ধমান,০৩ জুলাই : বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের চিত্রালয়ের মাঠে রথের মেলায় গিয়েছিলেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ । সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন,’জগন্নাথের নেইকো হাত, নেই কোন জাতপাত’ । কেউ কেউ মনে করছেন এই প্রবাদের মাধ্যমে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের নামে বিলি করা ‘প্রসাদ’কে শুভেন্দু অধিকারী ‘হালালা মিষ্টি’ বলে যে প্রচার চালাচ্ছেন তারই জবাব দিলেন দিলীপ ঘোষ ।
গত মঙ্গলবারও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের ময়নাতে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘২০২৬ সালের ভোটে মমতার কিছু হিন্দু ভোটের দরকার হবে । তাই পচা গজা এবং প্যাড়া বিতরণ । পচা হালালা প্যাড়া এবং গজা বিতরণ হবে । হালাল মিষ্টি । আশা করি কেউ খাননি। নিয়েও ফেলে দিয়েছেন ? সামসুদ্দিনের মিষ্টির দোকান থেকে তৈরি । সামসুদ্দিন বলছে মিডিয়াকে ‘আমি হালাল মিষ্টি বানাই’ । হিন্দু হালাল খাবেন ? হিন্দি তো হালাল খায় না । হিন্দু ঝটকা খায়, হিন্দু হালাল খায় না ।’
গতকাল দুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষ বলেছেন,’ভগবান জগন্নাথ গরিব লোকের ঠাকুর৷ একজন শবর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাকে খুঁজে পেয়েছিল । আর আমরা জানি পুরীতে যে প্রসাদ হয়, ‘জগন্নাথের নেইকো হাত নেই কোন জাতপাত’ । কোন জাত পাত ভেদাভেদ তিনি মানেন না । জগতের নাথ সবার প্রভু । তিনি আমাদের এক করেছেন ।’ তিনি আরও বলেন,’পুরীধাম থেকে ভগবানের যাত্রা শুরু হয়েছে৷ সারা ভারতবর্ষ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেতে, অন্তত ১০০ টা দেশে ইস্কনসহ বিভিন্ন সমস্যার মাধ্যমে রথযাত্রা চলছে । প্রভুর যাত্রা এগিয়ে চলেছে । কালো-সাদা-নীল-লাল বিভিন্ন রঙের মানুষ তার রথের দড়ি টেনে নিজের জীবনকে ধন্য করছে । বৈতরণী পার হচ্ছে ।’
দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার বিষয়ে নিজের যুক্তিতে অনড় দিলীপ ঘোষ
পাশাপাশি দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার বিষয়ে নিজের যুক্তিতে অনড় থাকতে দেখা যায় দিলীপ ঘোষকে । তিনি বলেন,’আমরা যেমন আজকে সৌভাগ্যবান এখানে এসে ভগবানকে দর্শন করছি। মন্দিরেও চলে যাই মাঝে মধ্যে । কিন্তু আপনারা জানেন আমি দীঘাতে চলে গিয়েছিলাম কি বাওয়াল হয়েছিল । সব ভগবানের ইচ্ছা ।’
আধুনিক মন্দিরগুলি বাতানুকূল(এসি) করার বিষয়েও বিরোধিতা করেছেন বিজেপির ওই বর্ষীয়ান নেতা । এই বিষয়ে তিনি বলেন,’আজকাল বিভিন্ন ঠাকুরকে আমরা দেখছি মন্দির তৈরি হচ্ছে এসি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে । আর এসি লাগিয়ে দিলে ভগবান তো বাইরে যাবেন না । নেতারা যেমন এসি ঘর ছেড়ে বেরোতে চান না । অফিসাররা বের হতে চায় না । ঠাকুরেরও অভ্যাস খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আমি কলকাতায় লোকনাথ বাবার একটা মন্দিরে গেলাম, সেখানে বলছে মন্দিরে এসি লাগানো আছে। লোকনাথ বাবা কবে এসিতে ছিলেন আমি জানিনা । ‘রণে বনে জলে জঙ্গলে আমাকে স্মরণ করিবে’ বলেছিলেন উনি । তাকেও এসির মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । গণেশ বাবাকে তো অনেকদিন ধরেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে । টাকাপয়সা, সোনাদানা দিয়ে এমন আটকে রাখা হয়েছে যে উনি ভুলে গেছেন । তো জগন্নাথ প্রভু এর মধ্যে বাঁধা পড়েন না । এমন দয়ালু তিনি ।’
নিজের বক্তব্যেতর ভিডিও আজ ফেসবুকে পোস্ট করে দিলীপ ঘোষ লিখেছেন,’পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ । ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে । ভগবান বিভিন্ন সময় ধরাধামে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করার জন্য বিভিন্ন নামে অবতীর্ণ হয়েছেন। কখনও তিনি সুদর্শন চক্র ধারণ করেছেন, কখনও তিনি তীর ধনুক ধরেছেন। কিন্তু কলিযুগ যেন এক অন্য যুগ। এই যুগে মানুষের আরও চাই, আরও চাই। অর্থ, বিত্ত, প্রতপত্তিই, ভোগ, দৈহিক সুখ এই তার একমাত্র চাহিদা। ভগবানের কাছে মানুষ অহরহ এগুলিই চেয়ে চলেছেন। তাই কলিযুগে ভগবানের অবতার শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব। তাঁর হাত নেই, পা নেই। তাই তিনি কিছুই করবেন না। তিনি শুধু বিস্ফারিত নয়ন মেলে মানুষকে নিরীক্ষণ করে চলেছেন। ধর্ম, সমাজকে রক্ষা করার দায় তাই আমাদেরই নিতে হবে। নিজেদের লড়াই নিজেদের লড়তে হবে। উঠুন, জাগুন এবং ধর্ম রক্ষা করার দায়িত্ব নিন।’।

