এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ আগস্ট : নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আজ সোমবার সকালে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) একটি দল । কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক বাড়ির প্রাচীর থেকে লাফ দিয়ে ছুটে পালানোর চেষ্টা করেন৷ ইডির সাথে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা তাকে কিছু ধাওয়া করে ধরে ফেলে । আগের মতই ফের জীবনকৃষ্ণ সাহা তার স্মার্টফোনটি নর্দমার মধ্যে ফেলে দেন । তৃণমূল বিধায়কের এহেন কর্মকাণ্ডে তোলপাড় পড়ে গেছে রাজ্য রাজনীতিতে ৷ ইডিকে দেখে জীবনকৃষ্ণ সাহার ছুটে পালানোর ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি ইডির উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কান টেনেছেন ঠিক আছে, মাথাকেও টানতে হবে ৷’
কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে বলেন,’জীবনকৃষ্ণ সাহা ছিল পার্থ চ্যাটার্জি, ভাইপো, কালীঘাটের কাকু, মানিক ভট্টাচার্যের অন্যতম বড় এজেন্ট ৷ বীরভূম আর মুর্শিদাবাদের তালিকা ধরে টাকা তোলা, টাকা পৌঁছে দেওয়া এবং টাকার একটা অংশ রাখা,এই কাজ জীবনকৃষ্ণ সাহা করতেন । আমি অনেকবার বলেছি যে জীবনকৃষ্ণ সাহার কাছে থেমে থাকলে হবে না । জীবনকৃষ্ণ সাহা কাঁদি, নবগ্রাম, খড়গ্রাম প্রভৃতি এলাকার এমএলএ-দের দিয়ে তালিকা তৈরি করা, টাকা তোলা এবং লোকেদেরকে টাকার বিনিময়ের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কাজ করেছেন । অতএব কান টেনেছেন ঠিক আছে, মাথাকেও টানতে হবে ।’
রাজ্যের শাসক দলের দাবি যে জীবনকৃষ্ণ সাহা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার৷ এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’২০২১ সালে যখন ওদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন কোনো নির্বাচন ছিল না । হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছিল । এদের বাঁচাতে চোর সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কিন্তু কোন স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি । মামলা পুরোপুরি পরিচালনা করছে হাইকোর্ট । সেজন্য সিবিআই-এর সিট বানিয়ে দিয়েছিল৷ এমনকি সিবিআই এর কোন অফিসার পরিচালনা করবেন সেটাও সিপিআই-এর হাতে ছিল না । সিবিআইকে তিনটে নাম বলে দিতে বলা হয়েছিল । তার মধ্যে একটা নামকে নির্বাচন করা হয়েছে ।’
তিনি আরও বলেন,’এর আগে পাঁচিলে ঝোলা, পুকুরে মোবাইল ফেলা,পাম্প মেশিন বসিয়ে জল তোলা । আজকেও কিভাবে পালাচ্ছিল । সবাই দেখেছে ৷ শাসকদল যখন বলছে রাজনীতি করছে, তখন শাসক দলের একটাও বলা উচিত ছিল যে কেন জীবনকৃষ্ণ সাহা ছুটে পালাতে গেলে ? তিনি যদি নিরাপরাধ হয়ে থাকেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে থাকেন,তাহলে ফেস করা উচিত । কেন তিনি মোবাইল পুকুরে ফেললেন ? প্রথমে তো অস্বীকার করছিলেন ৷ তিনি যে অপরাধী সেটা আজ সবার সামনে প্রমাণ করে দিয়েছেন । শুধু ইডির কাছে নয়, ওটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’পশ্চিমবঙ্গের জনগণ বিজেপি সরকারকে আনুক । এরা কেউ বাইরে থাকবে না,সব ভিতরে থাকবে । এরা যে জেলের মধ্যে ফাইভ স্টার সুবিধা ভোগ করছে, চোরেরা পিজি হাসপাতালে শুপ খাচ্ছে, কফি খাচ্ছে,চিকেন খাচ্ছে, মটন খাচ্ছে । যেখানে সাধারন মানুষ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না । এই সমগ্র ব্যবস্থাটাকে যদি সমূলে উৎপাটিত করতে হয়, তাহলে চোরেদের রানীকে হারাতে হবে ৷’ শুভেন্দু অধিকারী জানান যে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা মন্ত্রীদের অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করা হবে । এবং সেই টাকা জমা করা হবে রাজ্যের কোষাগারে ।
প্রসঙ্গত, মামলাটি এসএসসি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ৷ তদন্তের সিবিআই জানতে পারে যে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা এই দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত । ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল কান্দিতে জীবনকৃষ্ণর বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই । সেই সময় তথ্য-প্রমাণ লোপাট করতে নিজের দুটি ফোন বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি । যেকারণে সিবিআইকে পাম্প মেশিন লাগিয়ে পুকুরের জল তুলে ফেলতে হয় । তারপর পাঁক ঘেঁটে উদ্ধার হয় জীবনকৃষ্ণের দুটি মোবাইল ফোন । দীর্ঘ দু’দিন ধরে চলে ফোন উদ্ধার পর্ব । প্রায় ৬৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ককে । তদন্তে সহযোগিতা না করা এবং তথ্য-প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। দীর্ঘ ১৩ মাস জেল খাটার পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
আজ সকালে জীবনকৃষ্ণর কাঁদির বাড়িতে ফের হানা দেয় ইডি । তখন বাড়ির প্রাচীর টপকে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি । এতে তিনি কোমড়ে আঘাতও লাগে । পাশাপাশি নিজের স্মার্টফোন নালায় ফেলে দেন । ইডির আধিকারিকরা সেটি উদ্ধার করেন । তারপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির পর বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ককে ফের গ্রেপ্তার করে ইডি ।।