এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,২৩ অক্টোবর :
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে রবিবার ফোনালাপের সময় মিশর থেকে গাজায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সরবরাহের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছেন । যদিও ইসরায়েলি পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি, তবে নেতানিয়াহুর কার্যালয় গত সপ্তাহে বলেছিল যে তার যুদ্ধ মন্ত্রিসভা মিশরের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তার অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,২০ ট্রাক সাহায্য শনিবার গাজায় প্রবেশ করেছে এবং প্রায় ১৫ ট্রাক রবিবার প্রবেশ করেছে ।
এদিকে সমস্ত অপহৃতদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী তথা উগ্র ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন গভির(Itamar Ben Gvir) । তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহে সম্মত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন ।
বেন গভির ‘এক্স’-এ লিখেছেন,’গাজাকে অবিচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা শুধুমাত্র সমস্ত অপহৃতদের মুক্ত করার বিনিময়ে হওয়া উচিত ।’
ইসরায়েলের কল্যাণ মন্ত্রক রবিবার ঘোষণা করেছে যে গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের কারণে ১৩ টি পরিবারের অন্তত ২১ টি শিশু অনাথ হয়ে গেছে । এই পরিসংখ্যানে ১৬ টি ক্ষেত্রে শিশুর বাবা-মা উভয়কেই হত্যা করা হয়েছিল, বাকি বাচ্চাদের একজন বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছিল এবং অন্যজনকে বন্দী করা হয়েছিল বা দুই সপ্তাহ আগে মারাত্মক হামলার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছে । শিশুদের মধ্যে গাজায় অপহরণ করা ৪ বছর বয়সী একটি মেয়েও রয়েছে। আরেক তরুণীর মাকে খুন করা হয়েছে এবং তার বাবাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ।মন্ত্রণালয়ের সাথে সমাজকর্মীরা এই ধরনের সমস্ত শিশুকে চিহ্নিত করতে এবং তাদের এবং তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্থান সরবরাহ করার জন্য কাজ করছে ।
ইসরায়েলের কল্যাণ মন্ত্রী ইয়াকভ মার্গি এক বিবৃতিতে বলেছেন,’হামাসের নৃশংস হামলার শিকার হওয়া এত শিশুর পেট চিড়ে দেওয়া হয় ।’ তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে রাষ্ট্র এই শিশুদের সমস্ত দায়িত্ব নেবে ৷
গত ৭ অক্টোবর হামাসের গণহত্যার পর থেকে, প্রায় ২,০০,০০০ ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র রবিবার বলেছেন যে ২,০০,০০০ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেককে দক্ষিণ এবং উত্তরে গাজা এবং লেবানন সীমান্তের কাছে ১০৫ টি স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল,যার মধ্যে অর্ধেক পরিবার তার আগেই স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে কাছাকাছি এলাকায় চলে গেছে।
ইরান-সমর্থিত ফিলিস্থিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের হত্যাকাণ্ডের আক্রমণের পর ইসরায়েল হামাসের সাথে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেছে, যেখানে প্রায় ২,৫০০ সন্ত্রাসী স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিল, প্রায় ১,৪০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক ছিল এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছিল । এছাড়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাজার হাজার জঙ্গিরা বিভিন্ন বয়সের বয়সের কমপক্ষে ২১২ জনকে গাজায় টেনে নিয়েছিল ।
ইসরায়েল বলেছে যে গাজায় তাদের অভিযানের লক্ষ্য হামাসের অবকাঠামোগুলি ধ্বংস করা, এবং পুরো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করা । তারা বলেছে যে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করার জন্য হামাসের ঘাঁটিগুলিতে মূলত ধ্বংস করা হচ্ছে । উত্তরে, হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ, এছাড়াও একটি ইরানী প্রক্সি সন্ত্রাসী সংগঠন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে এবং ইসরায়েলি শহরগুলিতে কয়েক ডজন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করেছে, পাশাপাশি উত্তর ইস্রায়েলে অনুপ্রবেশ করার জন্য কিছু ফিলিস্তিনিদের সাথে বন্দুকধারীও পাঠিয়েছে । উত্তর ইসরায়েলে সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি ড্রোনও আটকানো হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রবিবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে হিজবুল্লাহ যুদ্ধে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিলে তারা জীবনের সমচেয়ে মারাত্মক ভুল করবে ।।