এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,২২ নভেম্বর : শেষ পর্যন্ত নিজের দেশের অপহৃত নাগরিকদের বাঁচাতে সন্ত্রাসী হামাসের ব্লাকমেলিং-এর ফাঁদে পড়ল ইসরায়েল । হামাসের অপহরণ করা ৫০ জন নাগরিককে ছাড়াতে ইসরায়েল ৩০০ জনকে মুক্তি দিতে চলেছে । তাদের মধ্যে এমন কিছু হামাসপন্থী ফিলিস্তিনি রয়েছে যাদের বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী বলে পরিচিত ।
ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় আজ বুধবার সকালে তাদের ওয়েবসাইটে ফিলিস্তিনি বন্দীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যাদের হামাসের সাথে প্রত্যাশিত চুক্তির অংশ হিসাবে মুক্তি দেওয়া হবে। এটি ৩০০ বন্দীর একটি তালিকা, যদিও প্রথম পর্যায়ে চুক্তিতে ১৪০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । বিনিময়ে ৫০ জন অপহৃত ইসরায়েলিকে মুক্তির শর্ত করেছে হামাস সন্ত্রাসীরা।
প্রকাশিত তালিকায় বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে খুনের চেষ্টা, পাথর নিক্ষেপ, মোলোটভ ককটেল নিক্ষেপ,পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ, নাশকতা, মানুষকে গুলি করা, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা এবং আরও অনেক কিছু অভিযোগে অভিযুক্তরা রয়েছে । ইসরায়েলে গতকাল স্পষ্ট করা হয়েছে যে কাউকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্তকে ১৪০ জনের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি । তবে প্রাথমিক চুক্তির অংশ হিসাবে এই ৩০০ জনের মধ্যে কাদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতের চুক্তির অংশ হিসাবে কাকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে তা স্পষ্ট নয় ।
তালিকায় থাকা ৩০০ বন্দীর মধ্যে ১৭ জনকে হত্যার চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী মেসন মুসা অন্যতম, যে ২০১৫ সালে রাচেল ক্রসিংয়ে একজন মহিলা সৈনিককে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেছিল। সন্ত্রাসী মুহম্মদ আবু কাতিশ, যে এক বছর আগে একটি হামলা চালিয়েছিল, সে একজনের উপর চড়াও হয়ে ছুরিকাঘাত করে এবং গুরুতরভাবে আহত করে। তাকে ১৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে সে এখন পর্যন্ত প্রায় এক বছর সাজা ভোগ করেছে ।
কয়েকদিন আগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং মুক্তি পেতে পারে এমন কিছু ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী হল :
মাত্র দশ দিন আগে, নাফুজ হামাদকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল,যে দুই বছর আগে পূর্ব জেরুজালেমে পাঁচ সন্তানের সামনে একজন মহিলাকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন – এবং তার নাম তালিকায় রয়েছে । অভিযোগ অনুযায়ী, হামাদ এমনকি ওই ঘটনায় “দুঃখ, অনুশোচনা বা সহানুভূতি প্রকাশ করেনি” এবং তাকে তাফার পাড়ায় তার বাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী ফাতমা অমরনার নামও রয়েছে তালিকায়, যে জেনিন এলাকার ইয়াবদ গ্রামের ৪৪ বছর বয়সী এবং গত সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে সে টেম্পল মাউন্ট থেকে বের হওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছিল । যদিও সে ব্যর্থ হয় । ছুরিটি তার পরা প্রতিরক্ষামূলক ভেস্টে আঘাত করে এবং তার অন্য দিকে বেরিয়ে যায় ।
তালিকায় থাকা বেশিরভাগ বন্দী জেরুজালেম এবং জুডিয়া এবং সামারিয়া থেকে এসেছে এবং আশা করা হচ্ছে যে তারা তাদের বাসস্থানে ফিরে যাবে। উদাহরণ স্বরূপ, বেথলেহেম এলাকার দেহিসা শরণার্থী শিবিরের ৩৩ বছর বয়সী সন্ত্রাসী ফাতমা শাহিন,যে গত এপ্রিলে হলোকাস্ট দিবসের প্রাক্কালে গুশ ইতজিয়নে ছুরিকাঘাতে হামলা চালিয়েছিল – যাতে একজন ৩৬ বছর বয়সী ইসরায়েলি মাঝারিভাবে আহত হন । অভিযোগে বলা হয়েছে যে ওই ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী “একজন ইসরায়েলি নাগরিক বা সৈন্যের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে তার মৃত্যু ঘটাতে চেয়েছিল ।”
মঙ্গলবার রাতে সরকার বিস্তারিত অনুমোদনের পর আজ সকালে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এটি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাই আগামীকাল বা পরশু অপহৃতদের প্রথম মুক্তি প্রত্যাশা করা হচ্ছে ৷ প্রতিদিন ইসরায়েল পরের দিন মুক্তিপ্রাপ্তদের একটি তালিকা পাবে এবং অপহরণকারীদের প্রথম মুক্তির পরই ইসরায়েল বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং গাজা উপত্যকায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমোদন দেবে ।
চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল বেশ কয়েকটি শর্তের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় একটি হল ১৫০ জন পুরুষ ও মহিলা বন্দী, তরুণ সন্ত্রাসী কর্মীর মুক্তি । চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর এবং বর্ধিত পরিমাণ জ্বালানি আনার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ।।