এইদিন ওয়েবডেস্ক,হবিগঞ্জ(বাংলাদেশ),১৮ অক্টোবর : বাংলাদেশের দূর্গাপুজোয় বাজনা ও মাইক বাজানোর উপর ফতোয়া জারি করল ইসলামিক ফাউন্ডেশন । বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হবিগঞ্জ শাখার তরফে রবিবার(১৬ অক্টোবর ২০২৩) জারি করা ওই ফতোয়ায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আযান ও নামাজের সময় পূজামন্ডপে বাদ্যযন্ত্র ও মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে । এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই প্রকার ফতোয়ার তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে । বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ফেসবুক পেজে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জারি করা ওই ফতোয়ার কপিটি পোস্ট করে বলা হয়েছে,’হবিগঞ্জে দুর্গাপূজায় বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন! ৪টা থেকে ৬ টা, দুইঘন্টা ব্যাপী নাকি নামাজের টাইম। অথচ সকালের ব্রহ্মমুহুর্ত থেকেই আমাদের সকল পূজাপাঠ শুরু হয়। (ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া)।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হবিগঞ্জ শাখার উপ পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান দ্বারা স্বাক্ষরিত ওই ফতোয়ায় বিষয়বস্ত হল,’আযান ও নামাজের সময় পূজামন্ডপে বাদ্যযন্ত্র ও মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রসঙ্গে’ । কপিতে বলা হয়েছে,’উপর্যুক্ত বিষয়ে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, হবিগঞ্জ জেলায় আগামী ০৯ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ অনুষ্ঠিতব্য শারদীয় দূর্গাপূজা ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, “আযান ও নামাজের সময় পূজামন্ডপগুলোতে পূজা চলাকালে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখা ও মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উপরোক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে, আযান ও নামাজের সময়ে পূজা মন্ডপে বাদ্যযন্ত্র ও মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
এরপর নামাজের সময়সূচি উল্লেখ করে বলা হয়েছ, পার্শ্বে উল্লেখিত সময়ে পূজামণ্ডপে পূজা চলাকালে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো ।’ সব শেষে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এবং হবিগঞ্জ-এর হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ।
এদিকে আজ মহাচতুর্থী পর্যন্ত হবিগঞ্জের কোনো দূর্গাপূজো কমিটির কাছেই আযানের সময় বাদ্যযন্ত্র বা মাইক বাজানোর কোনো নির্দেশ আসেনি বলে খবর । এমনকি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওই কপিটি কোনো পূজো কমিটির কাছে না পাঠিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগ উঠছে । এখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এহেন ফতোয়ায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার জন্যই কি হিন্দুরা দূর্গাপূজোয় মাইক বা বাজনা(ঢাক,কাঁসর) বাজানোর নির্দেশ মানতে বাধ্য ? ঢাক বা কাঁসর বাজানো হিন্দুদের যেকোনো পুজোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় রীতি । তাহলে কিভাবে হিন্দুরা শাস্ত্রীয় বিধি মেনে দূর্গাপূজো করবে ? কেন পুজোর সময় মসজিদগুলি থেকে মাইকে আযান দেওয়া বন্ধ করা হবে না ? সারা বছর ধরে দিনে তিনবার করে মাইকে তারস্বরে আযান শুনতে হিন্দু বা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে কেন বাধ্য করা হয় ? যদিও বাংলাদেশের মত কট্টর ইসলামি দেশে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের আশা করা বাতুলতা মাত্র । বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলুননা কেন, তাঁর দেশে হিন্দুদের নিজের মত করে শারদোৎসব পালনের অধিকার পর্যন্ত যে নেই তা হবিগঞ্জ-এর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই প্রকার ফতোয়াতেই স্পষ্ট ।।