এইদিন ওয়েবডেস্ক,লক্ষ্ণৌ,০৭ এপ্রিল : পারিবারিক অশান্তির জেরে মন্দিরে হামলা নয়,বরঞ্চ রীতিমতো পরিকল্পনা করেই উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরে হামলার হামলার ছক কষেছিল ধৃত আহমেদ মুর্তজা আব্বাসি । কিন্তু একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলায় তার সেই হামলার ছক ভেস্তে যায় । পুলিশি তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে । শুধু তাইই নয়, আব্বাসি আইএসআইএসকে লাখ লাখ টাকা পাঠাতো বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী দল । আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক,আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্ক এবং প্ল্যাটিনাম ফেডারেল ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে সে লেনদেন করত বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক শীর্ষকর্তা । এখন আইএসআইএস-এর সাথে আব্বাসির আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ । ইসলাম ধর্মগুরু জাকির নায়েকের দ্বারাও আব্বাসি অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন বলে জানা গেছে । গুজরাটের জামনগরের যোগসুত্র থাকায় আব্বাসিকে গুজরাট এটিএস লক্ষ্ণৌয়ে এসে ত জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে । এদিকে হামলার ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে । মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা চলছে ।
গত ৩ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের গোরক্ষনাথ মন্দিরের আক্রমণ করে আহমদ মুর্তজা আব্বাসি । ঘটনাটি ঘটেছে ইউপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্দিরে যাওয়ার ঠিক একদিন আগে । হাতে থাকা হাঁসুয়া দিয়ে মন্দিরের দুই নিরাপত্তা রক্ষীকে জখম করে হামলাকারী যুবক । যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় সে ধরা পড়ে যায় । আব্বাসি ধরা পড়ার পর তার পরিবার দাবি করেছিল মানসিক অসুস্থতার কারনেই সে এই কাজ করে ফেলেছে । যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসা করিয়ে পুলিশ জানতে পারে হামলাকারীর আদপেই মা বরঞ্চ তদন্তে উঠে আসে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগসুত্র ।
জানা গেছে,গোরক্ষনাথ মন্দিরে হামলার পরিকল্পনার কথা আগেই জেনে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। গত ৩১ মার্চ এটিএসকে ১৬ জনের নামের একটি তালিকাও পাঠানো হয়েছিল । সেই তালিকায় নাম ছিল আব্বাসির । মন্দিরে হামলার একদিন আগে অর্থাৎ শনিবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল এটিএস । কিন্তু তার আগেই বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় আব্বাসি । তদন্তকারী এক আধিকারিকের কথায়,’আব্বাসি তার বাড়িতে এটিএস অভিযানের কথা জানতে পেরে যায় । তার ঠিক পরের দিনেই সে মন্দিরে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে । আর তাড়াহুড়ো করে হামলার পরিকল্পনা করার কারনেই তার পরিকল্পনা সফল হয়নি ।’ ঠিক কি পরিকল্পনা ছিল তার তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে তদন্তকারী দল ।
জানা গেছে,সাহারানপুর থেকে আব্বাসির সহযোগীকে গ্রেফতার পর রাজ্য জুড়ে অন্তত ছয়টি জেলায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালায় এটিএস । আব্বাসির সঙ্গে যোগাযোগে ছিল এমন বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে । মঙ্গলবার রাতে সাহারানপুরের ছুটমালপুরের এক সন্দেহভাজন যুবককে গ্রেফতার করেছে এটিএস । আব্দুল রেহমান নামে পরিচিত ওই ব্যক্তি ছুটমালপুরের মুসলিম কলোনিতে একটি মুদিখানা দোকান চালায় । তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে রেহমান আব্বাসির সঙ্গে নেপালে গিয়েছিলেন । সেখানে থেকে তারা দুজনই সিরিয়ার বাইরে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন ।
জানা গেছে,এর বাইরেও দুজন সম্বল থেকে এবং আটজনকে দেওবন্দ, কানপুর, লখনউ, নয়ডা এবং শামলিসহ অন্যান্য শহর থেকে আটক করা হয়েছে । বর্তমানে প্রায় ৪০ জন ব্যক্তি এই মামলার এটিএস রাডারের মধ্যে রয়েছে । ওই সমস্ত লোকেদের সঙ্গ্র ফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে আব্বাসির যোগাযোগ ছিল বলে পুলিশ সুত্রে খবর ।
পাশাপাশি ধৃত আহমেদ মুর্তজা আব্বাসিকে জেরা করে তদন্তকারী দল জানতে পেরেছে তাঁদের পরামর্শদাদার নাম ইমাম আনোয়ার আল-হালাকি । ওই ব্যক্তি ইয়েমেনের বাসিন্দা হলেও থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ।
এদিকে ইউপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মন্দিরে যাওয়ার ঠিক একদিন আগে গোরক্ষনাথ মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর লখনউ বাসভবন এবং মন্দিরেই কঠোর নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্ণৌয়ের বাসভবনে সিআরপিএফের দুটি প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে এবং মহিলা কর্মীদেরও চব্বিশ ঘন্টা মোতায়েন করা হবে বলে জানা গেছে । পাশাপাশি মন্দিরের সমস্ত দর্শনার্থীদের সঠিকভাবে স্ক্রিনিং করা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এলাকায় কোন সন্দেহজনক গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখা হবে এবং
জনতা দরবার বা মুখ্যমন্ত্রীর অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য যারা আসছেন তাদের কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানা গেছে । মন্দিরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার দায়িত্ব বর্তেছে এডিজি গোরখপুর জোন অখিল কুমার এবং এসএসপি বিপিন টাডার উপর ।।