প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ জুন : পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোথাও দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রার্থী হতে দেওয়া হবে না । নবজোয়ার কর্মসূচীতে বেরিয়ে প্রতিটি সভা থেকে এই ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।এমনকি তিনি এও বলেছিলেন,তিনি নিজে এই ব্যাপারে নজর রাখবেন।কিন্তু তার পরেও পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে। প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরেও তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।অনেকে আবার ক্ষোভে গোঁজ প্রার্থী হয়েছে এইসব দেখে বিরোধীরা বলছে,’দুর্নীতিগ্রস্তরাই তৃণমূলের সম্পদ’।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় পড়ে রাজ্য জুড়ে ওই সময়েই প্রকাশ্যে আসে প্রাসাদোপম অট্টালিকা থাকা সত্ত্বেও সরকারী আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের শাঁকারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের। যদিও আবাস দুর্নীতি সামনে চলে আসার পরে তাঁর নাম তালিকা থেকে বাদ দেয় ব্লক প্রশাসন। সেই কোটিপটি জাহাঙ্গীর শেখ এবারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস দল জাহাঙ্গীর শেখকে প্রার্থী করলেও দুর্গাপুরের সভাথেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মেমারির বিজুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা
রায়ের প্রশংসা করলেও তাকে এবার প্রার্থী করেনি। ক্ষোভে দুঃখে ঝর্ণা স্বদলবলে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন,’সততার সঙ্গে পঞ্চায়েত চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েও দলের কাছে মূল্য পেলাম না’ । একই রকম ভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন নেমারির দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুমা কোরা। আদিবাসী পরিবারের মেয়ে ঝুমা বসবাস করেন এক কুটুরি মাটির বাড়িতে।পঞ্চায়েত প্রধান পদে থেকেও উপর্জনের জন্য তিনি খেতমজুরির কাজ করেন।আর প্রধান হিসাবে পাওয়া অনুদানের অর্থ দিয়ে তিনি তাঁর পড়াশুনার। খরচ চালাতেন। এহেন দৃষ্টান তৈরি করে বহুজনের প্রশংসা কুড়ানো ঝুমা কোরাকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল কংগ্রেস দল।আর দলের এমন সিদ্ধান্তে কার্যতই হতাশ ঝুমা । তবে তিনি অবশ্য এখনও অন্য দলে যাননি।
খণ্ডঘোষের শাঁকারি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী,২০১৮ সালে উপপ্রধান হওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর শেখের আর্থিক অবস্থার উন্নতি রকেট গতীতে হতে শুরু করে । তানিয়ে জনমানসে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ।সেটা জেনে স্থানীয় নেতৃত্বের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। জাহাঙ্গীরকে দলের শাঁকারি অঞ্চলের সভাপতি বা পুনরায় পঞ্চায়েতের প্রার্থী করলে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হবে । দলীয়স্তরে চিঠি পাঠিয়েও তা জানান স্থানীয় নেতৃত্ব । এমনকি,জাহাঙ্গীর নানা রকম বেআইনি কাজকর্মে জড়িত বলেও চিঠিলিখে অভিযোগ করা হয়েছিল। এর পরেও জাহাঙ্গীর কী ভাবে প্রার্থীপদ পেলেন তা নিয়ে খণ্ডঘোষের অনেক নেতাই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন । যদিও এইসব সমালোচনা নিয়ে কোন মাথা ঘামাতে চান না জাহাঙ্গীর শেখ । তাঁর বক্তব্য দল তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে ,সেই দায়িত্ব পালনেই এখন তিনি ব্যস্ত ।
খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ এইসব নিয়ে কোন বিতর্কে জড়াতে চাননি । তিনি শুধু বলেন,
‘জাহাঙ্গীরের প্রার্থী হওয়াটা দলীয় সিদ্ধান্ত।’ আর খণ্ডঘোষ ব্লকের সভাপতি অপার্থিব ইসলাম জবাব, ’জাহাঙ্গীরকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।’
তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে জামালপুরেও বিতর্ক ছড়িয়েছে। এবারেও দল জামালপুরের বেরুগ্রাম
পঞ্চায়েতের প্রার্থী করেছে শেখ শাহাবুদ্দিন ওরফে দানি এবং শেখ ফিরোজের স্ত্রী হাসনাহারা বেগমকে।পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার অনেক আগেই জামালপুর ব্লকের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি দানি এবং ফিরোজের বিরুদ্ধে বালির অবৈধ কারবারে যুক্ত থাকা ছাড়াও আর্থিক দুর্নীতি স্বজনপোষণের নানা অভিযোগ এনে মুখমন্ত্রী সহ জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছিল। তার পরেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় নেতৃত্ব শেখ শাহাবুদ্দিন ওরফে দানিকে বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি করে। আর এবারও পুণরায় দানি এবং ফিরোজোর স্ত্রী হাসনাহারা বেগমকে প্রার্থী করেছে। শুধু প্রার্থী হওয়াই নয়,দানি নিজের দাপটে ইতিমধ্যেই বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত জয়ের পথও এক প্রকার নিশ্চিৎ করে ফেলেছে।বাকি রয়েছে শুধু বীজয় উৎসব পালন।এরমধ্যে উল্লেখ যোগ্য বিষয় হল,দানি ও ফিরোজের বিরুদ্ধে যে যে জন প্রতিনিধিরা অভিযোগ জানিয়েছিলেন দল তাঁদেরই ব্রাত্য করে দিয়েছে । ওইসব জনপ্রতিনিধিদের কাউকেই তৃণমূল কংগ্রেস দল এবার প্রার্থী করে নি। এ বিষয় নিয়ে এইসময়ে কোন মন্তব্য করে বিতর্কে জড়াতে চান নি জামালপুর ব্লক তৃণমূলের নেতৃত্ব ।
বিজেপির জেলা নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই বিষয়ে
তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েন নি । তিনি বলেন,বড়লোক দুর্নীতিগ্রস্তরাই তৃণমূলের সম্পদ । তাই তারাই তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধীকার পেয়েছে।আর গরিব-খেটে খাওয়া মানুষ কিংবা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তৃণমূলের কর্মীরা দলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে। প্রার্থী করতে পারছে না তৃণমূল। অথচ বড়লোক, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের সহজেই প্রার্থী করছে শাসক দল । একই বক্তব্য সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষের ।।