এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৪ নভেম্বর : বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প চরম সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে । এমনকি ‘হারাম’ আখ্যা দিয়ে চলচিত্র শিল্পকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে । কারন শিল্পকলায় চলচ্চিত্র বিভাগ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে । ফলে প্রশ্ন উঠেছে ‘চলচ্চিত্র’ কি শিল্প নয়? এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টকর্মী ও নির্মাতা। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং সন্দেহও প্রকাশ করেছেন তারা ।সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন ১৯৮৯’ এর সংশোধিত খসড়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্র বিভাগকে। এর পরই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। ‘চলচ্চিত্র’ কি শিল্প নয়, কেন চলচ্চিত্রকে আলাদা শাখা হিসেবে শিল্পকলায় রাখা যায় না, কেন শিল্পকলায় ‘চলচ্চিত্র’ বিভাগ থাকা প্রয়োজন, শিল্পকলায় সংস্কার তবে কি এমন অসংখ্য প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতারা।
চলচ্চিত্র সংস্কৃতিচর্চার পরিসর ও পরিবেশকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগ’ এক দশকের বেশি সময় ধরে ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু হঠাৎই এ বিভাগকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশে ছাত্র, জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার পতন হলে বিভিন্ন শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন অর্ন্তর্বতী সরকার। তারা জনগণ ও দেশের কল্যাণে সংস্কারমূলক নানা কাজ শুরু করেন।
যার ধারাবাহিকতায় শিল্পকলা একাডেমির আইন ১৯৮৯’ এর সংশোধিত খসড়া শুরু হয়। সংস্কারমূলক এ কাজে কেন একটি দেশের সিনেমা বা চলচ্চিত্র গুরুত্বহীন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নির্মাতা মহলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা, সমালোচনা। নেটিজেনরা বলছেন, দেশের চলচ্চিত্রসহ সকল শিল্প ও সংস্কৃতির লালন- প্রতিপালন, চর্চা ও গুরুত্বপূর্ণ বিকাশে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির। অথচ একাডেমিটি চলচ্চিত্রে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা না রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগটি বাদ দেওয়ার। এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন সময় সংবাদকে বলেন, শ্রদ্ধেয় এমন এক জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার পরও যখন এমন ঘটনা ঘটে যে শিল্পকলা থেকে সিনেমা বা চলচ্চিত্র বাদ দেওয়া হয় তখন মনে প্রশ্ন জাগে।
নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন আরও বলেন, তাহলে সংস্কার বলতে আমরা কী বুঝি? শিল্পকলার দায়িত্ব বলতে শুধু যদি আমরা নাটক বুঝি তবে শিল্পকলাকেই খাটো করা হবে। কারণ একটি বিভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে শিল্পকলার চর্চা করলে শিল্পকলাকেই আক্রান্ত করা হবে। শিল্পকলাই দুর্বল হয়ে পড়বে। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারমূলক কাজ শুরু হলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে তৈরি করা হয় ‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ’। চলচ্চিত্র উন্নয়নে বেশকিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরা হয় সেই রোডম্যাপে। কিন্তু শিল্পকলায় ‘চলচ্চিত্র’ বিভাগ না থাকার খবর চলচ্চিত্রকর্মীদের হতাশ করে।
এ প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, শিল্পকলায় প্রথমে ‘চলচ্চিত্র’ বিভাগ বাদ দেওয়া হয়েছে। তারপর বলা হচ্ছে মতামত দিন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সন্দেহজনক, এটা কেন হচ্ছে?
এদিকে অন্য শিল্পমাধ্যমগুলোর জন্য শিল্পকলা একাডেমি যা করে তা চলচ্চিত্রের জন্যও করার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, উন্নত জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হলে চলচ্চিত্র উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ হিসেবে শিল্পকলায় ‘চলচ্চিত্র’-র আলাদা বিভাগ থাকতে হবে। শুধু আলাদা বিভাগই নয়, খুবই সক্রিয় বিভাগ হিসেবে থাকতে হবে ‘চলচ্চিত্র’বিভাগকে। যেটা দেশের সব চলচ্চিত্রের বিকাশের স্বার্থে কাজ করে যাবে।
‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’-তে যখন চলছে ‘চলচ্চিত্র’বিভাগকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা তখন প্রকৃত সত্য জানতে শিল্পকলার মহাপরিচালক ডঃ সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে সময়ের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।।