এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ নভেম্বর : বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্ম বাংলাদেশের রাজশাহী শহরের ঘোড়ামারা মহল্লার মিয়াপাড়ায় । গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজশাহী কলেজের মুসলিম ছাত্ররা । স্থানীয়ভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ হলেও পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস,বামপন্থী ও কংগ্রেস এখনো পর্যন্ত নিরুত্তাপ ৷ বিশেষ করে ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে ‘আদিখ্যেতা’ করা সিপিএম এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ব্যাঙ্গ করে বলেছেন, ‘সিপিএম কি শীতঘুমে ?’
আজ বৃহস্পতিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে অগ্নিমিত্রা লিখেছেন,’সিপিএম মিছিল করবে না? সিপিএম কি শীতঘুমে চলে গিয়েছে? আন্তর্জাতিকওয়ালাদের হলো কী? একটা মিছিল নেই। হাঁটি হাঁটি পা পা করে দুফুরের রোদে গলা ফাটিয়ে ইনক্লাব, জিন্দাবাদ স্লোগান নেই! আলিমুদ্দিন ঘুমিয়ে পড়েছে। শীত আসার আগেই শীতঘুমে। তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন দেখতে পারছে না। মহম্মদ ইউনুস এন্ড কম্পানির শাসনে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলেই যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নেই। মারা হচ্ছে, বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, লুঠপাঠ চলছে। ছাড় পাচ্ছেনা ইসকনও।’
ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন,’রাজশাহি শহরের মিয়াপুর এলাকায় ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি। সেখানেই ছোটবেলা কেটেছে তাঁর। সেই বাড়িই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঋত্বিক কুমার ঘটকের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক বাড়ি। বাড়িটি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবুও চুপ আগমার্কা বাম নেতারা। অথচ ঋত্বিকের ছবি নিয়ে এদের আদিখ্যেতার শেষ নেই।
প্যালেস্তাইন নিয়ে মিছিল করা যায়। আমেরিকান দুতাবাস পর্যন্ত যাওয়া যায়। গরম গরম বক্তৃতা দেওয়া যায়। আর হিন্দুদের উপর আক্রমণ হলেই বিশ্ব মানবতা উধাও….অগ্নিমিত্রা।’
প্রসঙ্গত,প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া করার পর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা এখন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে। প্রতিদিন সেদেশের হিন্দুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা । এরই মাঝে গত ৫-৬ আগস্ট রাতে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় মুসলিম ছাত্ররা৷ গত ৬ আগস্ট বিষয়টি নজরে পড়লে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় রাজশাহীর চলচ্চিত্রকর্মীরা । তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় । হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চলচ্চিত্রকর্মীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয় ।
কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, ৬ আগস্ট অফিস খোলার দিন তাঁরা আসেন। তখন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন। তাঁরা বলতে থাকেন বঙ্গবন্ধুর ছবিটা নামিয়ে নিতে। তখন তাঁরা ব্যানারগুলো নামিয়ে ফেলেন। শিক্ষার্থীরা তখন বলেন, এই জায়গাটা ভেঙে ফেলতে হবে। তখন তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা কেন ভেঙে ফেলতে হবে?’ পরে সেদিনের মতো শিক্ষার্থীরা চলে যান। পরে সেদিন রাত আটটায় তিনি ফোনে জানতে পারেন, এ বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। তখন এসে দেখেন, ছয় থেকে সাত জন শ্রমিক এটা ভাঙছেন। শ্রমিকেরা তাঁকে জানিয়েছেন, কয়েকজন তাঁদের টাকা দিয়ে এটা ভাঙতে বলেছেন। ছাত্ররা এটা করিয়েছেন। তাঁর ইন্ধনে এটা হয়নি। কারণ, এ জায়গাটা তাঁরা হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোর হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
উল্লেখ্য,ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি পুরো ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দেয়। কলেজটি বাড়ি ঘেঁষেই পশ্চিম পাশে ছিল । ২০১৯ সালে বাড়িটির একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারেজ তৈরির অভিযোগ উঠেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তখন রাজশাহীসহ সারা দেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে ২০২০ সালে বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এবারে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে ক্ষমতা আসতেই ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ির নাম নিশান মিটিয়ে দেওয়া হল ।।