এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,২৮ অক্টোবর : ইরানের সর্বোচ্চ মৌলবাদী নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্পর্কে অনেক মিডিয়া রিপোর্ট রয়েছে যে তার অবস্থা গুরুতর এবং এটি বিশ্বাস করা হচ্ছে যে আগামী সময়ে খামেনির ক্ষমতা তার পুত্র জাভান খামেনির হাতে হস্তান্তর করা হবে। এই খবর এমন এক সময়ে এসেছে যখন খামেনি সম্প্রতি ইরানি সেনাবাহিনীকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং ইসরাইল ইতিমধ্যেই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে । এদিকে প্ল্যাটফর্মের নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির হিব্রু অ্যাকাউন্টটি এক্স দ্বারা স্থগিত করা হয়েছে, খামেনির অফিস দ্বারা এটি চালু করার একদিন পরে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
৮০-এর দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে ইরানের ওপর হামলা অন্যতম বড় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল । ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে যখন ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ইরানের অর্থনীতি ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। সেই যুদ্ধ যেমন ইরানের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, তেমনি ইসরাইলি হামলার পর ইরানের অবস্থাও বদলে গেছে।
ইসরাইল সম্প্রতি শতাধিক যুদ্ধবিমান ছেড়ে ইরানের ওপর বিমান হামলা চালায়। হামলাটি তিন ঘন্টা ধরে চলে এবং এই সময় ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি লক্ষ্য করে একাধিক হামলা হয়। এই আক্রমণগুলি তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়েছিল। প্রথমত, হামলায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি উৎপাদনকারী ইউনিট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলি সূত্র থেকে জানা গেছে, ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য অপরিহার্য ১২টি ‘প্ল্যানেটারি মিক্সার’ও এই হামলায় ধ্বংস হয়েছে। একইভাবে, চারটি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারি, যা ইরানের পারমাণবিক ও শক্তি স্থাপনাগুলিকে রক্ষা করছিল, ধ্বংস করা হয়েছে।
যেহেতু পয়লা অক্টোবর ইরানের হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছিল, তাই ইসরাইল এই কর্মকাণ্ডের নাম দিয়েছে ‘অনুতাপের দিন’ এবং আজ এর ছবিও সামনে এসেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ছবিতে ফাইটার জেটে ইসরায়েলের নারী পাইলটদের দেখা যাচ্ছে । এই ছবিগুলো প্রকাশের মাধ্যমে ইসরাইল শুধু জানায়নি যে তাদের সামরিক অভিযানে নারী যোদ্ধাদের সমান অংশগ্রহণ রয়েছে বা তাদের দেশে লিঙ্গ সমতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, বরং নারী যোদ্ধাদের মাধ্যমে ইরানে হামলার বার্তাই স্পষ্ট ইরানের খামেনি, যারা নারীদের খোলাখুলি চলাফেরা করার স্বাধীনতাও দেয় না,তাই তারা আক্রমণাত্মক হলে নারীরা কী পরিমান ধ্বংস করতে পারে ?
উল্লেখ্য, এটি সেই ইরান যেখানে ২০২২ সালে, ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুনী মাহসা আমিনিকে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছিল কারণ সে হিজাব পরে ছিল না। এই একটি মৃত্যু ইরানের শত শত মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে । নারীরা তাদের স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নেমে আসে। বিভিন্ন স্থানে নারীরা হিজাব খুলে ও পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে মৌলবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে । ইরানের মৌলবাদী শাসন ও সর্বোচ্চ মৌলবাদী নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির মৃত্যু কামনা করেছে।
প্রাথমিকভাবে, ইরানের কট্টরপন্থী পুলিশ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের দমন করার চেষ্টা করে এবং প্রতিবেদন করা সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় । কিন্তু সমস্ত নৃশংসতার পরেও কণ্ঠ থামেনি যখন ইরান সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এবং নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করতে হয়েছিল, যাদের কাজ ছিল নারীরা ইসলামিক পদ্ধতি অনুসারে জীবনযাপন করছে কিনা তা দেখার জন্য তাদের উপর নজর রাখা ।
ইরানে ‘নারী-জীবন-স্বাধীনতা’ আন্দোলনের দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৮৩ জন মারা যায় এবং অনেককে পরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় । অনেক মানবাধিকার কর্মী এই বিক্ষোভ থামাতে ইরান সরকারের দেখানো কঠোরতার বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলেছিল কিন্তু তাতেও দমনপীড়ন থামেনি । আজ নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও নারীরা এমন স্বাধীনতা পায়নি যে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারে, একা একা যুদ্ধে লড়তে পারে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ইরানের নারীরা আইনত সামরিক চাকরি করতে পারবেন না । নারী ফাইটার পাইলটকে দিয়ে ইরানে হামলা করে ইরানি মহিলাদের এই বড় বার্তা দিয়েছে ইসরাইল।।