এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,১৬ এপ্রিল : ঠিকমত হিজাব না পরার কারনে ২২ বছরের কুর্দি তরুনী মাহসা আমিনিকে ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ পিটিয়ে মারার পর থেকেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে সেদেশে । তারা ইরানের শরিয়া শাসন ও স্বৈরাচারী শাসকের পতন চাইছেন । মৃত্যু কামনা করছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু আয়াতুল্লাহ আলি খোমেইনীর । আন্দোলন দমাতে ব্যাপক দমনপীড়ন চালাচ্ছে ইরানি শাসক । ইতিমধ্যেই হাজার খানেক প্রতিবাদী ইরানী তরুন তরুনীকে নৃসংশভাবে মেরে ফেলা হয়েছে । কয়েক হাজার এখনো জেলবন্দি । জেলবন্দি মহিলার হচ্ছেন গনধর্ষণের শিকার । এই ‘অত্যাচারী শাসকের’ হাত থেকে বাঁচতে এখন ইসরায়েলের দিকে তাকিয়ে আছেন ইরানের প্রতিবাদীরা । ইতিমধ্যেই তারা ইরানে আক্রমণ করার জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছেন । রাজধানী তেহরানের রাস্তার পাশে স্প্রে-পেইন্ট করা একটি বার্তা নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর । তাতে স্থানীয় ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘ইসরাইল, পাল্টা আঘাত কর। তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার সাহস নেই ।’
ইরানি নাগরিকরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করছে এবং ইহুদি রাষ্ট্রকে সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনির শরিয়া আইন মোতাবেক হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছে । ইরান একটি অভূতপূর্ব ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার পরে এখন ইসরায়েলি সেনা সম্ভাব্য প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত । আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আজ মঙ্গলবার রাতেই ইসরায়েলের রোষের মুখে পড়তে হতে পাতে ইরানকে ।
ইরানের বাসিন্দারা সামাজিক মিডিয়া পোস্ট এবং রাস্তার গ্রাফিতির মাধ্যমে সেই অনুভূতিগুলি প্রকাশ করছে, অনেকে ইসরায়েলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে যে শরিয়া আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হোক আয়াতুল্লাহ আলি খোমেইনী ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে । গ্রাফিতির মাধ্যমে তারা লিখেছেন,’ইসরাইল, পাল্টা আঘাত কর। তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার সাহস নেই । সর্বোচ্চ নেতাকে নির্মূল করে দাও ।’
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ, একজন ইরানি ব্যবহারকারী ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের নেতাদের হত্যা করো ইসরায়েল, যারা ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে মারা গেছে । তাদেরকে হত্যা করো। আমরা দাফনের ও কাফনের জন্য অর্থ প্রদান করব এবং আপরা এসে ওদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করবেন ।’
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ইরান সরকার জনসমক্ষে হিজাব (ইসলামী মাথা ঢেকে) পরা বাধ্যতামূলক করার মত নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শত শত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে এবং কয়েক হাজার ইরানী নাগরিককে কারারুদ্ধ করেছে । একজন ইরানী ভিন্নমতাবলম্বী বেনামে হিব্রু ভাষার আউটলেট ওয়াই নেটকে জানিয়েছেন, এদের দ্বারা ইরানি নাগরিকরা অনেকদিন ধরে নিপিড়নের শিকার হচ্ছে । ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে আছে, অবশেষে কবে আমরা মুক্ত হব?’ তিনি আরও বলেন,ইরান যদি ইসরায়েলকে আক্রমণ করার বোকামি করে, তবে ইসরায়েলকে অবশ্যই পাল্টা আঘাত করতে হবে এবং আমাদেরকে একবার এবং সর্বদা শাসন থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে হবে।’
ইরানের একজন বিশেষজ্ঞ এবং “ভয়েসেস অফ ইরান” পডকাস্টের হোস্ট বেনি সাবাতি বলেছেন, অনেক ইরানী নাগরিকের মধ্যে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক অনুভূতি রয়েছে। আর এর পিছনে কারন ইরানে সরকারের ধারাবাহিক অত্যাচার ।’ চ্যানেল ১২ নিউজকে সাবাতি বলেন,’ইরানি নাগরিকরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণকে অত্যন্ত কঠোরভাবে গ্রহণ করেছে। তারা এটিকে সময় এবং অর্থের অপচয় হিসাবে দেখে এবং তারা ইসরায়েলকে একটি গণতান্ত্রিক, পশ্চিমা দেশ এবং স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে দেখে ।।