Kartik Puja 2025 : ভগবান কার্ত্তিক একজন পৌরাণিক দেবতা। তিনি ভগবান শিব ও মা দুর্গার পুত্র। দেবতা কার্ত্তিক অত্যন্ত সুন্দর, সুঠাম দেহ এবং অসীম শক্তির অধিকারী। পুরাণে আছে, তারকাসুরের আধিপত্য থেকে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করার জন্য স্বর্গের দেবতারা তাঁকে সেনাপতিরূপে বরণ করেন। তাঁর দেহবর্ণ তপ্ত স্বর্ণের মতো। যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে কার্ত্তিকের হাতে তীর, ধনুক ও বল্লম দেখা যায়। তার বাহন সুদৃশ্য পাখি ময়ূর। কার্ত্তিক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ সকল যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। পুরাণ অনুসারে তারকাসুরকে বধ করার জন্য কার্ত্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি বলির পুত্র বাণাসুরকেও পরাজিত করেছিলেন। কার্ত্তিকের অন্য নাম স্কন্দ, মহাসেন, কুমার গুহ ইত্যাদি। স্কন্দপুরাণ কার্ত্তিককে নিয়ে রচনা করা হয়েছে।
কার্ত্তিক পূজার ধ্যান মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র ও পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
ধ্যান মন্ত্র
ওঁ কার্ত্তিকেয় মহাভাগং ময়ুরোপরীসংস্থিতম।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।।
দ্বিভূজং শত্রুহন্তারং নানালঙ্কারভুষিতম।
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।।
অর্থ : কার্ত্তিকদেব মহাভাগ, ময়ূরের উপর তিনি উপবিষ্ট। তপ্ত স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল তাঁর বর্ণ। তাঁর দুটি হাতে শক্তি নামক অস্ত্র। তিনি নানা অংলকারে ভূষিত। তিনি শত্রু হত্যাকারী। প্রসন্ন হাস্যোজ্জ্বল তাঁর মুখ।
ব্যাখ্যা : এই ধ্যানের মাধ্যমে দেবতাকে আবাহন করা হয়। ময়ূর হল সৌন্দর্য, শৌর্য ও সংযমের প্রতীক। তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ তাঁর দিব্য তেজ ও পবিত্রতার প্রতীক। ‘শক্তি’ অস্ত্র অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার ক্ষমতা বোঝায়। তাঁকে “পুত্রদায়ক” রূপে আরাধনা করা হয় সন্তান লাভের কামনায়।
প্রণাম মন্ত্র
ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্তুভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।
অনুবাদঃ– হে মহাভাগ, দৈত্যদলনকারী কার্ত্তিক দেব তোমায় প্রণাম করি। হে মহাবাহু, ময়ূর বাহন, তোমাকে নমস্কার। হে রুদ্রের (শিব) পুত্র, শক্তি নামক অস্ত্র তোমার হাতে। তুমি বর প্রদান কর। ছয়। কৃত্তিকা তোমার ধাত্রীমাতা। জনক-জননী প্রিয় হে মহাভাগ, হে ভগবান, তারকাসুর বিনাশক, হে মহাতপস্বী প্রভু তোমাকে প্রণাম। দেবতাদের যজ্ঞ রক্ষার জন্য পর্তবতের চূড়ায় তুমি জন্মগ্রহণ করেছ। হে পর্বতী দেবীর পুত্র তোমাকে সতত প্রণাম করি।
ব্যাখ্যা : প্রণাম মন্ত্র হল বিনয় ও শ্রদ্ধার প্রতীক। ভক্ত দেবতার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেন। দেবতাকে “দৈত্যদর্পনিসূদন” (অহংকার বিনাশকারী) বলে সম্বোধন করে ভক্ত নিজের ভেতরের অশুভ শক্তি (যেমন অহংকার, ক্রোধ) দমনের জন্য তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র
কার্ত্তিকেয় মহাভাগ গৌরীহৃদয় নন্দন।
দেবসেনাপতি শ্রীমন্ বঞ্ছিতার্থঞ্চ দেহি মে।।
কার্ত্তিকেয় মহাভাগ পার্ব্বতী প্রিয়নন্দন।
ভবস্তু তৎ প্রসাদেন ধনধান্যাদি সম্পদঃ।।
রুদ্রপুত্র নমস্তুভ্যং তারকান্তকর প্রভো।
বাঞ্ছিতার্থঞ্চ দেহি মে কার্ত্তিকেয় নমোহস্তু তে।।
অর্থ : “হে মহাভাগ কার্তিকেয়, মা গৌরী (পার্বতী)-এর হৃদয়ের আনন্দ (‘গৌরীহৃদয় নন্দন’), হে দেবতাদের সেনাপতি, আমার কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা (‘বঞ্ছিতার্থঞ্চ’) পূর্ণ করুন।” তিনি আরও বলেন, “হে পার্বতীর প্রিয় পুত্র, আপনার কৃপায় আমার যেন ধন, ধান্য আদি সম্পদ লাভ হয়।” “হে রুদ্রপুত্র (শিবের পুত্র), তারকাসুরের হত্যাকারী (‘তারকান্তকর’), আপনাকে প্রণাম। আমার ইচ্ছা পূর্ণ করুন, হে কার্তিকেয়, আপনাকে নমস্কার।”
ব্যাখ্যা : পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে ভক্ত নিজের সমস্ত ইচ্ছা, কামনা, এবং ভক্তি দেবতাকে সমর্পণ করেন। এই মন্ত্রে দেবতাকে তাঁর গুণের (দেবসেনাপতি) এবং বংশপরিচয়ের (গৌরীপুত্র, রুদ্রপুত্র) মাধ্যমে স্তুতি করে জাগতিক সমৃদ্ধি (ধনধান্য) এবং মনস্কামনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
কার্ত্তিক পূজার গুরুত্ব ও প্রভাব :
১. কথায় বলে কার্ত্তিকের মতো চেহারা। অর্থাৎ কার্ত্তিকের দেহাকৃতি অত্যন্ত সুন্দর, সুঠাম ও বলিষ্ঠ। এ কারণে কার্ত্তিক পূজার মাধ্যমে দম্পতিরা সুন্দর, সুঠাম ও বলিষ্ঠ চেহারার সন্তানাদি প্রার্থনা করে থাকেন।
২. কার্ত্তিক দেবতাদের সেনাপতি। তিনি অসীম শক্তিধর দেবতা। এজন্য তাঁকে রক্ষাকর্তা হিসেবে পূজা করা হয়্।
৩. কার্ত্তিক নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের দেবতা। কিন্তু সমাজের ন্যায়, অন্যায় ও অবিচার নির্মূলে তিনি অবিচল যোদ্ধা । তিনি তারকাসুর পরাভূত করে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করেছিলেন।
৪. কার্তিক পূজার মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অন্যায়, অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং দেব সেনাপতি কার্ত্তিকের মতো নম্র ও বিনয়ী হওয়ার বার্তা দেওয়া হয় ।
৫,দেব কার্তিক উর্বরতার দেবতা । সেই কারনে কার্তিক দেবের মত সন্তান কামনায় কার্তিক পূজা করা হয় ।
কার্তিক পূজা সাধারণত কার্তিক মাসের শেষ দিনে, অর্থাৎ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। ভগবান কার্তিক, দেবাদিদেব মহাদেব ও মা দুর্গার পুত্র, শৌর্যের প্রতীক। ভক্তরা তাঁর কাছে সন্তান প্রার্থনা, পরিবারের মঙ্গল এবং যুদ্ধে জয়লাভের জন্য আরাধনা করেন।
২০২৫ সালের কার্তিক পূজার তারিখ ও সময় :
পূজা দিবস: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (সোমবার)
বাংলা তারিখ: ৩০শে কার্তিক, ১৪৩২
সংক্রান্তি তিথি শুরু: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ (রবিবার) সন্ধ্যা ০৭:১২ মিনিটে।
সংক্রান্তি তিথি শেষ: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (সোমবার) সন্ধ্যা ০৭:০৩ মিনিটে।

