প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ জুন : বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। তাই বাঙালি ভাত কে জীবন ধারণকারী পবিত্র খাদ্য হিসাবে মেনে থাকে। সেই জন্যেই শিশুর মুখে প্রথম ভাত তুলে দেওয়ার ’অন্নপ্রাশন’ অনুষ্ঠান বঙ্গে আলাদা মাহাত্ম পেয়ে আসছে।এমনকি অন্নপ্রাশন না হওয়া পর্যন্ত শিশু ভাত খেতে পারে না,এমনটাও বিশ্বাস করে বাঙালি । সেই বিশ্বাসে ভর করেই বাঙালি পরিবার ঘটাকরে তাঁদের শিশু সন্তানের মুখে ভাত অর্থাৎ অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য না থাকায় দরিদ্র শিশুর পরিবার তাঁদের সন্তানের ’অন্নপ্রাশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে না।তবে দরিদ্র মা বাবা’র সেই সাধ এবার পূরণ হচ্ছে বঙ্গের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে।আর তাতেই বেজায় খুশি ওই শিশুদের মা ও বাবা’রা।
শিশুদের ক্ষুধা ও অপুষ্টি মোকাবিলার পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের ’যত্ন কেন্দ্র“ হিসাবেই গ্রামীন ভারতে ’অঙ্গনওয়াড়ি’ কেন্দ্রগুলি কাজ করে।মূলত গরিব পরিবারের শিশু ও গর্ভবতী মায়েরাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে আঁকড়ে থাকেন।তার মধ্যে এমন অনেক শিশু থাকে যাঁদের মুখে ভাত অর্থাৎ অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান করার সাধ্য তাঁদের মা বাবার নেই।সেই বিষয়টি মাথায় রেখে রাজ্যে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তর প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের ’অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান’ করার নির্দেশিকা জারি করে।সেই নির্দেশিকা মেনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলিতে হচ্ছে শিশুর অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান।যে অনুষ্ঠান পূর্ব বর্ধমান জেলাতে যথেষ্টই সাড়া ফেলেছে।
রাজ্যের শস্য গোলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা। এই জেলার প্রধান কৃষিজ ফসল ধান। যে ধানই হল ভাতের মূল ভিত্তি। দপ্তরের নির্দেশিকা মেনে এই জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলিতেও এখন হচ্ছে শিশুদের অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান। তবে অবশ্য এর জন্যে নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসের চতুর্থ শুক্রবার ’সুপুষ্টি দিবস’ পালনের দিনটি এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। সেই মতই জেলার জামালপুর ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও হ শিশুর অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
কেমন হয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আয়োজিত অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠান?তাতে কতটাই বা থাকে আন্তরিকতা ?এসবের উত্তর পেতে শুক্রবার সংবাদ মাধ্যম পৌছে গিয়েছিল জামালপুরের আঝাপুর এলাকার ইটখোলাপাড়া ও বাংলাপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। সেখানে যা দেখাযায় তা যথেষ্টই মুগ্ধ করার মতো। মুখে ভাত না হওয়া শিশু সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ওই দিন সকাল সকাল দুই পাড়ার কয়েকজন মা তাঁদের নির্দিষ্ট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পৌছান।সেখানে চন্দনের ফোঁটায় সাজানো হয় শিশুদের কপাল।কেন্দ্রে পাতা আসনে শিশুদের কোলে নিয়ে বসেন তাঁদের মায়েরা।এরপর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকারা রীতিমত শঙ্খ ধ্বনি ও উলু ধ্বনি দিয়ে বরণ ডালা কপালে ঠেকিয়ে শিশুদের বরণ করেন। তার পর তাঁরা ওইসব শিশুদের মুখে তুলে দেন ভাতের পায়েস। এছাড়াও শিশুদের মুখে ছোঁয়ানো হয় অন্যন অন্ন ।
অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠানের জন্য কি কি রান্না করা হয়েছিল?এর উত্তরে অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার মৌসুমি বসাক এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শ্রাবনী সিংহ রায় বলেন, অন্নপ্রাশনে পায়েস রাঁধতেই হয় । এছাড়াও ভাত ,ডাল ,ডিম ,আলুভাজা, পটল ভাজা ও শাক ভাজা ,তরকারি এসবও রান্না করা হয়েছে। মৌসুমি বসাক বলেন, যে কজন শিশুর অন্নপ্রাসন হয় তারা ছাড়াও কেন্দ্রের অন্য সকল শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের একই খাবার এদিন বিতরণ করা হয়।আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য শশাঙ্ক ভূমিজ দুই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে হওয়া অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আতিথেয়তা গ্রহন করেন।
ব্লকের বিডিও পার্থ সারথী দে বলেন,নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের নির্দেশিকা মেনে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠান হচ্ছে।গরিব মা বাবাদের তাঁদের সন্তানের অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠান করার সাধ পূরণ করাই এই অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য।এছাড়াও এমন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই শিশু ,গর্ভবতী মা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদের মধ্যে একটা হার্দিক সম্পর্কও তৈরি হয়।এর কারণেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের অন্নপ্রাসন অনুষ্ঠান একটা আলাদা মাহাত্ম পেয়েছে বলে বিডিও মন্তব্য করেন ।।